ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এটি যে কোনো সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া তিস্তার পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ডুবে বন্যা হয়েছে।
Advertisement
অপরদিকে গত একদিনে জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। পরিবারগুলো শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছে।
বুধবার (১৯ জুন) বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।
এর আগে সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৫১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
Advertisement
পাউবো সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১২টায় কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রংপুরের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, ফকির পাড়া ইউনিয়নে রমণীগঞ্জ ও দালাল পাড়া, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ফসলি জমির ধানের বীজতলা, বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
তিস্তা ও সানিয়াজান অববাহিকার নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন। পানিবন্দী পরিবারগুলো গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রমনীগঞ্জ গ্রামের নুরজাহান বেগম বলেন, ঈদের দিন থেকে ঘরে পানি উঠেছে। রান্না করতে পারিনি। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে শুকনো খাবার খেয়ে আছি।
Advertisement
চর গোবর্ধন এলাকার কৃষক আকবর আলী বলেন, ৫ বিঘা জমিতে বাদাম লাগিয়েছি। হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় বাদাম তুলতে পারিনি। এতে লাখ টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
হাতীবান্ধার ফকিরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফজলার রহমান খোকন বলেন, দুটি ওয়ার্ডের প্রায় চারশ পরিবারের ঘর বাড়িতে পানি ঢুকেছে। সন্ধ্যার পর থেকে আবারও পানি বাড়ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।
হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, পানিবন্দী মানুষের খোঁজ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে অবগত করেছি। দ্রুত শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া কতিপয় স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করে নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির দেখা দিতে পারে।
রবিউল হাসান/এএইচ/জিকেএস