জাতীয়

হরিজনদের উচ্ছেদে ডিএসসিসির অভিযানের প্রতিবাদে ঢাকায় নাগরিক সমাবেশ

পুরান ঢাকার বংশালের আগাসাদেক রোডের পাশে হরিজন সম্প্রদায়ের মিরনজিল্লা সিটি কলোনিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তাদের উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদ ও হরিজন সম্প্রদায়ের সমর্থনে নাগরিক সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

Advertisement

শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেল ৪টায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্বে করেন ড. মো. হারুন ওর রশীদ।

সংহতি সমাবেশে বক্তারা বলেন, মিরনজিল্লা কলোনিতে শত শত বছর ধরে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে আসছে। কাঁচাবাজার বানানোর নাম করে হঠাৎ তাদের উচ্ছেদের পেছনে সিটি করপোরেশনের অন্যকোনো উদ্দেশ্য আছে সেটা খুব ভালোভাবেই বোঝা যায়। আপাতত আদালত এক মাসের জন্য উচ্ছেদ স্থগিত করেছে। কিন্তু এটা কোনো সমাধান নয়। হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষজনকে পুনর্বাসন না করে তাদের বসবাসের জায়গায় কোনো কাঁচাবাজার হতে দেওয়া যাবে না। আমরা সবাই মিলে এর প্রতিবাদ করব।

নাগরিক সংহতি সমাবেশে আইনজীবী উৎপল বিশ্বাস বলেন, হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের সংকট এর থেকেও আরও গভীরে। এরা যখন কয়েকশ বছর আগে এখানে আসে তখন এদের দুটি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। একটি হচ্ছে বংশানুক্রমে তারা এখানে বসবাসের নিশ্চয়তা পাবে। আরেকটি হচ্ছে তারা বংশানুক্রমে এই পেশায় কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাবে। সিটি করপোরেশন হবার পরে প্রথম তাদের চতুর্থ শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়। যেটি এখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে এখনও আছে। কিন্তু ঢাকায় সিটি করপোরেশনে তাদের এই মর্যাদা হরণ করা হয়েছে।

Advertisement

তিনি বলেন, তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, এটি হয়তো লিখিত না। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতির কারণে তারা যে জায়গায় বসবাস করছে বংশানুক্রমে সেটি বৈধ। এই জায়গাটি তাদের স্বাভাবিক অধিকার। এই দেশে তো আমরা জানি, এখনো আদিবাসীদের অনেক জায়গা তাদের নামে রেকর্ড হয় না। তাদের জমি বিক্রি হয় না। ঠিক সেই রকম একটি পরিবেশ এই সম্প্রদায়ের সাথেও আছে।

শুধু বাসস্থানের বিষয় না, তাদের চাকরিরও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাদের চাকরির এই অনিশ্চয়তা বরও বাড়বে। বাড়বে এই কারণে যে, এখানে এখন আউটসোর্সিং শুরু হয়ে গেছে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যখন নিয়োগ হবে তখন তারা আর সিটি করপোরেশন কেন, কোনো প্রতিষ্ঠানেরই কর্মচারী থাকবে না।

শ্রমিক আন্দোলনের আহ্বায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, আগে সরকারের যে ভূমি আইনটা ছিল, সেটা খুব সম্প্রতি পরিবর্তন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, হাজার হাজার বছর ধরেও যদি কেউ দখল ধরে রাখে। তারপরও যদি তার বৈধ কাগজপত্র না থাকে তাহলেও তাকে উচ্ছেদ করা যাবে। আজকে এটার যে ভয়াবহ অবস্থা সেটা আমরা এই মিরনজিল্লা সিটি কলোনিতে দেখতে পাচ্ছি।

তিনি বলেন, কমপক্ষে চারশো বছর ধরে তারা এখানে বসবাস করছেন। মিরন বাঈ নামের একজন ছিলেন, তিনি তাদের এটা দান করেছিলেন, সুইপার কলোনি হিসেবে। সেই দান করা সম্পত্তিটা কোনো রাষ্ট্রের উচিত নয়, যেন-তেনভাবে উচ্ছেদ করে দেওয়া। এর বিরুদ্ধে যেকোনো প্রতিরোধ হলে শ্রমিক আন্দোলন হরিজন সম্প্রদায়ের পাশে থাকবে।

Advertisement

এছাড়াও সমাবেশে বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী এবং শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচএ/এমআরএম/এএসএম