পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানীর গাবতলী হাটে কোরবানির পশু আসা শুরু হয়েছে। এখনো বেচাকেনা সেভাবে জমে ওঠেনি। কিছুসংখ্যক ক্রেতা হাটে ঘুরে ঘুরে গরু, ছাগল, মহিষসহ বিভিন্ন কোরবানির পশু দেখছেন এবং দাম যাচাই করে করছেন। হাটটিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারীরা। ক্রেতার অপেক্ষায় তারা।
Advertisement
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বড় ১১ টি গরু নিয়ে গাবতলী পশুর হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী বাদল। শাহীওয়াল, হলিস্টিন জাতের গরুগুলোর দাম হাঁকছেন ৩ থেকে ১১ লাখ টাকা। তবে তিনদিনে একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি তিনি। একই অবস্থা কুষ্টিয়া থেকে আসা আবদুল্লার৷ তিনি এনেছেন ৬ টি গরু। তিনদিনে বিক্রি হয়নি একটিও।
আর মাত্র কদিন বাকি কোরবানির ঈদের। তবে এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি রাজধানীর সবচেয়ে বড় গাবতলী পশুর হাট। কিছু কিছুসংখ্যক ক্রেতা হাটে এলেও দর যাচাই করে ফিরে যাচ্ছেন।
বিক্রেতারা বলছেন, সবশেষে ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের দামের ফারাক থাকছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর ক্রেতাদের অভিযোগ, বিক্রেতারা ছোট গরুর দাম হাঁকছেন বেশি।
Advertisement
শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুরে গাবতলীর পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ব্যাপারীরা পশু নিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন। এখনো ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশু আসছে।
কুষ্টিয়া থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ বলেন, তিনদিন আগে গরু নিয়ে গাবতলীর হাটে আসছি। ৬টি গরু এনেছি। এখনো একটাও বিক্রি হয়নি। সবাই দাম শুনে চলে যায়।
মাঝারি আকারের একটি দেশীয় গরু দেখিয়ে তিনি বলেন, এটার দাম চেয়েছি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ক্রেতারা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বলছেন। ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় একজন কিনবেন বললো। পরে বলে দাঁত ওঠেনি। না কিনেই চলে গেলো।
গরু ব্যবসায়ী বাদল বলেন, ঢাকার মানুষ এত তাড়াতাড়ি গরু কেনেন না। তাদের তো গরু রাখার জায়গা নেই। আশা করছি, আজ রাত থেকে বেচাকেনা শুরু হবে।
Advertisement
হাটে এ ব্যবসায়ী বিরাট আকারের ১১টি গরু এনেছেন। আকার ভেদে যেগুলোর দাম তিনি চাইছেন ৩ থেকে ১২ লাখ টাকা। তিনি বলেন, বড় গরুরও ক্রেতা আছে। আশা করছি, গরুগুলোর ভালো দাম পাবো।
বড় গরুর দামে বড় তফাৎমাঝারি আকারের গরু ক্রেতারা ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা কম বললেও, বড় গরুর দাম ২ থেকে ৩ লাখ টাকা কম বলছেন ক্রেতারা। এমন অভিযোগ বিক্রেতাদের। সিরাজগঞ্জ থেকে আসা ঠান্ডু ব্যাপারী বলেন, আমি হলিস্টিন জাতের দুইটা গরু এনেছি। একটার দাম চাইছি ২২ লাখ, আরেকটার সাড়ে ১০ লাখ। বিক্রেতারা ১/২ লাখ টাকা কম বলছেন। বড় গরু লালন-পালন এখন বিপদ।
গরুর দাম এত বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশি গরু পালনে অনেক খরচ। গরুর পেছনে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ আছে। ভুট্টা, ভুসির অনেক দাম। সবমিলিয়ে ভালো দাম পাবো কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
এবারের গাবতলীর হাটে মহিষ, ছাগল, ভেড়ার উপস্থিতি বেশি দেখা যাচ্ছে। হাটে তিনটি গোলাপি মহিষের পাশে বিশ্রাম নিতে দেখা যায় সিরাজ হোসেনকে। বাজার কেমন জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা সিরাজ ব্যাপারী বলেন, হাটে ক্রেতা নেই। বাজার জমেনি। ক্রেতা এলে বাজার বোঝা যাবে।
পাবনা থেকে ৩টি মহিষ নিয়ে এসেছেন আওয়াল ব্যাপারী। শুক্রবার দুপুরের মধ্যে তার দুটো মহিষ বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, দুইটা ৩ লাখ, আরেকটা এক লাখ ২০ হাজারে বিক্রি করেছি। আরেকটা আছে ওইটা ২ লাখ ১০ হাজার টাকা বলছি। ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা হলে ছেড়ে দেবো।
এবারের হাটে গরুর দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার পশুর দাম গতবারের মতই। ক্রেতারা গতবারের মতই দাম বলছেন। কিন্তু আমাদের তো গরু পালতে খরচ বেড়েছে। তাই এবার লাভ তেমন একটা হবে না। বাজার কেমন হয়, বুঝতে পারছি না। তাই সামান্য লাভেই বিক্রি করেছি।
ছাগল কিনতে এসেছেন পেশাজীবী জাহিদ রহমান। তিনি বলেন, বড় ছাগল খুঁজেছি। দু-একটা পেয়েছি। দামে মিলছে না, মাঝারি আকারের ছাগলের দাম হাঁকছে ৪০-৫০ হাজার টাকা।
আতিয়ার নামে এক ছাগল ব্যবসায়ী বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে ১২ টি ছাগল নিয়ে আসছি। আমার এখানে সাড়ে ৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার ছাগল আছে। দুইটা বিক্রি হয়েছে।
কথা হয় গ্রিন রোড থেকে আসা কামাল নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, সকালে এসেছি। প্রচুর গরু আছে হাটে। বিক্রেতারা দামও বলছেন বেশি। যে গরুর দাম ১ লাখ ২০ হাজার হওয়ার কথা। সেটা চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
নাসির নামে আরেক ক্রেতা বলেন, একটা গরু কিনেছি ২ লাখ ১৫ হাজার টাকায়। আরেকটা কিনবো। তবে এরা এবার দাম বেশি চাচ্ছেন মনে হচ্ছে। গরুর যে দাম চাচ্ছেন সেটা অবাস্তব। ক্রেতা বাড়লে হয়তো কিছুটা কমবে।
এসএম/এমএএইচ/এএসএম