শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস এবং নেপালের তুলনায় গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের সত্যিকার কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা; কিন্তু সুপার এইটে শান্ত বাহিনীর তিনটি প্রতিপক্ষই কঠিন। আগামীকাল ২১ জুন শুক্রবার, বাংলাদেশের আকাশে সূর্য উঠতে না উঠতেই (ভোর সাড়ে ৬টায়) টাইগারদের সামনে মিচেল মার্শের অস্ট্রেলিয়া।
Advertisement
নিউইয়র্কের নাসাউ আর সেন্ট ভিনসেন্টের আরোনেস ভ্যালের ‘বিদগুটে’ উইকেটে নয়, শুক্রবার শান্ত বাহিনীর ম্যাচটি হবে অ্যান্টিগার নর্থ সাউন্ডে স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে।
নাসাউ আর সেন্ট ভিনেসেন্টের আরোনেস ভ্যালেতে এমন অস্বাভাবিক পিচে খেলা হয়েছে যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের মেধা, প্রতিভা, অভিজ্ঞতা ছাপিয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল উইকেট। এক কথায় উইকেটই ম্যাচের ফল নির্ধারণী ভূমিকা নিয়েছিলো। ওই দুই মাঠের উইকেটের গতি ও উচ্চতায় একদমই স্থিতি ছিল না।
পরিভাষায় যেটাকে বলা ‘ডাবল পেসড’ আর ‘আনইভেন বাউন্সি’ উইকেটে; কিন্তু স্যার ভিভ রিচার্ডস, রিচি রিচার্ডসন আর দুই কালজয়ী ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টস ও কার্টলি অ্যামব্রোসের শহর অ্যান্টিগার মাটি ও উইকেট বরাবরই স্পোর্টিং। যেখানে বল পড়ে দ্রুত ব্যাটে আসে। বাউন্সও থাকে সমান। উঁচু-নিচু হয় না। ব্যাটাররা হাত খুলে খেলতে পারেন, বোলাররা বিশেষ করে পেসাররাও বল হাতে জ্বলে উঠতে পারেন।
Advertisement
তা যে পারেন, এর প্রমাণ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম দুই সেরা ফ্রি-স্ট্রোক প্লেয়ার ভিভ রিচার্ডস ও রিচি রিচার্ডসন এখানে খেলে খেলেই হাত পাকিয়ে বাহারি শটস আর আক্রমণাত্মক উইলোবাজি শিখেছেন।
ক্রিকেট ইতিহাসে ভিভ রিচার্ডস ও রিচার্ডসনের মত মারকুটে, ড্যাশিং আর ফ্রি-স্ট্রোক মেকারের দেখা মিলেছে খুব কম। একইভাবে অ্যান্ডি রবার্টস আর কার্টলি অ্যামব্রোসের মত দুর্ধর্ষ ফাস্ট বোলারও এসেছেন কম। যাদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠাও এই অ্যান্টিগায়।
কাজেই ঐতিহ্যগতভাবেই অ্যান্টিগার পিচ একধারে ব্যাটিং সহায়ক। একইসাথে ফাস্ট বোলারদের পয়োমন্ত ভেন্যুও।
আর তাইতো গতকাল বৃহস্পতিবার এই অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে সুপার এইটের প্রথম ম্যাচে রান খরা কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৯৪ রানের বিশাল স্কোর গড়েও সহজে জিততে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। যুক্তরাষ্ট্রও দুর্দান্ত ব্যাটিং করে পাল্টা জবাব দিয়ে, মাত্র ১৮ রানে হেরেছে।
Advertisement
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রোটিয়া উইলোবাজদের মধ্যে সবার আগে যার নাম চলে আসে, যিনি আইপিএল ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিভিন্ন সিরিজ ও আসরে ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষ বোলারদের চার ও ছক্কায় ভাসিয়ে দেন; সেই কুইন্টন ডি কক অ্যান্টিগার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে নেমেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ৪০ বলে ৫ ছক্কা ও ৭ বাউন্ডারিতে ৭৪ রানের ঝোড়ো ইনিংস উপহার দিয়েছেন।
একইভাবে প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার কাগিসো রাবাদা (৪ ওভারে ৩/১৮) বারুদে বোলিং করে যুক্তরাষ্ট্রর বিপক্ষে ম্যাচ জেতাতে ভূমিকা রেখেছেন।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাঁ-হাতি স্পিন অলরাউন্ডার হারমিত সিং, যিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রর জয়ের অন্যতম নায়ক, সেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঁ-হাতি স্পিনার কাম মিডল অর্ডার দারুন অলরাউন্ড পারফরমেন্স দেখিয়েছেন। বল হাতে ৪ ওভারে ২৪ রানে ২ উইকেট দখলের পর ব্যাট হাতে ১৭২.৭২ স্ট্রাইকরেটে ৩ ছক্কায় ২২ বলে ৩৮ রানের ঝাড়ো ইনিংস খেলে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকদূর নিয়ে গিয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকা আর যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচের ওই তিনটি ব্যক্তিগত পারফরমেন্সই বলে দিয়েছে এটা নাসাউ আর আরোনেস ভ্যালের মত বাজে উইকেট নয়। স্পিড ও বাউন্সে কোন সমস্যা নেই। বল ব্যাটে আসে, বাউন্সও আছে ঠিক।
ওই ম্যাচেই প্রমাণ হয়েছে অ্যান্টিগায় ডি ককের মতো ফ্রি-স্ট্রোক মেকাররা যেমন হাত খুলে স্বচ্ছন্দে চার ও ছক্কার ফুলঝুড়ি ছোটাতে পারেন, একই সাথে দ্রুত গতির ও স্পিন বোলাররাও ভাল জায়গায় বল ফেলতে পারলে সাফল্য পেতে পারেন।
তাই ধরেই নেয়া যায় নাসাউ আর আরোনেস ভ্যালের মত লো স্কোরিং গেম হওযার সম্ভাবনা খুব কম অ্যান্টিগায়। মানে বিগ স্কোরিং গেম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আর যদি তাই হয়, তাহলে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জটাও হবে বেশি। কারণ গ্রুপ পর্বে বোলিং বিশেষ করে পেস বোলিং সহায়ক পিচে বাংলাদেশের ব্যাটাররা ১২৫, ১১৩ আর ১০৬ রান করেই ম্যাচ জিতেছে। অ্যান্টিগায় তা সম্ভব হবে না। অন্তত ১৬০ প্লাস রান করতেই হবে।
একইভাবে বোলারদেরও অ্যান্টিগায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। নাসাউ আর সেন্ট ভিনসেন্টের পিচ দুটি বাংলাদেশের বোলারদের পক্ষে ছিল। যে কারণে তানজিম সাকিব, মোস্তাফিজ আর তাসকিনরা ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছেন।
অতিবড় সমালোচকও স্বীকার করছেন গ্রুপ পর্বে বিদঘুটে উইকেট প্রকারন্তরে বাংলাদেশের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। যেখানে বাংলাদেশ বোলিং দিয়েই শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস আর নেপালকে হারিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ১১৩ রানে বেঁধে রেখে বোলাররা সাফল্যের মঞ্চ তৈরি করলেও ব্যাটাররা পেরে উঠতে পারেননি। তাই শেষ পর্যন্ত আর জয় ধরা দেয়নি। ৪ রানের পরাজয়ই থেকেছে সঙ্গী।
এখন দেখার বিষয় হলো, ডাবল পেস আর আনইভেন পিচে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ঘোল পানি খাওয়ানো তানজিম সাকিব, মোস্তাফিজ আর তাসকিনরা ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ট্রেভিস হেড, ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আর মার্কাস স্টয়নিজের সাজানো সমৃদ্ধ ও অতি শক্তিশালী অসি ব্যাটিং চ্যালেঞ্জটা কিভাবে মোকাবিলা করেন?
এআরবি/আইএইচএস