দেশজুড়ে

সিলেটে দেড় হাজার গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি ৮ লাখ মানুষ

সিলেটে দিনভর বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বুধবার (১৯ জুন) সকালে জেলার প্রধান দুই নদীর পানি কিছুটা ওঠানামা করলেও দুপুরের পর থেকে বেড়েই চলেছে। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

Advertisement

গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও গোলাপগঞ্জসহ প্রায় সবকটি উপজেলা কমবেশি আক্রান্ত হয়েছে। বুধবার পানি বাড়ার কারণে এসব উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

দুপুরে জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৩টি ওয়ার্ড ও ১৩ উপজেলার এক হাজার ৫৪৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন আট লাখেরও বেশি মানুষ।

এর আগে মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাত পর্যন্ত ২১টি ওয়ার্ড ও জেলার ১৩ উপজেলার এক হাজার ৩২৩টি গ্রাম প্লাবিত ছিল। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় সাত লাখ।

Advertisement

এদিকে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৩ দশমিক ১৩ দশমিক ৭১ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। যা বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপরে। এর আগে বিকেল ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ছিল বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপরে। তাছাড়া দুপুর ১২টায় ছিল বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ও ভোর ৬টায় ৯৩ সেন্টিমিটার ওপরে।

আরও পড়ুন

ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েন সিলেটে থামছেই না বৃষ্টি, শহরে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি সিলেটে বন্যার মধ্যে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ভোর ৬টায় ছিল বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপরে। দুপুর ১২টায় তা আরও কমে দাঁড়ায় ৩৫ সেন্টিমিটারে। কিন্তু বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ফের বাড়তে শুরু করে পানি। সবশেষ সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

বুধবার সকাল থেকে কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বাড়তে শুরু করে। সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।

Advertisement

ভোর ৬টায় ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল কুশিয়ারা নদীর পানি। এরপর পানি ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা ছয়টায় ওই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।

একইভাবে কুশিয়ারার পানি শেরপুর পয়েন্টে বুধবার সকাল থেকে বাড়তে শুরু করে। সবশেষ সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে ভোর ৬টায় পানি ছিল বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপরে।

সিলেটের প্রধান নদ-নদীতে পানি বাড়লেও লোভা, সারি, সারিগোয়াইন, ডাউকি ও ধলাই নদীর পানি অনেকটা কমেছে। এসব নদীর মধ্যে শুধু সারিগোয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাকি নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

আরও পড়ুন

সিলেট সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা

বন্যা আক্রান্ত মানুষের জন্য সিটি করপোরেশনসহ জেলায় ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় আশ্রয়েকেন্দ্র রয়েছে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যার সার্বিক পরিস্তিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একজন ডেটিকেটেড অফিসার ও ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

এদিকে, বুধবার ভোর ৬টার আগের ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলেও আজ ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে আরও তিনদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় মাঝারি থেকে অতিভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

আহমেদ জামিল/এসআর/জিকেএস