সন্তান জন্মের পর নারীর শরীর ও মনে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। এমনকি হরমোনের ওঠানামায় নারীদের ওজনও বেড়ে যায় মা হওয়ার পর। তবে কখনো কি শুনেছেন, বাবা হওয়ার পর পুরুষের শরীরে কোনো পরিবর্তন এসেছে?
Advertisement
এটি ঠিক যে একজন পুরুষ নারীদের মতো নয় মাস ধরে তার পেটে সন্তানকে বড় করেন না, তিনি সন্তান প্রসবও করেন না ও সন্তানের জন্য তার দেহে দুধও উৎপন্ন হয় না। তবে বাবার শরীরেও বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে, যা বাইরে থেকে খালি চোখে দেখা যায় না।
এক্ষেত্রে বড় ধরনের দুটি পরিবর্তন ঘটে। যারা প্রথম সন্তানের বাবা হন তাদের শরীরে হরমোন ও মস্তিষ্কে কিছু পরিবর্তন ঘটে, এমনটিই জানিয়েছেন ড. আন্না মাশিন। যিনি পিতৃত্বের ওপর একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। বইটির নাম- ‘পিতার জীবন: একজন আধুনিক পিতা হয়ে ওঠা।’
এর আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায় বিষয়টি। গবেষণা বলছে, বাবা হওয়ার পর পুরুষের শরীরেও পরিবর্তন আসে। তবে তা টের পান না অনেকেই।
Advertisement
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পুরুষের শরীরে এ পরিবর্তনের পেছনে দায়ী হলো বিশেষ কিছু হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন। বিশেষ করে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা নাকি অনেকটাই কমে যায় বাবা হওয়ার পর। এই হরমোন পুরুষের যৌন লক্ষণগুলোকে স্পষ্ট করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়া শরীরের জন্য তেমন খারাপ নয়। বরং বাবা হিসেবে আরও ভালো হতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই হরমোন মানুষকে উত্তেজিত করে তোলে। ফলে হরমোনটির মাত্রা কিছুটা কমে গেলে মানুষ আরও ধৈর্যশীল, শান্ত ও স্থির প্রকৃতির হয়ে ওঠে। সন্তান লালন-পালন করতে এই গুণ অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুন
Advertisement
আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী লি গেটলার ফিলিপাইনে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এ বিষয়ে গবেষণা চালান। ২১-৬৪ বছর বয়সী ৬২৪ জন অবিবাহিত ও নিঃসন্তান পুরুষের উপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
গবেষণা চলার সময় ৪৬৫ জন পুরুষ বিয়ে করেন সন্তানের বাবা হন। এরপরই তাদের মধ্যে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেন গবেষকরা।
দেখা যায়, অবিবাহিতদের তুলনায় বিবাহিত ও বাবা হয়েছেন এমন পুরুষদের মধ্যে গড়ে ৩৪ শতাংশ টেস্টোস্টেরন হরমোন কম। গবেষণার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জানা যায়, একজন পুরুষের প্রথম সন্তানের জন্মের ঠিক আগে ও ঠিক পরে এই হরমোনের মাত্রায় তারতম্য ঘটে।
এমনকি এই হরমোন কমে গেলে অক্সিটোসিন নামক অন্য আরেকটি হরমোনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যাকে লাভ বা ভালোবাসার হরমোনও বলা হয়। এই হরমোন বেড়ে গেলে মানুষ খুশি অনুভব করেন। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি গবেষণা জানাচ্ছে, শিশুর সঙ্গে খেললে বাবার মধ্যে এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়।
শিশুর সঙ্গে খেলা করা ও তাকে জড়িয়ে ধরার কারণে বাবার দেহে যে ডোপামিন ও অক্সিটোসিনের নিঃসৃত হয় তার ফলে দেহে যে ধরনের পরিবর্তন ঘটে তাতে বাবা-সন্তান দুজনেই লাভবান হয়।
বাবার মতো একই রাসায়নিকের নিঃসরণ ঘটে শিশুর শরীরেও। আর শিশু বড় হওয়ার সময় তাদের দেহে সবচেয়ে বেশি অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়, ফলে বাবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তখন আরো বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস/বিবিসি
জেএমএস/এমএস