রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছেই। গত সপ্তাহে ২৬০-২৮০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি হলেও এখন তা ৪০০ টাকা ছুঁয়েছে। ফলে ঈদের পর বাজারে এসে মরিচ কিনতে রীতিমতো ঘামছেন ক্রেতারা। একই সঙ্গে দাম বেড়েছে আলু, শসা, গাজরের। সরবরাহ কম থাকায় বাজারে সবজির দামও চড়া।
Advertisement
শুক্রবার (২১ জুন) রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজার, মধ্যবাড্ডা, ডিআইটি, উত্তরবাড্ডাসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় হু হু করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
রামপুরা কাঁচাবাজারে দেশি জাতের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। হাইব্রিড জাতের মরিচ মিলছে ৩৮০-৩৯০ টাকায়।
Advertisement
এ বাজারের বিক্রেতা আবু সুফিয়ান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদের আগে ২৮০-২৯০ টাকা করে বিক্রি করেছি। এখন কেনায় পড়ছে ৩৬০ টাকা। পরিবহন খরচসহ সেটা প্রায় ৩৮০-৩৮৫ টাকা পড়ে যাচ্ছে। ৪০০ টাকার নিচে বেচবো কীভাবে?’
তার ভাষ্য, ‘সিন্ডিকেট করলে আড়তদাররা করেন, আমরা তো করি না। আমরা কারওয়ান বাজার থেকে কিনি। অল্প লাভে বিক্রি করি। অথচ ক্রেতারা এসে বাড়তি দাম নিয়ে ঝামেলা করে আমাদের সঙ্গে।’
একই কথা জানান মধ্যবাড্ডা বাজারের বিক্রেতা রাশেদুল। তিনি বলেন, ‘কাঁচা মরিচের দাম বেশি হওয়ায় মাত্র ৫ কেজি এনেছি। ক্রেতারা ২০ টাকার মরিচ চান। কেমনে দিমু? ২০ টাকায় তো ৫০ গ্রামও দেওয়া যায় না।’
খুচরা বিক্রেতা সুফিয়ান ও রাশেদুল দুজনই কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি দরে কাঁচা মরিচ কেনেন। সেখানকার আড়তদার আমজাদ মিয়ার ভাষ্যমতে, ঈদের মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে মরিচ ঢাকায় না আসায় দামটা একটু বেশি বেড়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে কিছুটা কমে যাবে।
Advertisement
আমজাদ মিয়া আরও বলেন, ‘সবারই তো ঈদ আছে। ঈদের ছুটির মধ্যে ঢাকায় মাল (মরিচের) নিয়ে গাড়ি ঢোকেনি। চাহিদা অনুযায়ী মরিচ নেই। সেই সুযোগে দাম তো একটু বাড়বেই। চাহিদার চেয়ে কম মাল থাকলে তার দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক। এখানে কারও দোষ নেই। একটু সময় দেন, দাম কমে আসবে।’
এদিকে, ঈদের আগে থেকে বাজারে শসা, গাজরের দাম বাড়ছিল। ঈদের পরও সেগুলোর দাম আরও বেড়েছে। ঢাকার বাজারে প্রকারভেদে শসা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি। গাজরের দামও একই। ঈদে সালাদের চাহিদার কারণে শসা-গাজরের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে লেবুও। বাজারে লেবুর হালি প্রকারভেদে ৫০-৬০ টাকা। আগামী সপ্তাহ থেকে শসা, গাজর ও লেবুর দাম কমে আসতে পারে বলে ধারণা বিক্রেতাদের।
বাজারে সবজির সরবরাহ কম। অথচ ঈদে টানা মাংস খেয়ে হাঁফিয়ে ওঠা মানুষ এ সপ্তাহে সবজি কিনছেন বেশি। ফলে সবজির বাজারও চড়া। প্রায় সব সবজির দামই ৫-১০ টাকা বেড়েছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮৫-১০০ টাকা কেজি পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ১০ টাকা বেশি। ঝিঙার কেজি ৭০ টাকা, করলা ৮৫-৯০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫৫-৬০ টাকা, পটলের কেজি ৬০-৬৫ টাকা, কচুরমুখি ১০০-১১০ টাকা, কচুরলতি ৬৫-৭০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৬০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, পেঁপে ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
বিশ্বব্যাংকের কথা শুনতে হবে, কারণ তারা টাকা দেয়: অর্থমন্ত্রী শতক ছুঁয়েছে পেঁয়াজ, তিনশো পার আদা ঈদে মসলার বাজারে খরচের খড়গবেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘কয়েকদিন টানা মাংসা খাওয়া হয়েছে। এখন সবজি কেনা দরকার। কিন্তু সব সবজির দামই বাড়তি। আবার সবজির চেহারাও ভালো মনে হচ্ছে না। কয়েকটা দোকান ঘুরলাম এখনো কিছুই কিনিনি।’
অন্যদিকে, আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকা কেজি দরে। ভালো মানের আলুর দাম কেউ কেউ ৭৫ টাকা কেজিও হাঁকছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আলুর দাম সামনে আরও বাড়তে পারে।
আদা ও রসুনের দামও ঈদের আগে হু হু করে বেড়েছিল। বর্তমানে তা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ঈদের আগে আদার দাম কেজিপ্রতি ৩৩০-৩৫০ টাকা উঠলেও তা কমে এখন ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দামও কেজিতে কিছুটা কমেছে। ঈদের আগে রসুন বিক্রি হচ্ছিল ২৫০ টাকায়, যা বর্তমানে ২২০-২৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি ৮৫-৯০ টাকা।
ঈদের আগে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও তা বাড়তে শুরু করেছে। ঈদের আগে ও পরে ব্রয়লার মুরগির ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কিনতে হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকা কেজি দরে। বাজারে দেশি মুরগি খুবই কম, দামও চড়া। দেশি মুরগির কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা।
মধ্যবাড্ডা বাজারের মুরগি বিক্রেতা রবিউল বলেন, ‘আজই প্রথম দোকান চালু করেছি। যে দরে এনেছি, সেই দরের সঙ্গে সীমিত লাভ করে বিক্রি করছি। বাজার বোঝার চেষ্টা করছি। দাম এখন তুলনামূলক কম। আগামী সপ্তাহ থেকে মুরগির চাহিদা বাড়বে, দামও বাড়বে।’
কোরবানির ঈদের পর গরুর মাংসের চাহিদা কম। তবে দামে হেরফের নেই। ৮০০ টাকা কেজি দরেই গরুর মাংস বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। দর-দাম করলে ৫-১০ টাকা কম রাখছেন। মধ্যবাড্ডার মাংসা বিক্রেতা সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘বিক্রি খুব কম। দামও যদি কমায় তাহলে লোকসানে পড়ে যাবো।’
তিনি বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ৪-৫টা গরু জবাই দিতাম। ঈদের পর আজই প্রথম গরু জবাই দিয়েছি। মাত্র একটা গরু কেটে বিক্রি করছি। ক্রেতাদের চাহিদা যদি বাড়ে আরও জবাই দেবো।’
ঈদে ডিমের চাহিদা তেমন না থাকলেও দাম কমেনি। বর্তমানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৪০-১৪৪ টাকা। আর সাদা ডিমের ডজন ১৩৪-১৩৬ টাকা। ঈদে মানুষ ডিম কম খেলেও চলতি সপ্তাহ থেকে আবারও চাহিদা বাড়তে পারে বলে ধারণা বিক্রেতাদের। ফলে দামও কিছুটা বাড়তে পারে।
মুরগি ও মাংসের বাজারে কেনাবেচা কম হলেও মাছের বাজারে ক্রেতাদের ভিড় অনেক। ঈদের পর মাছের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দামও কিছুটা বেশি। বাজারে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। এর চেয়ে বড় রুই কিনতে হলে ৩৫০-৩৮০ টাকা গুনতে হবে ক্রেতাকে। ইলিশের দাম বাড়তিই রয়েছে। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১৪০০ টাকা হাঁকছেন বিক্রেতারা। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা দরে।
এছাড়া মধ্যবাড্ডা, রামপুরা এবং ডিআইটি ফিস মার্কেটে কাতল মাছের কেজি ৩২০-৩৩০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল ১০০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, খুচরা বাজারে চালের দাম চলতি সপ্তাহেও স্থিতিশীল রয়েছে। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০-৮৫ টাকা, মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৭৫-৭৮ টাকা, আটাশ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা দরে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মোটা চাল প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫২-৬০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, আগামী সপ্তাহে মোটা চালের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। মধ্যবাড্ডার খুচরা বিক্রেতা শামীম হোসেন বলেন, আজ সকালে চাল এনেছি। বস্তাপ্রতি ২৫-৩০ টাকা বেশি পড়েছে। তবুও আগের দামে বিক্রি করছি আমরা। হয়তো আগামী সপ্তাহে দামটা বাড়াতে হতে পারে।
এএএইচ/এসএনআর/এমএস