অর্থনীতি

চীন-কোরিয়ায় চাহিদা বেড়েছে গরুর বিশেষ অঙ্গ ও পাকস্থলীর

গরুর কোনো কিছুই এখন আর ফেলনা নয়। অথচ একসময় গরু জবাইয়ের পর পাকস্থলী (ওমাসম) ও পেনিস (পিজল) উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেওয়া হতো। কিন্তু এখন এসব রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন দেশের তরুণ উদ্যোক্তারা। আমেরিকা, কানাডা, কোরিয়া, চীন ও হংকংসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এসব অঙ্গ।

Advertisement

এরমধ্যে চীন, ভিয়েতনাম ও হংকংয়ে গরুর ওমাসমের চাহিদা ভালো। অন্যদিকে কানাডা, আমেরিকা, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া পিজলের চাহিদা বেশ। এসব দেশে এক টন শুকনো পিজলের দাম ২০ হাজার ডলার, আর এক টন শুকনো ওমাসমের দাম ৬ হাজার ডলার। মূলত এগুলো দিয়ে তৈরি হয় উন্নত মানের স্যুপ ও সালাদ। যা দেশগুলোতে বেশ জনপ্রিয়।

এবার ২০ কনটেইনার ওমাসম বা গরুর পাকস্থলী সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রতি কনটেইনারের দাম দুই লাখ ডলার। আর পিজল বা পেনিস সংগ্রহ হবে ১০০ টন।

বাংলাদেশ গরুর নাড়ি-ভুড়ি রপ্তানিকারকদের আশা সরকার যদি ২ শতাংশ বাড়িয়ে প্রণোদনা ১০ শতাংশ করে, তবে এই খাত থেকে এবার ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

Advertisement

এ বিষয়ে আশরাফ উদ্দিন আকাশ নামে এক তরুণের সঙ্গে কথা হয়। তিনি কলেজ শিক্ষার্থী। থাকেন রাজধানীর হাজারীবাগে। প্রতি বছর কোরবানির ঈদে গরুর নাড়ি-ভুড়ি ও পেনিস সংগ্রহ করে থাকেন।

আরও পড়ুন:

গবাদি পশুর বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস ১০ টাকায়ও ছাগলের চামড়া কিনছে না কেউ ঈদের দ্বিতীয় দিনে চামড়ার দাম পড়তি

এবারও হাজারীবাগে সড়কের পাশে ছোট একটা দোকানের সামনে গরুর ওমাসম ও পিজল সংগ্রহ করছিলেন তিনি। তার টার্গেট ১০ থেকে ১২ হাজার ওমাসম ও পেনিস সংগ্রহ করা। প্রতিটা পেনিস মানভেদে ৬০-১০০ টাকায় সংগ্রহ করছেন তিনি। এছাড়া গরুর ওমাসম ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা দিয়ে সংগ্রহ করছেন। এগুলো সংগ্রহের পর চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকের হাতে তুলে দিয়ে ভালো টাকা আয় করেন। যা দিয়ে পড়াশোনাসহ সংসারের খরচ চলে যায় তার।

আশরাফ উদ্দিন বলেন, এগুলো সাধারণত মানুষ ফেলে দেয়। কিন্তু আমাদের কাছে দিলে ভালো টাকা পাওয়া যায়। এখন একটা ছাগলের চামড়া কেউ কিনতে চায় না। অথচ গরুর পেনিস ১০০ টাকা ও সাতপাল্লা (পাকস্থলীর স্থানীয় নাম) সর্বোচ্চ ২২০ টাকা দিয়ে আমরা কিনছি। তাই সবাইকে বলবো চামড়ার মতো করেই গরুর পেনিস-ওমাসম সংগ্রহ করে আমাদের কাছে বিক্রি করুন। এতে করে বাংলাদেশও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে, আমাদেরও কিছু টাকা আয় হবে।

Advertisement

ঢাকার হাজারীবাগে গরুর ওমাসম ও পিজল সংগ্রহের জন্য বেশ কয়েকটি আড়ত গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে অন্যতম সমসের হাজী, নেপাল বাবু, খায়ের মিয়া ও ভুলা মিয়ার আড়ত। এসব আড়তে এগুলো পরিষ্কারের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় শতাধিক কর্মচারী।

এরমধ্যে আড়তে ওমাসম ও পিজল সংগ্রহ করে জমা দেন আবার একদল তরুণ। এর বিনিময়ে তারা টাকা পান। তেমনই একজন হাজারীবাগ এলাকার জহিরুল ইসলাম। অন্যান্য সময় বাজারে কামলা দিলেও এবার গরুর সাতপাল্লা ও পেনিস সংগ্রহ করে কয়েক হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন:

দাম না পেয়ে কোরবানির পশুর চামড়া খেয়ে ফেলছেন দক্ষিণাঞ্চলের অনেকেই রাজশাহীতে ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকায়, কোথাও ফ্রি অভিজ্ঞতা না থাকায় লোকসানে পড়েন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

সমসের হাজী প্রায় সাত বছর এই পেশায় জড়িত। তিনি বলেন, এগুলো মানুষ টুকিয়ে আনে। কেউ মাগনা আনে আবার কেউ টাকা দিয়ে আনে। আমাদের কাছে দিলে তারা টাকা পায়।

এ খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, চামড়া সংগ্রহ পরিশ্রমের ব্যাপার। কিন্তু ওমাসম ও পেনিস সংগ্রহ করা সহজ। গরুর পিজল সংগ্রহ করতে লবণ লাগে না। ফ্রিজ ছাড়া তিনদিন রাখা যাবে। তবে ওমাসম সংগ্রহ করতে হলে পরিষ্কার করে লবণ দিতে হবে।

আড়তদার নেপাল বাবু বলেন, এবার পিজল ও ওমাসমের চাহিদা অনেক। চামড়ার ক্রেতারা টাকা নিয়ে ছয়-নয় করে, আমরা এটা করি না। কেউ মাল দিলে সাথে সাথে টাকা। অনেক সময় অগ্রিম টাকা দিয়ে থাকি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অঙ্গ দুটি রপ্তানি করে বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। এবার ৫০০ কোটি টাকার রপ্তানি টার্গেট রয়েছে।

বিদেশে গরুর ওমাসম ও পিজল রপ্তানিকারকদের অন্যতম চট্টগ্রামের এমএস সুমন ট্রেডার্স। এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহাম্মদ সুমন জাগো নিউজকে বলেন, মানুষ এখন অনেক সচেতন। তাই ওমাসম ও পিজল সংগ্রহ ভালো হচ্ছে। এবার আশা করছি ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। বিদেশে এগুলোর খুব চাহিদা। কোরিয়া, চীন ও হংকংয়ে ওমাসমের চাহিদা ভালো। কানাডা-আমেরিকায় পিজলের চাহিদা রয়েছে।

ওমাসম-পিজল সংগ্রহের আহ্বান জানিয়ে সুমন বলেন, সারাদেশে ১০ হাজার পরিবার এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাই বলবো এগুলো খাল-বিলে ফেলে দিয়ে পরিবেশ দূষণ করবেন না। এগুলো সংগ্রহ করে আমাদের কাছে বিক্রি করুন। একটা ছাগলের চামড়া থেকে কয়েকগুণ বাড়তি দাম পাবেন।

তিনি আরও বলেন, গরুর পিজল সংগ্রহে কোনো পরিশ্রম নেই। শুধু ওমাসমে একটু পরিশ্রম। একটা ভালো মানের ওমাসম ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারেন। এতে করে আমাদের দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে।

এমওএস/জেডএইচ/জিকেএস