জাতীয়

ঈদের বাকি দুদিন, বেচাবিক্রিতে খুশি নন খামারি-ব্যাপারীরা

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী আগামী সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপন করা হবে। সেই হিসাবে কোরবানির ঈদের বাকি মাত্র দুদিন। তাই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষ।

Advertisement

এদিকে, আজ শুক্রবার (১৪ জুন) থেকে শুরু হচ্ছে টানা পাঁচদিনের সরকারি ছুটি। আগামী ১৮ জুন পর্যন্ত ছুটি কাটাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। যে কারণে আজ থেকে কোরবানির পশুর হাট জমবে বলে ধারণা করেছিলেন রাজধানীর মেরাদিয়া পশুর হাটের ব্যাপারীরা।

শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে মেরাদিয়া হাটে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় থাকলেও কেনাবেচা কম। যদিও আগের থেকে ক্রেতা বেড়েছে। তারপরও বেচাবিক্রিতে খুশি নয় খামারি ও ব্যাপারীরা।

বিকেল পাঁচটায় সরেজমিনে দেখা যায়, বিক্রেতার হাঁকডাক জমেছে, তবে ক্রেতা কম। যারা এসেছেন অধিকাংশ দরদাম যাচাই-বাছাই করে চলে যাচ্ছেন। হাসিল ঘরেও খুব বেশি চাপ নেই। যদিও গত বুধবার-বৃহস্পতিবারের তুলনায় হাট ক্রেতা বেড়েছে।

Advertisement

খামারি ও ব্যাপারীরা বলছেন, ক্রেতারা দাম কম বলছে। বেশিরভাগ এসেছেন ঘুরে দেখতে, কিনবেন আরও পরে।

ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের থেকে গরুর দাম বেশি। ৮০ থেকে দেড় লাখ টাকার প্রতিটি গরুর দাম প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে।এ হাটে মাঝারি আকারের দেশি গরু-ছাগল বেশি উঠেছে।

পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা থেকে ২৩টি গরু নিয়ে এসেছেন এনামুল হক। যেগুলো কৃষক–খামারিদের থেকে কিনেছেন তিনি। গত দুদিনে একটি গরু বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা বেশি। তবে গোখাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরু বিক্রি করে তাদের লোকসানই হচ্ছে। যেসব কৃষক ও খামারি দুই-এক সপ্তাহ আগে আমাদের মতো ব্যাপারীদের কাছে বাড়ি থেকেই গরু বিক্রি করে দিয়েছেন, তারা কিছুটা ভালো দাম পেয়েছেন। এখন বাজার কমে যাচ্ছে।

পাশে ৪২টি গরু নিয়ে এসেছে রয়েল এগ্রো। এরমধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় শাহীওয়াল জাতের ১০ মণ ওজনের একটি গরু। দাম চাওয়া হচ্ছে সাড়ে চার লাখ। রয়েল এগ্রোর খামারি শুভ বলেন, বড় গরুর বিক্রি এবারও কম। গত দুদিন আর আজ বিকেল পর্যন্ত পাঁচটি গরু বিক্রি হয়েছে। এর সবগুলো ২ লাখ টাকার নিচে।

Advertisement

এবার বড় জাতের গরুগুলোর মধ্যে শাহীওয়াল জাতের গরুর প্রাধান্য বেশি হাটে। ৫ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত নানা সাইজের এসব গরু নজর কাড়ছে ক্রেতার।

সাড়ে আট মণ ওজনের একটি গরু নিয়ে আসা হালিম উদ্দিন বলেন, গ্রামে আড়াই লাখ টাকা ব্যাপারী বলেছিল। এখন পর্যন্ত হাটে কেউ এ দাম বলেনি। গত রোজার মধ্যে বিক্রি করলে আরও ভালো দাম পেতাম। এক লাখ ২৫ হাজার টাকায় এ গরুর বাছুর কিনেছেন তিনি। এরমধ্যে দুবছর লালনপালন করেছেন। ক্রেতারা যে দাম বলছেন তাতে বিক্রি করলে লোকসান হবে।

জামালপুরের ব্যাপারী মনি লাল বলেন, ১১টি গরু এনে তিনটি বিক্রি করে দিয়েছি। তেমন দাম পাইনি। চার-পাঁচ মণের গরুগুলো এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দাম আরও ১০-১৫ হাজার টাকা বেশি হলে পোষাতো।

বনশ্রী সি ব্লকের বাসিন্দা মোজ্জাম্মেল হক বলেন, গত বছরের চেয়ে প্রতিটি গরু ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি মনে হচ্ছে। দুটি গরু ৩ লাখ টাকার মধ্যে কিনতে চেয়েও পারছি না। কাল-পরশু আবারও কেনার চেষ্টা করবো।

হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি শাহ ফারুক বলেন, আজ যতটা হাট জমবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, ততটা বিক্রি হয়নি। গত দুদিনে একশো গরু বিক্রি হয়নি। আজ ৫০০ থেকে এক হাজার গরু বিক্রি হবে বলে ধারণা করছি।

এদিকে, ছাগলের দাম গত বছরের মতো বলে মনে করছেন ক্রেতারা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের খাসি ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মাংস প্রায় ১ হাজার থেকে ১১শ টাকা দর ধরে দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা।

এনএইচ/এমএএইচ/এএসএম