চট্টগ্রামের মেয়ে নাবিলা ইসলাম। তার জন্ম-শৈশব-কৈশোর পুরোটাই কেটেছে পাহাড় ঘেরা বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। চাকরিজীবী বাবা-মায়ের মেয়ে। তিন বোনের মধ্যে নাবিলাই বড়। লেখাপড়ায় তিনি বরাবরই লক্ষীটি। এসএসসি-এইচএসসি দু`টোতেই অর্জন করেছেন জিপিএ-৫। মিষ্টি মেয়ে নাবিলা ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন শোবিজে কাজ করবেন। শোবিজে নাবিলার পথচলা শুরু বছর পাঁচেক আগে। প্রথম নির্মাতা ওয়াহিদ তারেকের পরিচালনায় একটি ঈদের খণ্ড নাটকে অভিনয় করেছিলেন নাবিলা। নাটকটির নাম ‘লিটল অ্যাঞ্জেল আই অ্যাম ডাইং’। সেটি প্রচারিত হয়েছিল দেশ টিভিতে। তখন নাবিলা থাকতেন চট্টগ্রামে। ঢাকায় এসে কাজ করে আবার ফিরে যেতেন। এভাবেই সময় কেটে যাচ্ছিল। তবে নাবিলা থেমে যাননি। এরপর টুকটাক ঈদের টেলিফিল্মগুলোতে কাজ করতে শুরু করেন। যেমন আশুতোষ সুজনের পরিচালনায় ‘তক্ষক’ এবং ‘রুপালী আলোর খোঁজে’ টেলিফিল্ম দু’টোতে। নাবিলা বলেন, ‘আমার পড়ালেখা ভীষণ চাপ ছিল সেসময়। সেজন্য নিয়মিত কাজ করতে পারতাম না। তবে আমি থেমে যাইনি। ভালো লাগার স্থানটা ছিল শুধু অভিনয়কে ঘিরে। সেজন্য মাঝেমাঝে ঢাকায় এসে কাজ শেষ করে আবার চট্টগ্রাম ফিরে যেতাম। প্রথম যে নাটকগুলোতে কাজ করি সেগুলো দর্শকদের কাছে খুব ভালো গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। সেজন্য নির্মাতারা আমার উপর হয়তো ভরসা পেতেন।’ শুধু নাটক নয় নাবিলা কাজ করেছেন বেশ কিছু নামী পণ্যের বিজ্ঞাপনেও। মেজবাউর রহমান সুমনের রাঁধুনি সরিষার তেল, সজীব কনফ্লেক্স, ওয়াহিদ তারেকের প্রাণ ফ্রুটো ছাড়াও কিন্ডো ক্যান্ডি, হরলিকস, কেয়া বিউটি সোপ প্রভৃতি। বর্তমানে নাবিলার ব্যস্ততা নাটক ঘিরে। তিনি কাজ করছেন মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘নয় ছয়’ নাটকে। এছাড়া সৈয়দ শাকিলের ‘সম্রাট’ ধারাবাহিক নাটকে। নাটক দু’টিতে কাজ করে দারুণ উচ্ছ্বসিত নাবিলা। তিনি বলেন, ‘নয় ছয় নাটকটি গত ১৯ এপ্রিল থেকে মাছরাঙা টিভিতে প্রচারে এসেছে। তাছাড়া এনটিভিতে ‘সম্রাট’ নাটকটি প্রচারিত হচ্ছে। দুটি নাটকে আমার চরিত্র একেবারেই আলাদা।’এছাড়া নাবিলা কাজ করছেন নাট্য নির্মাতা ইমরাউল রাফাতের ‘কলিংবেল’ এবং কায়সার আহমেদের ‘সহযাত্রী’ নাটকে। ফারুক আহমেদ পরিচালিত ‘মেঘেদের সংসার’ নাটকেও তিনি অভিনয় করছেন। সেখানে নাবিলার বিপরীতে আছে মীর সাব্বির। যেটি প্রচারের অপেক্ষায় আছে। নাবিলা বলেন, ‘আমার আরো বেশ কিছু নাটক প্রচারের অপেক্ষায় আছে। এরমধ্যে আছে ‘ইউ অ্যান্ড আই’, ‘ব্রেকআপ থিওরি’। তাছাড়া ঈদ উপলক্ষে আরো কিছু নাটকে কাজের কথা চলছে। এছাড়া গেল ভালোবাসা দিবস এবং বৈশাখ উপলক্ষে ‘তোমায় ভেবে লেখা’ নাটকে কাজ করেও ভালো রেসপন্স পেয়েছি। আর ঈদ উপলক্ষে নির্মিত রিয়াজ ভাইয়ার সঙ্গে ‘মাধবীলতা তোমার জন্য’ নাটকটিতে কাজ করা আমার ক্যারিয়ারের অনেক বড় পাওয়া হিসেবে থাকবে।’তবে শুধু অভিনয় নয়, নাবিলাকে পাওয়া যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঞ্চালনাতেও। উপস্থাপনায়ও সমান সাবলীল তিনি। সপ্তাহের প্রতি বুধবার এশিয়ান টিভিতে রাত ১০টায় ‘লাক্স স্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি বিনোদন ধর্মী অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়।নাবিলা বলেন, ‘অভিনয়ের পাশাপাশি আমি উপস্থাপনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। অভিনয় আর উপস্থাপনা দুটোই আমার ভালো লাগা।’হাঁটি হাঁটি করে এতদূর এগিয়ে আসা নাবিলা বললেন, ‘কাজের প্রতি ভালোবাসা আর আমার পরিবারের সহযোগিতায় আমি এগিয়ে চলেছি। মিডিয়াতে চলতে গিয়ে অনেকে নানা ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। তবে আমি এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো ধরণের প্রতিবন্ধতার সম্মুখীন হইনি। দিব্যি কাজ করে যাচ্ছি। কাজ শেষে পরিচালকেরা যখন বাহবা দেন, তখন সব ক্লান্তি উবে যায়। মোদ্দাকথা, আমি নিজেকে প্রথমে গড়েছি তারপর অভিনয়টাকে ভালো লাগার স্থান থেকে ভালোবেসেছি।’ বিবিএ শেষ করে নাবিলা বর্তমানে নর্থ সাউর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ-তে অধ্যয়ন করছেন। কাজের মধ্যেও পড়ালেখায় দারুণ মনোযোগী নাবিলা। তিনি বলেন, আমার পরিবার আমাকে সব সময় কাজের উৎসাহ দিয়েছে তবে লেখাপড়ার ক্ষতি না হয় সেজন্যও মা-বাবা তাগিদ দেন। আমার মা নিজেও একজন সাংবাদিক। চট্টগ্রামের দৈনিক ঈশান পত্রিকাতে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি এখন বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারের একজন সংবাদ পাঠিকা। আর বাবা চাকরী করেন ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে। আমার যাবতীয় কাজের প্রেরণা পেয়েছি বাবা-মায়ের নিকট থেকে।’হাসিখুশি আর দারুণ মিশুক স্বভাবের মেয়ে নাবিলা। তার ভালো লাগে ঘুরে বেড়াতে এবং শপিং করতে। ঘুম কাতুরে নাবিলা কাজের ফাকে অবসর পেলে বসে পড়েন হুমায়ূন আহমেদের বই নিয়ে। তার অসংখ্য বই পড়ে ফেলেছেন নাবিলা। মিসির আলী সিরিজ, হিমু সংকলন, বহুব্রীহি, শঙ্খনীল কারাগার, কোথাও কেউ নেই, গৌরীপুর জংশনসহ আরো অনেক। তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন স্যারের বই এত বেশি পরিমাণে পড়েছি তার গল্পে নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে মনের অজান্তেই আমার ভিতর ভর করেছে। ক্যারিয়ারে অন্তত একবার হলেও হুমায়ূন আহমেদের গল্পের নায়িকা হতে চাই।’ভবিষ্যতে নাবিলা অভিনয়েই থিতু হতে চান। হোক সেটা নাটক কিংবা চলচ্চিত্রে। নাবিলা বলেন, ‘একজন প্রকৃত ভালো মানুষই পারেন একজন ভালো শিল্পী হতে। তাই আগে নিজে ভালো মানুষ হয়ে সকলের কাছে পৌঁছুতে চাই। তারপর জীবনের বাকিটা সময় অভিনয়ের মধ্যে কাটাতে চাই।’চলচ্চিত্রে কাজ করারও স্বপ্ন দেখেন তিনি। ভালো গল্প, নির্মাণ এবং রুচিশীল কাজ পেলে বড়পর্দায় নিয়মিত কাজ করবেন বলেও জানালেন নাবিলা। এলএ/এবিএস
Advertisement