উৎসবের দিনগুলোও যেকোনও জাতির স্বাতন্ত্র্য ও পৃথক পরিচয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ও প্রতীক। একটি জাতির স্বতন্ত্র পরিচয়-সত্তা নির্মাণ করতে, তাদের মধ্যে ঐক্যের চেতনা ও ভ্রাতৃত্বের মৈত্রী জাগ্রত করতে সম্মিলিত আনন্দ ও উদযাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাসুল (সা.) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় গেলেন, তখন সেখানে জাহেলি যুগ থেকে প্রচলিত দু’টি উৎসবের দিন ছিল; শরতের পূর্ণিমায় ‘নওরোজ’ এবং বসন্তের পূর্ণিমায় ‘ মেহেরজান’।
Advertisement
রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুই দিন কীসের? মদিনাবাসী সাহাবিরা বললেন, জাহেলি যুগ থেকে আমরা এই দুই দিন খেলাধুলা ও আনন্দ করি। রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহ এই দুই দিনের বদলে তোমাদের নতুন দু’টি উৎসবের দিন দিয়েছেন: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। (মুসনাদে আহমদ ১৩০৫৮)।
এভাবে মুসলমানদের পৃথক উৎসবের সূচনা হলো। এটা দ্বিতীয় হিজরি অর্থাৎ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ঘটনা। রাসুল (সা.) ঘোষণা করলেন, ‘সব জাতিরই ঈদ বা উৎসবের দিন থাকে, এটা আমাদের ঈদ।’ (সহিহ বুখারি ৩৯৩১, সহিহ মুসলিম ২০৯৮)।
ঈদুল আজহার দিনটি আল্লাহর প্রিয় বান্দা নবি ইবরাহিমের (আ.) তাকওয়া ও আনুগত্যের স্বারক। ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নে দেখেছিলেন তিনি তার ছেলেকে কোরবানি দিচ্ছেন। এটাকে তিনি আল্লাহর নির্দেশ মনে করেন এবং ছেলেকে কোরবানি করতে নিয়ে যান। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় ছেলের বদলে একটি পশু কোরবানি করা হয়।
Advertisement
এ ঘটনা কোরআনে বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ‘অতঃপর সে যখন তার পিতার সাথে চলাফেরা করার মত বয়সে উপনীত হল তখন ইবরাহিম বলল, বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে আমি কোরবানি করছি, এখন তোমার অভিমত কি, বল। সে বলল, হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহ ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তার পুত্রকে কাত করে শায়িত করল। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, ‘হে ইবরাহিম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান কোরবানির বদলে।’ (সুরা সাফফাত: ১০২-১০৭)
যে দিন ইবরাহিম (আ.) তার ছেলে ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই দিনটিকেই আমরা ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ হিসেবে পালন করি। প্রতি বছর দিনটি আমাদেরকে আল্লাহর নিঃশর্ত আনুগত্য ও ত্যাগ তিতিক্ষার শিক্ষা দিয়ে যায়। পাশাপাশি এটি উৎসব ও আল্লাহর আতিথেয়তার দিন। আল্লাহর জন্য কোরবানি করে ওই পশুর গোশত আল্লাহর মেহমান হিসেবে আমরা খাই। কোরআনে আল্লাহ কোরবানির পশুর গোশত নিজে খেতে ও দরিদ্রদের খাওয়াতে বলেছেন। (সুরা হজ: ২৮)
ওএফএফ/জেআইএম
Advertisement