শিক্ষা

সিলেটে আলিম-কারিগরির স্থগিত পরীক্ষা কোন প্রশ্নপত্রে?

বন্যার কারণে সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী— এ সময়ে এইচএসসির চারটি, আলিমের পাঁচটি এবং কারিগরির পরীক্ষার্থীদের ছয়টি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের পরীক্ষার্থীদের এব পরীক্ষা নতুন রুটিন অনুযায়ী হবে।

Advertisement

এরমধ্যে সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নপত্রের সঙ্গে অন্য আটটি সাধারণ বোর্ডের প্রশ্নপত্র মিল না থাকায় কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু প্রশ্নপত্র নিয়ে বিপত্তিতে পড়েছে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। সারাদেশের আলিম পরীক্ষার্থীরা মাদরাসা বোর্ডের অধীনে। আবার সারাদেশের এইচএসসি (বিএম ও বিএমটি) পরীক্ষার্থীরা কারিগরি বোর্ডের অধীনে।

এ দুটি বোর্ড স্বতন্ত্র হওয়ায় দেশের কোনো অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা স্থানীয় নির্বাচনসহ যে কোনো কারণে পরীক্ষা স্থগিত করতে হলে সারাদেশে তা স্থগিত হয়। গত বছরও (২০২৩) চট্টগ্রামে বন্যার কারণে সারাদেশে আলিম ও কারিগরি বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষা দেরিতে শুরু হয়েছিল।

তবে এবার ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শুধু সিলেট বিভাগের বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। সিলেট বিভাগের জেলাগুলো বাদে সারাদেশে আলিম ও কারিগরি বোর্ডের পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

Advertisement

মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তের পর আলিম ও কারিগরির এইচএসসি (বিএম-বিএমটি) পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা ধোঁয়াশায় পড়েছেন। সিলেটে স্থগিত পরীক্ষা কোন প্রশ্নপত্রে নেওয়া হবে- তা জানতে উদগ্রীব তারা।

মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ড সূত্র বলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর নতুন করে প্রশ্নপত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে এ দুটি বোর্ড। যে দুই সেট প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়েছে, সেগুলো বাদে অন্য দুই সেটের প্রশ্নপত্র সিলেটের জেলাগুলোর জন্য ছাপানো হতে পারে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মামুন উল হক জাগো নিউজকে বলেন, আমরা চার সেট প্রশ্নপত্র তৈরি করি। এরমধ্যে দুই সেট ছাপানো হয়। বাকি দুই সেট সংরক্ষিত থাকে। সিলেটে যখন আমরা স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেবো, তখন ওই দুই সেট প্রশ্ন ছাপাবো।

দুই ধরনের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হবেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চার সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হলেও ঘুরেফিরে প্রায় একই প্রশ্ন থাকে। একই অধ্যায় থেকে হয়তো ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্ন আসতে পারে। খুব বেশি তফাৎ হবে বলে মনে হয় না। আশা করি কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না।

Advertisement

মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহ আলমগীরও প্রশ্নপত্র প্রণয়ন নিয়ে একই কথা জানিয়েছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত বছর সারাদেশে আলিম পরীক্ষা স্থগিত হয়েছিল। এবার কিন্তু সেটা হচ্ছে না। এ সিদ্ধান্তটা মন্ত্রণালয়ের। যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা বাস্তবায়ন করি আমরা। নতুন করে প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে আমরা স্থগিত পরীক্ষা নেবো।

ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে প্রভাব পড়বে কি না, এ নিয়ে মাদরাসার একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক।

ঢাকা মাদরাসা-ই-আলিয়ার একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, এবারের সিদ্ধান্তটা অনাকাঙ্ক্ষিত মনে হয়েছে। সারাদেশে আলিমের পরীক্ষা একই প্রশ্নে হয়। শিক্ষার্থীরা বছর ধরে সেভাবে প্রস্তুতিও নেয়। ভিন্ন প্রশ্ন হলে স্বাভাবিকভাবেই ছন্দপতন ঘটতে পারে।

এক সপ্তাহ পরে সারাদেশে একসঙ্গে আলিম এবং কারিগরির এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করাটাই ভালো সিদ্ধান্ত হতো বলে মনে করেন এ শিক্ষক।

যেসব বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত

মাদরাসা বোর্ডে কুরআন মাজিদ, আরবি প্রথমপত্র (সাধারণ বিভাগ), আরবি সাহিত্য (বিজ্ঞান ও মুজাব্বিদ মাহির বিভাগ), বাংলা প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র।

কারিগরি বোর্ডে বাংলা-২, ইংরেজি-২, ইংরেজি-২ (পুরোনো সিলেবাস), কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন-২ (২১৮২৩), কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন-২ (১৮২৩), বিজনেস ইংলিশ অ্যান্ড কমিউনিকেশন।

অন্যদিকে সিলেট বোর্ডে এইচএসসির চারটি পরীক্ষা স্থগিত হচ্ছে। সেগুলো হলো— বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র এবং ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র।

আগামী ৩০ জুন থেকে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে। এবার সাধারণ ৯টি, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। এরমধ্যে মাদরাসা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ৮৮ হাজার ৭৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৩ জন।

এএএইচ/জেডএইচ/এমএস