ফিচার

‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে’

বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য দেখার সময় হচ্ছে বর্ষা। আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। হঠাৎ বর্ষা যেমন আনন্দের, বর্ষার নির্মম নৃত্য তেমনই হঠাৎ বিষাদে ভরিয়ে তোলে জনপদ। বাংলা ক্যালেন্ডারে আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস নিয়ে বর্ষাকাল। তপ্ত ধরণীর বুকে বৃষ্টি এই ঋতু প্রকৃতির রূপও বদলে দেয়।

Advertisement

এই ঋতুতে নদ-নদীতে যেমন নতুন করে প্রাণ আসে, তেমনি গাছে ফোটে কদম, বকুল নানা রকমের ফুল। কদমকে তো আষাঢ়ের প্রতীকই ভাবা হয়। বাংলা সাহিত্যে বর্ষা যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। রবি ঠাকুরের ভাষায়- ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে/আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে/এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি/ পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি/ নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে’।

বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল প্রেমিকার জন্য প্রেমিকের শ্রেষ্ঠ উপহার। শুধু রবিঠাকুর নন, মহাকবি কালিদাসের মহাকাব্য ‘মেঘদূত’ থেকে হুমায়ূন আহমেদ সবাই বর্ষাকে বরণ করেছেন ভিন্নভাবে। তাদের লেখায় ফুটে উঠেছে বর্ষাপ্রেম, সৌন্দর্য্য। সবাই তাদের লেখার মাধ্যমে বর্ষাকে দেখেছে ভিন্ন চোখে। যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য বারবার মুগ্ধ করেছে কবি মনকে, প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে বারংবার।

আরও পড়ুন

Advertisement

বিশ্বজুড়ে প্রতি সেকেন্ডে ২৫ হাজার কাপ চা পান করেন মানুষ

মেঘদূত ছাড়াও বৈষ্ণব পদাবলীতেও বিরহের সঙ্গে বর্ষার একটি নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করেছেন পদকর্তারা। পদাবলী সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ মহাজন বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস আর বিহারীলালের কবিতায় বর্ষা এসেছে একাধিকবার। তাদের বিরহের কবিতায় ও গানে বর্ষা ও বিরহ একাকার হয়ে গেছে।

আষাঢ় সাজে নানা রূপে। নবধারার জলে স্নান করে শীতল হওয়ার আহবান এখন প্রকৃতিতে। নতুন সুরের বার্তা নিয়ে সবুজের সমারোহে আসে এ বর্ষা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নবযৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা...’।

কবির কবিতায়, শিল্পীর সুরে-গানে, চারুশিল্পীর তুলির আঁচড়ে নকশীকাঁথার ফোঁড়ে ফোঁড়ে বর্ষার অপরূপ রূপ বর্ণনা, স্থিতি ও ব্যাপ্তি মূর্ত ও চিরকালীন হয়ে আছে। মধ্যযুগের কবি জয়দেবের কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয়েছে—‘মেঘৈর্মে দুরম্বরং, বণভুব শ্যামাস্ত মালদ্রুমৈ।’ বৈষ্ণব কবির ভাষায়—‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে মেঘমাশ্লিষ্ট সানুং’।

বাঙালির বর্ষবরণের ঐতিহ্য কিন্তু অনেক পুরোনো। আষাঢ় মাসের এক তারিখ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজন করে বর্ষা বরণ অনুষ্ঠান। বর্ষা বরণের এ উৎসব আমাদের সংস্কৃতিতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। বর্ষা বিষয়ক নাচ-গান, কবিতা, নাটিকা সব মিলিয়ে বর্ষাকে কেন্দ্র করে নানান আয়োজন করা হয়।

Advertisement

আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। উদযাপন করতে পারেন আপনিও। সঙ্গীর জন্য এক গুচ্ছ কদম কিংবা কেয়া নিয়ে হাজির হোন। বৃষ্টি হলে তো ষোল আনা পূর্ণ। বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন মনের আনন্দে। সঙ্গীর খোঁপায় না হয় গুঁজে দিন একটা বেলি ফুলের মালা। চায়ের সঙ্গে বৃষ্টির পানি কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে নিন। বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠুন আড্ডায়।

কিংবা একাও উদযাপন করতে পারেন দিনটি নিজের মতো। ঘরের জানালার পাশটায় এক কাপ চা নিয়ে বসুন। বই পড়তে পারেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজাতে পারেন কবিগুরুর গান ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী/উড়ে চলে দিগ্ দিগন্তের পানে/নিঃসীম শূন্যে শ্রাবণবর্ষণসঙ্গীতে/রিমঝিম রিমঝিম রিমঝিম...। ’ কিংবা ‘শাওন আসিল ফিরে সে ফিরে এলো না/বরষা ফুরায়ে গেল আশা তবু গেল না...। অন্য গানে- শাওন রাতে যদি/মনে পড়ে মোরে প্রিয়...। এভাবে অসংখ্য গান/কবিতার জন্ম হয় বর্ষায়।

আরও পড়ুন

আধুনিক সভ্যতায় আলুর অবদান বাংলায় বিস্কুট ছিল নিষিদ্ধ খাবার

কেএসকে/এএসএম