খেলাধুলা

৫০ বছর পর বিলুপ্ত হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিবের পদ

১৯৭৪ সালে প্রণীত ‘ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাক্ট’ রহিত করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তা পুনঃপ্রণয়ন করেছিল ২০১৮ সালে। ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন-২০১৮’ মন্ত্রী পরিষদ ও জাতীয় সংসদ থেকে পাশ হওয়ার পর দীর্ঘ ৪৪ বছর পর নতুন আইন পেয়েছিল দেশের খেলাধুলার অন্যতম এ অভিভাবক সংস্থাটি।

Advertisement

৬ বছর পর 'জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন' আবার সংশোধন করা হয়েছে। ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (সংশোধন) আইন-২০২৩’-এর খসড়া, সারসংক্ষেপ ও তুলনামূলক বিবরণী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় হয়ে এখন মন্ত্রী পরিষদ ও জাতীয় সংসদের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়।

১৯৭৪ সালের এনএসসি অ্যাক্ট নতুন করে প্রণয়ন করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। তার আগে আইনটি সংশোধন হয়েছিল ৫ বার (১৯৭৬, ১৯৭৮, ১৯৯১, ২০০৩ ও ২০১১)। এবার সংশোধিত আইন অনুমোদন হলে সেটা হবে ষষ্ঠবারের মতো।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (সংশোধন) আইন-২০২৩ কে যুগোপযোগী করতে বেশ কিছু ধারা সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। ২০১৮ সালে নতুন আইনে বিলুপ্ত করা হয়েছিল ট্রেজারার পদ। এক সময় পরিষদের অর্থ বিষয়ক কার্যক্রমের প্রধান দায়িত্ব ছিল ট্রেজারের; কিন্তু ১৯৯৮ সাল থেকে সরকার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে পরিচালক অর্থ হিসেবে একজন কর্মকর্তা প্রেষণে নিয়োগ দেয়ায় ট্রেজারের কোনো কাজ না থাকায় পদটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল।

Advertisement

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (সংশোধন) আইন-২০২৩ এ বড় পরিবর্তনটি থাকছে সচিব পদে। ১৯৭৪ সালে এনএসসি অ্যাক্ট থেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রধান নির্বাহী পদ হচ্ছে ‘সচিব’। দীর্ঘ ৫০ বছর পর বিলুপ্ত হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ‘সচিব’ পদটি।

আইনের সংশোধন খসড়ায় ‘সচিব’ পদ বিলুপ্ত করে সেখানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে ‘নির্বাহী পরিচালক’ পদ। সংশোধিত আইন-২০২৩ অনুমোদন হলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে সচিবের পরিবর্তে প্রধান নির্বাহী পদটি হবে ‘নির্বাহী পরিচালক।’

বিদ্যমান আইনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার বিধান আছে। সংশোধিত আইনেও মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করার বিধান রাখা হয়েছে। তবে ভাইস-চেয়ারম্যানের বিধানে নিয়মের বেশ পরিবর্তন আসছে। আগে বিধান ছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ব্যতিত অন্য কোনো মন্ত্রী না থাকলে পরিষদের সদস্যদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান কর্তৃক ভাইস-চেয়ারম্যান মনোনীত হবেন।

সংশোধিত আইনে একাধিক ভাইস-চেয়ারম্যানের বিধান রাখা হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী সকলেই বিদ্যমান থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ব্যতীত প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দুইজন বা একজন ভাইস-চেয়ারম্যান থাকবেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব পদাধিকারবলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান হবেন। মন্ত্রণালয়ে একাধিক মন্ত্রী না থাকলে সচিব একাই ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।

Advertisement

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ, সচিব ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবেই নির্বাহী কমিটিতে থাকবেন। নির্বাহী কমিটিতে সংযোজন করা হয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অনুবিভাগের প্রধান, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক অর্থ, বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সভানেত্রী বা সাধারণ সম্পাদিকা ও বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের দপ্তর প্রধানকে।

বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদিকাকে নির্বাহী কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করায় এ সংস্থাটিকে জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশন ও সংস্থার তালিকার ১৫ থেকে নেওয়া হয়েছে ২৯ নম্বরে।

২৯ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ অ্যামেচার রেসলিং ফেডারেশন প্রতিস্থাপিত হবে ১৫ নম্বরে। বিদ্যমান আইনে ফেডারেশন ও সংস্থা ছিল ৪৮টি। সংশোধনীতে সংযোজন হয়েছে- বাংলাদেশ সেপাক টাকরো অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কান্ট্রি গেমস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ চুকবল অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ থ্রো বল অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ জুজুৎসু অ্যাসোসিয়েশন।

তালিকার ১ থেকে ২৮ নম্বর পর্যন্ত ফেডারেশনের সভাপতি প্রতিবছর পর্যায়ক্রমে ৭ জন করে নির্বাহী কমিটিতে থাকবেন। সে হিসেবে প্রথম এক বছর নির্বাহী কমিটিতে থাকবে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, সাঁতার, অ্যাথলেটিক, শ্যুটিং ও কাবাডি। পরের বছর ওই ৭টির পরিবর্তে নির্বাহী কমিটিতে ঢুকবে ভলিবল, দাবা, ভারোত্তোলন, ব্যাডমিন্টন, হ্যান্ডবল, টেনিস ও টেবিল টেনিস। এভাবে নির্ধারিত ২৮ ফেডারেশন/সংস্থা পর্যায়ক্রমে ১ বছর করে নির্বাহী কমিটিতে থাকবে।

‘ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাক্ট-১৯৭৪’-এ একটি বিতর্কিত ধারা ছিল ২০ (ক)। যে ধারাবলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যে কোনো সময়ে তাদের অধিভূক্ত ফেডারেশন/সংস্থার নির্বাহী কমিটি বাতিল করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে পারে। ২০১৮ সালে প্রণীত আইনে এটা বলবৎ ছিল।

‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (সংশোধিত) আইন-২০২৩’- তেও সেই ক্ষমতা পুরোপুরি বহাল রাখা হয়েছে। তবে ধারা নম্বর ২০ (ক) থেকে বদলে হয়েছে ২১। এক সময় ২০ (ক) কে ‘কালো ধারা’ বলতেন ক্রীড়াঙ্গনের অনেকে। তবে বাস্ততার নিরিখে ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ও সংস্থার জন্য এই ধারা খুবই প্রয়োজনীয়। এ ধারা থাকার পরও অনেক ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ও সংস্থাকে গতিশীল রাখতে হিমশিম খেতে হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে।

আরআই/আইএইচএস/