মতামত

অচলাবস্থার অবসান হোক

নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌপথের গুরুত্ব অপরিসীম। নৌপথে ভ্রমণ, পণ্য পরিবহন অপেক্ষাকৃত সহজ ও সস্তা। কিন্তু দখল-দূষণে নদীগুলো মৃতপ্রায়। এ কারণে  দিন দিন কমে যাচ্ছে নৌপথ। এরই মধ্যে যতোটুকু টিকে আছে সেই নৌপথ রক্ষা করারও যেন কেউ নেই। বিশেষ করে নৌযান শ্রমিকদের ভালোমন্দ দেখার লোকের অভাব। তা নাহলে ধর্মঘট ডেকে সবকিছু অচল করে দিয়ে তারা দাবি আদায়ে নামতে বাধ্য হবে কেন। মজুরি বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে গত বুধবার রাত ১২টা থেকে নৌযান শ্রমিকেরা দেশব্যাপী ধর্মঘট শুরু করে। কিন্ত অচলাবস্থা নিরসনে কেউ দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসেনি। এরপরও জনসাধারণের অসুবিধার কথা ভেবে শনিবার থেকে যাত্রীবাহী নৌযানকে ধর্মঘটের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। কিন্তু পণ্যবাহী নৌযান না চলতে পারায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি ডেকে আনছে। গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে ধর্মঘটের কারণে বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে বিভিন্ন ঘাটে অবস্থান করা ৬৮১টি জাহাজ থেকেও পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না। এছাড়া বন্দরের বহির্নোঙরে ৫৫টি পণ্যবাহী বড় জাহাজ আটকা পড়েছে। এর মধ্যে সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, জিপসাম, ফ্লাই অ্যাশ ও স্ল্যাগবাহী জাহাজ আছে ৩১টি। কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে সিমেন্টসহ অধিকাংশ শিল্পকারখানা। তাই অবিলম্বে এই অচলাবস্থার নিরসন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। নৌযান শ্রমিকরা একদিনে ধর্মঘটের মতো চরম কর্মসূচিতে যায়নি। তারা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। এখন ধর্মঘটে সবকিছু অচল হয়ে যাওয়ার পরও কারো কোনো টনক নড়ছে না। এমনকি নৌপরিবহন মন্ত্রী ‘এটা মালিক-শ্রমিকের নিজস্ব ব্যাপার’ বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। অথচ তিনি একজন শ্রমিক নেতাও। শ্রমশোষণের এ দেশে নৌযান শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। অধিকাংশ মালিক নৌশ্রমিকদের ক্ষেত্রে আইএলও কনভেনশন মানেন না। তাদের মজুরি কাঠামো ঠিক নেই।  ন্যূনতম মজুরিও নির্ধারণ করা নেই। ঝড়-ঝঞ্ঝাসহ নানা ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হলেও নেই কোনো ঝুঁকি ভাতা। এছাড়া চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ অন্যান্য অসুবিধা তো রয়েছেই।  কথা হচ্ছে, ধর্মঘটে কোনো পক্ষেরই লাভ হচ্ছে না। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় আলোচনা করে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। জনস্বার্থে কোনো পক্ষেরই এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না। এইচআর/এমএস

Advertisement