স্বাস্থ্য

রক্তদানে সেঞ্চুরি পার করতে চান নাবিদ

রক্তদান একটি মহৎ কাজ। রক্তই বাঁচিয়ে রাখে ব্লাড ক্যানসার কিংবা হিমোফিলিয়া আক্রান্তদের। এসব রোগীকে প্রতি মাসে কিংবা কিছুদিন পরপরই রক্ত দিতে হয়। ব্লাড ক্যানসার কিংবা হিমোফিলিয়াসহ যে কোনো রোগীর রক্তের প্রয়োজন মেটাতে সদা প্রস্তুত থাকেন রক্তদানকারী সুপারহিরোরা। তেমনি একজন সুপারহিরো নূর সাকলাঈন নাবিদ। নাবিদ ২০০৭ থেকে চার মাস অন্তর রক্তদান করে যাচ্ছেন। ২০২৩ সালের শেষ দিকে তিনি রক্তদানে অর্ধশতক পূরণ করেন। রক্তদানে সেঞ্চুরি পার করতে চান নাবিদ।

Advertisement

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস আজ। দিনটি উপলক্ষে রক্তদানের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন নূর সাকলাঈন নাবিদ। দীর্ঘ আলোচনায় তুলে ধরেন গুরুত্বপূর্ণ মতামত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুল্লাহ আল মিরাজ।

জাগো নিউজ: রক্তদানে উৎসাহী হওয়ার পেছনে কারো অনুপ্রেরণা ছিল? নাবিদ: আল্লাহ কাছে শুকরিয়া, রক্তদানের মতো মহৎ কাজের সুযোগ দিয়েছেন। ছোটবেলা থেকে পরিবারের সবাইকে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে দেখেছি। চার ভাই-বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। ভাই-বোনদের রক্তদান করতে দেখে আগ্রহ তৈরি হয়। তাদের দেখেই পরিকল্পনা করি বয়স ১৮ পার হলেই রক্তদান করবো, ইনশাল্লাহ। তাই ১৯ তম জন্মদিন থেকে রক্তদান শুরু করেছি। সম্প্রতি বিয়ে করেছি। বিয়ের পর স্ত্রীকেও রক্তদান করতে নিয়ে গেছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আরও পড়ুন

রক্তদানের চেয়ে বড় দান আর নেই: প্রাণ গোপাল

জাগো নিউজ: রক্তদান করতে পেরে আপনার কেমন লাগে? নাবিদ: আমি কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অসুস্থদের জন্য রক্তদান করে থাকি। আসলে এ অনুভূতিগুলো ব্যাখ্যা করার মতো নয়। আমি সবসময় চেষ্টা করি রক্তের জন্য যেন কোয়ান্টাম থেকে আমাকে ফোন না করতে হয়। আলহামদুলিল্লাহ ঢাকায় থাকলে কখনো মিস হয়নি অর্থাৎ সময় মতোই দিয়েছি।

Advertisement

জাগো নিউজ: বিয়ের পরে রক্তদানে বাধা আসেনি?নাবিদ: দুই বছর হলো বিয়ে করেছি। বিয়ের পরই স্ত্রীকে বিষয়টি জানাই। তখন থেকে আমরা একসঙ্গে রক্ত দিই। এরই মধ্যে আমার স্ত্রীও তিনবার রক্ত দিয়েছেন।

জাগো নিউজ: রক্তদানে কখনো বিরতি দিয়েছেন?নাবিদ: ভাবতে অবাক লাগছে, ভালোও লাগছে টানা ১৮ বছর রক্ত দিতে পেরেছি। এর মাঝে শুধু একবার একটা মেজর সার্জারির জন্য বছরখানেক রক্ত দিতে পারিনি। তখন হাসপাতালে দেখেছি রক্তের জন্য মানুষের হাহাকার ও ছোটাছুটি। সার্জারির আগে চিকিৎসক বলেছিলেন চার/পাঁচ ব্যাগ রক্ত ম্যানেজ করে রাখতে। তবে, রক্ত ম্যানেজ করতে আমাকে কোনো বেগ পেতে হয়নি। ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে সার্জারিতে কোনো রক্ত লাগেনি।আরও পড়ুন

৯৬ লিটার রক্তদান করে বিশ্বরেকর্ড

জাগো নিউজ: রক্তগ্রহীতাদের সঙ্গে কোনো কষ্টের অভিজ্ঞতা আছে?নাবিদ: কাজের প্রয়োজনে বেশ কয়েকজন থ্যালাসেমিয়া এবং হিমোফিলিয়া রোগীদের সঙ্গে সময় কাটাতে হয়েছিল বেশকিছু দিন। কথা বলার সময় কষ্টের কথা বলতে গিয়ে প্রত্যেকেই কেঁদেছেন। আমরা যারা রক্তদাতা, আমাদের প্রতি তাদের যে কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধাবোধ ও দোয়া সেটা অন্য কোনো কিছুর বিনিময়ে পাওয়া যাবে না। তখন কয়েকজন রোগীর বাসায় গিয়েছিলাম, তাদের আপ্যায়নের বহর দেখে হতবাক হয়েছি। কয়েকজন নিয়মিত আমাকে ফোন করেন, খোঁজখবর নেন। কেন নেন? আমার রক্তটাই তারা পাচ্ছেন বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। তারপরও তারা নিয়মিত খোঁজখবর নেন, কারণ আমি একজন রক্তদাতা।

জাগো নিউজ: কতবার রক্তদানের ইচ্ছা আছে?নাবিদ: হিসাব করে দেখেছি ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত একজন মানুষ রক্ত দিতে পারেন। তার মানে টানা ৪২ বছর রক্ত দেওয়া যায়। বছরে তিনবার হলে ৪২ বছরে ১২৬ বার রক্ত দেওয়া যায়। ইনশাআল্লাহ আমিও রক্তদানে সেঞ্চুরি পার করতে চাই। সর্বোচ্চ রক্ত দেওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে চাই।আরও পড়ুন

Advertisement

কুয়েতে বাংলাদেশি তরুণদের স্বেচ্ছায় রক্তদান

এসময় তিনি তার মা এবং বাবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, রক্তদানের মতো ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাই-বোনের কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভালো কাজে সহযোগিতার জন্য স্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি এত ভালো একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানান।

জাগো নিউজ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।নাবিদ: জাগো নিউজ ও আপনাকে ধন্যবাদ।

এএএম/এমএএইচ/এএসএম