দেশজুড়ে

টুং-টাং শব্দে মুখর ফেনীর কামারপাড়া

সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও ঈদুল আজহা সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে কামারদের। দম ফেলার জো নেই তাদের। হাতুড়ির টুং-টাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। প্রতি বছর এ সময়ের জন্যই অপেক্ষা করে ফেনী জেলার কয়েক’শ কামার পরিবার।

Advertisement

জেলার বেশ কয়েকটি কামারশালায় সরেজমিন দেখা যায়, চারদিকে শুধুই টুং-টাং শব্দ। কোরবানির পশু কাটার কাজে ব্যবহার করা দা-বঁটি, ছুরি-চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি ও মেরামতে ব্যস্ত তারা। আগুনের শিখায় তাপ দেওয়া হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামাদি। ঈদের চাহিদা পূরণ করতে নতুনের পাশাপাশি আবার পুরনো সরঞ্জামের শানের কাজও চলছে। ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের এ ব্যস্ত কর্মযজ্ঞ।

কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর ঈদ ঘিরে পশু কোরবানির ছুরি আকার ও মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৩০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। পশুর চামড়া ছাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত ছুরি একেকটি আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গত বছর এগুলোর দাম ছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। অন্যদিকে ভালো মানের বটি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকায়, যেগুলো গত বছর ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ওজন অনুযায়ী প্রতিটি চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৭০০ থেকে ১৩০০ টাকা।

একাধিক কামারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরের অন্য সময়গুলোর তুলনায় কোরবানির ঈদে তাদের ব্যস্ততা অনেকাংশে বাড়ে। বিশেষ করে কোরবানির এক সপ্তাহ আগে এ ব্যস্ততা বাড়ে। তারা জানায়, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কয়লার সংকট ও দামবৃদ্ধি, লোহার দামবৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট এবং আধুনিকায়নের ফলে বিলুপ্তির পথে এ কামার শিল্প। তাও এ সময়টাতে আয় একটু বাড়ে যা দিয়ে কোনোমতে চলে যায়।

Advertisement

কামার রাহুল দাস জানান, ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে প্রচুর ব্যস্ততা বাড়ে। ক্রেতারা কেউ দা-ছুরি, বঁটি তৈরি করার জন্য অর্ডার দিতে আসে আবার অনেক ক্রেতা আসে পুরোনো দা-চুরিতে শান দিতে। সব মিলিয়ে অন্য সময়ের তুলনায় ঈদের সময়টাতে বেশ ব্যস্ত সময় কাটে।

পলাশ কর্মকার নামের আরেক কামার বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গ্রাহকের অর্ডার সামাল দিতে বাড়তি মুজুর নিয়েছি। কোরবানির আয়ে আমাদের সারাবছর চলতে হয় বিধায় ক্রেতাদের চাপ সামাল দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এরই মধ্যে বেশকিছু গ্রাহক থেকে দা, বটি, ছুরি বানানোর অর্ডার পেয়েছি এবং অর্ডার দেওয়া দা, ছুরি এরই মধ্যে তৈরি করা হয়ে গেছে।

সুকেন কর্মকার নামে আরেক কামার শিল্পী জানান, আধুনিক রেডিমেড চুরি, চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামের চাহিদার বৃদ্ধির কারণে তাদের তৈরি লোহার জিনিসপত্রের চাহিদা আগের তুলনায় অনেকাংশে কমে গেছে। তাও ঈদের সময়টাতে তাদের তৈরি এসব সরঞ্জামের চাহিদা একটু বাড়ে বলে জানায় এ কামার।

অর্ডার করা বঁটি নিতে আসার ফাতেমা আক্তার জানান, পশুর মাংস টুকরা করার জন্য বঁটির প্রয়োজন হয়। যার কারণে ঈদের এক সপ্তাহ আগে অর্ডার দিয়ে গেছি যা আজ তৈরি করে দিয়েছে। বঁটি তৈরি করতে ৭০০ টাকার মতো খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি।

Advertisement

ছুরিতে শান দিতে আসা শহিদুল আলম বলেন, আগের বছরের কোরবানিতে ব্যবহার করা ছুরি ও বঁটি শান দিতে এসেছি। এ বছর এসব সরঞ্জামের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কারণে পুরোনোগুলো শান দিয়ে ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/এমআইএইচএস/এমএস