প্রচণ্ড গরমের কারণে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ টমেটোর বাজার দিনাজপুরে ধস নেমেছে। গরমের অজুহাতে টমেটোর দাম কমে গেছে এক পঞ্চাংশ। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। অপরদিকে, গরমের কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঠিকভাবে সরবরাহ না করতে পারায় পঁচে যাচ্ছে টমেটো। গরমের কারণে গত ৪ দিনে দিনাজপুরে কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে টমেটো চাষীরা। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় দিনাজপুরে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর দিনাজপুরে টমেটোর বাম্পার ফলনও হয়েছে। দিনাজপুর শহরের নিকটে সদর উপজেলার গাবুড়া নদীর তীরে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এবং পাঁচবাড়ী ও জনতার মোড় এলাকায় এই টমেটোর বাজার বসে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্যান, রিকশা, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন পরিবহনে কৃষকরা টমেটো বিক্রি করতে আসে এই দু’টি বাজারে। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে বেলা ১১টা পর্যন্ত টমেটোর বেচা-কেনা চলে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, শরিয়তপুর ও কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা এই দু’টি বাজার থেকে টমেটো কিনে ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে থাকেন। গাবুড়া ও পাঁচবাড়ী ও জনতার মোড় বাজারে প্রতিদিন আসছে প্রায় ১ হাজার টন টমেটো। গরম পড়ার আগের দিনও এই বাজারে মণ প্রতি টমেটোর দাম ছিল সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৮শ’ টাকা। কিন্তু বর্তমানে গরমের কারণে গত ৪ দিন ধরে বাজারে ওই একই ধরনের টমেটোর মণ বিক্রি হচ্ছে দেড়শ` থেকে পৌনে ২শ’ টাকা কমে। সেটাও কিনছেনা ব্যবসায়ীরা। হিসেব অনুযায়ী, দিনে গড়ে সাড়ে ৮শ’ টাকা মণ দরে ১ হাজার টন টমেটো ২ কোটি ২ লাখ টাকায় বেচাকেনার কথা। কিন্তু গরমের কারণে এই বাজারে সর্বোচ্চ গড়ে ৬০০ টাকা মণ দরে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার টমেটো বেচাকেনা হয়েছে। যাতে করে গত ৪ দিনে আড়াই কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। গরমের অজুহাতে কমে যাওয়া টমেটোর দাম পূর্বের বাজার দরে ফিরে আসতে আরও ৭ থেকে ৮ দিন সময় লাগবে। যাতে করে শুধু গরমের কারণে এই তিনটি বাজারে আরও প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবেন কৃষক। সব মিলিয়ে গরমের কারণে এই তিনটি বাজারে সাড়ে সাত কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হবে। দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা এলাকার কৃষক সেলিম রেজা জানান, গত কয়েকদিন আগেও এই বাজারে টমেটো বিক্রি করেছি সাড়ে ৮শ’ টাকা মণ দরে। কিন্তু শনিবার একই ধরনের টমেটো বিক্রি করেছি সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬০০ টাকা মণ দরে। একই কথা বললেন দিঘন এলাকার কৃষক শামসুর রহমান। তিনি জানান, ৮শ’ টাকা মণের টমেটো আজকে বিক্রি করেছি পৌনে ৬ শ` টাকায়। এভাবে টমেটো বিক্রি করলে খরচের টাকাও উঠবে না। গরমের কারণে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, চলতি মৌসুমে জেলার এক হাজার ৮৪৩ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০/৩৫ টন টমেটো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়েছে।এদিকে অতিরিক্ত গরমের কারণে টমেটোর পচন রোধ করতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা টমেটোতে ফরমালিনসহ বিভিন্ন প্রকার মেডিসিন ব্যবহার করছেন।এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা জানান, আমরা বাধা দেয়ার পরও অতিরিক্ত লাভের আশায় কৃষকরা ক্ষেতেই কীটনাশক ব্যবহার করছে। যা আমরা রোধ করতে পারছি না।কৃষকরা জানান, প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫ থেকে ৩০ টন টমেটো আবাদ হয়। এক হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ করতে শ্রম বাদে কৃষকদের খরচ হয় ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা। দাম ভাল থাকলে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকায়। সে হিসেবে এক হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ করে কৃষকদের লাভ হয় প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। এদিকে, গরমের কারণে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ঠিকভাবে টমেটো পৌঁছাতে পারছেন না। পৌঁছাতে পারলেও সেখানে গিয়ে দেখা যায় গাড়িতেই টমেটোতে পচন ধরছে। এতে করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে ব্যবসায়ীরা জানান। ঢাকার টমেটো ব্যবসায়ী কাসেম ও খোকা জানান, বাজারে টমেটো কিনেও ঠিকভাবে ঢাকায় পাঠাতে পারছি না। আবার পৌঁছাতে পারলেও ঢাকায় গিয়ে টমেটো গাড়ি থেকে নামানোর পর দেখা যায় পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। টমেটো ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার জানান, এই বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক টমেটো দেশের বাইরে যাচ্ছে। বর্তমানে গরমের কারণে ট্রাকগুলো ঠিকভাবে পৌঁছাতে পারলেও ট্রাকেই টমেটো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে টমেটোর দাম পাইকারি বাজারে কিছুটা কমে গেছে। একটু গরম কমলেই আবার বাজার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে।এদিকে, দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, দিনাজপুরে রোববার তাপমাত্রা ছিল ৪০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যে কোনো সময় দিনাজপুরে প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি হতে পারে।এমদাদুল হক মিলন/এসএস/এমএস
Advertisement