ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেলের দুর্গম চরে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে একজন কৃষকের মৃত্য হয়েছে।
Advertisement
শুক্রবার (২১ জুন) বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মারা যাওয়া কৃষকের নাম হোসেন বেপারী (৫১)। তিনি সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পরেশউল্লা বেপারীর ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি মেম্বার হেলাল উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরের দিকে হোসেন বেপারীকে রাসেলস ভাইপার সাপে কামড়া দেয়। পরে তাকে ট্রলারযোগে পদ্মানদী পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তার আগেই শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
Advertisement
এদিকে, পার্শ্ববর্তী ডিক্রিরচর ইউনিয়নে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুদিনে দুইটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে সেগুলো পিটিয়ে মেরেছেন গ্রামবাসী।
শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের আইজউদ্দীন মাতুব্বরের ডাঙ্গি গ্রামে ক্ষেতে কাজ করার সময় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পান ওই গ্রামের তোতা মোল্লার ছেলে মুরাদ মোল্লা (৪৫)।
মুরাদ মোল্লা বলেন, সকালে বাদামের জমিতে কাজ করার সময় সাপটি নজরে পড়ে। এরপর লাঠি এনে তিন-চারটি বাড়ি মেরে সাপটি মেরে ফেলি।
এর আগেরদিন (বৃহস্পতিবার) ওই গ্রামের হারুন শেখের ছেলে ইউসুফ আরও একটি রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলেন বলে জানান তিনি।
Advertisement
আরও পড়ুন
রাসেলস ভাইপার মারতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণাস্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আবু ফকির বলেন, ‘ঘটনা সঠিক। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা ঘোষিত পুরস্কারের অর্থ দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফের মোবাইলে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নিয়াজ জামান সজীব জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতকাল জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। বর্তমানে আমাদের সভাপতি ঢাকায় অবস্থান করছেনন। রাসেলস ভাইপার সাপটি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি (যিনি মেরেছেন) পুরস্কার পাবেন।’
ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া জানান, যেকোনো বন্যপ্রাণী নিধন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। রাসেলস ভাইপার এ দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পরে ২০১৪ সাল থেকে আবার সাপটির দেখা যাচ্ছে। এ সাপের বংশবৃদ্ধির হার বেশি। একবারে একটি মা সাপ ৬০-৭০টি বাচ্চা দেয় এবং প্রায় সবকটি বাচ্চা বেঁচে যায়। এ সাপ সাধারণত চর এলাকায় থাকে। এদের খাবার ব্যাঙ ও ইঁদুর।
তিনি আরও বলেন, ‘পুরস্কারের এ ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ যদি রাসেলস ভাইপার সাপ ধরতে অথবা মারতে গিয়ে সাপের কামড়ে মারা যান, তাহলে এ দায় কে নেবে? বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখলে দেখা যাবে, মারা যাওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য নয়। সাপের কামড়ের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন অনেক বেশি লোক মারা যান।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের রাসেল স্কয়ারে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ তার বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেন, ফরিদপুর কোতোয়ালি এলাকায় কেউ যদি রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারেন, তাহলে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি রাসেলস ভাইপার সাপ মারার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হবে। যতজন যে কয়টি সাপ মারতে পারবেন, সাপপ্রতি ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। এ সাপ থেকে মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টার কারণেই এ ঘোষণা দেওয়া হলো।’
এন কে বি নয়ন/এসআর/জিকেএস