দেশজুড়ে

‘সড়কে নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের ঈদ আনন্দ’

ঈদ এলেই লাখ লাখ মানুষ ছুটে যান গ্রামের বাড়িতে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চান তারা। সবাই যখন নিজ নিজ বাড়ি ফেরেন তখনও কিছু মানুষ থেকে যান নিজ কর্মস্থলে। বাড়তি দায়িত্ব থাকে তাদের কাঁধে। এ ধরনের একটা শ্রেণিপেশার মানুষ হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ।

Advertisement

ঈদের দিনেও সড়কের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত সময় পার করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। দায়িত্ব পালনেই খুঁজেন তারা ঈদের আনন্দ।

ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল নাজির হোসেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানজট নিরসনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঈদের দিন সোমবার বিকালে ফেনীর ব্যস্ততম সড়ক ট্রাংক রোডে খেঁজুর চত্বরে এক ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশে কাজ করি, ঈদে আমরা যদি ছুটি কাটাই মানুষজন ঈদ আনন্দ করবেন কী করে। গত ২৬ বছরে ২ থেকে ৩ বারও পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে পারিনি। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও এখন মানিয়ে নিয়েছি। ৩ মেয়ে ও স্ত্রী থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাড়া বাসায়। এবার ঈদে ছুটি না মেলায় একাই ঈদ করছেন তারা।

ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে কথা হয় সার্জেন্ট আবদুল জলিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিগত ৬ বছরে একবারও বাড়িতে ঈদ করতে পারিনি। ঈদের দিন সবাই যখন পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত থাকে তখনও আমাদের রাস্তায় থাকতে হয়। দায়িত্ব আর জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা ভেবে এ কষ্ট ভুলে যাই।

Advertisement

এটিআই আবদুল গাফফার বলেন, সবাই ঈদে ছুটি চায়, কিন্তু অনেকে পায় আবার অনেকে পায় না। আমি গত রোজার ঈদেও ডিউটি করেছি। কোরবানির ঈদেও ডিউটি করছি। কাজের চাহিদা থাকার কারণে এবারও ঈদে ছুটি পাইনি।

জাহাঙ্গীর নামে অপর এক কনস্টেবল বলেন, এবারও পুলিশ লাইনে ঈদ করছি। গত দুই বছর ধরে এমনই হচ্ছে। ঈদে সবার আনন্দ থাকলেও, আমাদের কোনো আনন্দ নেই। মনে হয় ঈদের দিন আর অন্যদিন একই। সারাদিন অলস সময় কাটাতে হয়।

মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ছিলেন এটিআই শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ঈদের দিন সহকর্মীরা সবাই মিলে এক সঙ্গে নামাজ পড়ে একে অন্যের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে যে যার গন্তব্যে চলে যায়। আবারও প্রতিদিনের মতো দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কেউ কেউ পরিবারের সঙ্গে ফোনে শুভেচ্ছা আদান-প্রদান করেন, এটাই আমাদের ঈদ আনন্দ।

ছুটি প্রসঙ্গে ফেনী শহর ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) আনোয়ারুল আজিম মজুমদার বলেন, সবাই তো আর ছুটি পাবে না। নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তায় কাউকে না কাউকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। পুলিশে চাকরি নেওয়ার সময়ই আমাদের বলা হয়েছে, আমাদের চাকরি জীবনে ছুটি বলতে কোনো শব্দ নেই। রাষ্ট্র ও জনগণের প্রয়োজনে যে কোনো মুহূর্তে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হয়। মানুষ যেন নির্বিঘ্নে ঈদ করে নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরে যেতে পারে আমরা সে দায়িত্বটুকু পালন করছি। আর এতেই আমাদের ঈদ আনন্দ।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে। ট্রাফিক পুলিশে ৩১ বছর পার করে দিয়েছি। চাকরি সূত্রে এখন ফেনীতে আছি। পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে কার মন না চায়। কিন্তু আমাদের কাঁধে যে দায়িত্ব রয়েছে, সেটি পালন না করে কোনো উপায় নেই । আমাদের ফেনী শহর ট্রাফিক বিভাগে ৬১ জন পুলিশ সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে এবার ঈদে ছুটি পেয়েছেন মাত্র কয়েক জন।

এবিএএম/এসএনআর/জেআইএম