দেশজুড়ে

দাম না পেয়ে কোরবানির পশুর চামড়া খেয়ে ফেলছেন দক্ষিণাঞ্চলের অনেকেই

কোরবানির পশুর চামড়ার দাম পাচ্ছেন না দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। দাম না পেয়ে চামড়া নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে খেয়ে ফেলছেন তারা। সরকার চামড়ার দাম বেঁধে দিলেও সে দামের প্রভাব নেই উপকূলীয় পটুয়াখালীসহ আশপাশের অঞ্চলে।

Advertisement

সোমবার (১৭ জুন) পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানি দিয়ে নিজেরাই পশুর চামড়া ছাড়িয়ে নিয়েছেন। যারা ভাগে কোরবানি দিয়েছেন তারা অংশীদারদের মধ্যে চামড়া ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন। কেউ কেউ চামড়া ছাড়িয়ে মাদরাসা ও এতিমখানায় দান করে দেন।

স্থানীয়রা জানান, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা আকারভেদে একটি গরুর চামড়ার দাম দিচ্ছেন ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম।

সোমবার দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এ উৎসবে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাদের প্রিয় বস্তু অর্থাৎ পশু কোরবানি করে থাকেন।

Advertisement

পটুয়াখালীর দশমিনার মাছুয়াখালী গ্রামের দফাদার বাড়িতে দুটি গরু কোরবানি করা হয়েছে। প্রতিটি গরুতে সাতজন করে ভাগীদার রয়েছেন। দুটি গরুর ভাগীদাররাই চামড়ার দাম না পেয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন।

এক গরুর অংশীদার দফাদার বাড়ির মো. লিয়াকত মৃধা বলেন, চামড়ার দাম ওস্তারা (যারা চামড়া ছাড়ানোর কাজ করেন) দেড়শ টাকা বলেছেন। যে চামড়া ছাড়াবে তার মজুরি ৪০০ টাকা। তাই আমরা নিজেরাই চামড়া ছাড়িয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি। সবাই চামড়া রান্না করে খাবে।

আরও পড়ুন

১০ টাকায়ও ছাগলের চামড়া কিনছে না কেউ কাঁচা চামড়ার দাম কিছুটা বাড়লেও খুশি নন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

আরেক কোরবানির গরুর অংশীদার মো. ইউসুফ মৃধা বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই আমরা কোরবানির পশুর চামড়ার দাম পাই না। আগে সাধারণত যারা চামড়া কিনতেন তারা চামড়াটা নিজেরাই ছাড়িয়ে নিতেন। এবার ৮৭ হাজার টাকা দিয়ে কেনা গরুর চামড়ার দাম বলছেন ২০০ টাকা। অন্যদিকে চামড়া ছাড়ানোর মজুরি ৪০০ টাকা। তাই আমরা চামড়া বেচা-বিক্রির ঝামেলায় যাইনি। আমরা নিজেরাই চামড়া ছাড়িয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি।

Advertisement

পার্শ্ববর্তী আলিপুরা, নেহালগঞ্জ, বড় গোপালদী, আদমপুরা, বেতাগী এলাকায়ও কোরবানির পশুর চামড়ার ক্ষেত্রে দেখা গেছে একই চিত্র।

মাছুয়াখালী গ্রামের মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আগে দেখেছি কোরবানির আগে চামড়া নেওয়ার জন্য ব্যাপারীরা ঘোরাঘুরি করতেন। অগ্রিম টাকাও দিয়ে রাখতেন। এখন আর কেউই চামড়ার খোঁজ নেয় না। ৭০ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়ার দাম দেড়শ টাকা দিতে চাইছিল একজন। আমরা দেইনি, যেভাবে পারছি নিজেরাই কষ্ট করে চামড়াটা ছাড়িয়ে নিয়েছি। যারা খায় তাদেরকে চামড়া দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

একই গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেনও কোরবানি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা ছয় ভাগে কোরবানি গিয়েছি। চামড়ার এত কম দাম কোনোদিন দেখিনি। চামড়াটা নিজেরা খাওয়ার জন্য ভাগ করে নিয়েছি। চামড়া গরিবের হক, তাই নিজে একটা দাম ধরে সেই টাকা গরিবদের দান করে দেবো।

দশমিনা এলাকায় প্রতি বছরই মৌসুমি ব্যবসায়ী হিসেবে চামড়া কেনেন নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, চামড়ার দাম নেই। দেড়শ থেকে ৩০০ টাকায় চামড়া কিনছি। তবে বেশিরভাগ মানুষই এই দামে চামড়া দিচ্ছে না। চামড়া কিনে দাম পাওয়া যায় না, তাই বেশি দাম দিয়ে কেনার ঝুঁকি কেউ নেয় না।

আগে শত শত চামড়া কিনলেও এবার দশটা চামড়াও কিনতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত ৩ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার মূল্য ঠিক করে দেয়। এবার ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

এছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী একটি গরুর চামড়ার দাম এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা হওয়ার কথা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরএমএম/কেএসআর/এমএস