কোরবানির ঈদে সংসারে মসলার প্রয়োজন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে মাংস রান্নার জন্য পেঁয়াজ, রসুন, আদার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে লাগে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গরম মসলাও। তবে এসব পণ্যের ক্রেতাদের জন্য দুঃসংবাদ বাজারে। মসলার বাজারে খরচের বড় খড়গ লেগেছে।
Advertisement
ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় সব ধরনের মসলার দাম বাড়তি। শেষ কয়েকদিনের ব্যবধানেও দাম বেড়েছে আরেক দফা। এখন রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজ দামের দিক থেকে শতক ছুঁইছুঁই করছে। কোথাও ছুঁয়েছেও। তবে মোটা দাগে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ৮০ টাকা আর একমাস আগে ৬০ টাকা ছিল।
একইভাবে গত একসপ্তাহে রসুনের দাম ২০ টাকা বেড়ে ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় লাফ দিয়েছে আদার দাম। ৮০ টাকা বেড়েছে কেজিপ্রতি। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ২৪০-২৫০ টাকা ছিল। এছাড়া অন্যান্য গরম মসলার দামও আকাশছোঁয়া।
এমন পরিস্থিতিতে ঈদের প্রয়োজনীয় এসব মসলা কিনতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। একেবারে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা নিত্যপণ্যের দরে ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল হয়ে পড়ছেন।
Advertisement
আরও পড়ুন
ট্রেনে ৩য় দিনের ঈদযাত্রা শুরু, স্টেশনে উপচেপড়া ভিড় জুয়েলারি শিল্পের কারিগরি প্রশিক্ষণে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক ক্রেডিট কার্ডে এপ্রিলে দেশের বাইরে খরচ ৫০৭ কোটিরামপুরা বাজারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শফিউল ইসলাম বলেন, এক হাজার টাকা খরচ করেও প্রয়োজনের মসলা কিনতে পারছি না। এটা কোন সাধারণ বিষয় নয় মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য। সংসার চালাতে আমাদের নাকানি চুবানি খেতে হচ্ছে।
এদিকে, দাম বাড়ার জন্য ছোট ব্যবসায়ীরা দায় চাপাচ্ছেন আমদানিকারক ও পাইকারদের ওপর। আর আমদানিকারক ও পাইকাররা দাঁড় করাচ্ছেন বিশ্ববাজার, ডলারের দর, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও রপ্তানিকারক দেশগুলোতে উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানা অজুহাত।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, রমজানের আগে যেমনি নিত্যপণ্যের দর বাড়ালেন কৌশলী ব্যবসায়ীরা তেমনি কোরবানির আগেও সেই পথেই হাঁটলেন তারা। সুযোগ নিলেন চাহিদা বাড়ার।
Advertisement
গরম মসলার বাজারে এ বছর সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এলাচের। গত বছরের তুলনায় এখন মসলাটির দর প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। মানভেদে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬শ থেকে ৪ হাজার ২শ টাকা। গত বছর এ দর ছিল ১ হাজার ৬শ থেকে ২ হাজার ৪শ টাকা। অর্থাৎ এখন ১০০ গ্রাম খোলা এলাচ কিনতে গুনতে হচ্ছে প্রায় ৪০০ টাকা।
জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা। খুচরা নিলে প্রতি ১০০ গ্রাম ১০০ টাকা রাখা হচ্ছে। গত বছর কোরবানির আগে জিরার কেজি কেনা গেছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়।
প্রতি কেজি লবঙ্গের দাম ১ হাজার ৮০০ টাকা। ১০০ গ্রাম ২০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর ১৫০ টাকা ছিল। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম দারুচিনি ২০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা, লং ৪০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা, গোলমরিচ ১০০ টাকা, তেজপাতা ৩০ টাকা এবং কালো এলাচ ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে বেড়েছে শুকনো মরিচের দামও। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো মরিচ ৫০ টাকা এবং কেজি ধরে কিনলে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতির দাম বেড়েছে প্রায় ১৫০ টাকা।
দাম বাড়ার এই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তথ্যেও। সংস্থাটির বাজারদর অনুযায়ী, এক বছরে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রায় ১০ শতাংশ, রসুনের দাম সর্বোচ্চ ৬৯, আদার ২৩, দারুচিনি ১৯, লবঙ্গ ১১, এলাচ ৮৭ ও তেজপাতার ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরে জিরার দর না বাড়লেও এক মাসে বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।
এসব নিয়ে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, অন্যান্য মসলার দাম আমদানি খরচের হিসেবে তুলনামূলক বাড়েনি বরং কম রয়েছে। শুধু এলাচের দামটা একটু বেশি। কারণ বেশিরভাগ এলাচ আসে ভারত থেকে। সেখানে এবার গরমের কারণে উৎপাদন কম হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন ডলারের দাম বেশি। বিশ্বব্যাপী মসলার দাম বেশি। মসলা আমদানিতে পরিবহন খরচ বেড়েছে। এসব কারণে দাম বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, খুচরা বিক্রেতারা আবারও কিছুটা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। পাইকারিতে দাম তার চেয়ে কম। খুচরা ব্যবসায়রিা ২০, ৫০, ১০০ টাকার করে মসলা বিক্রি করেন, সেজন্য তারা দর কিছুটা বেশি নিচ্ছেন। তাদের ঘাটতি বেশি।
এদিকে, মসলার পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে বাড়তে দেখা গেছে সালাদের উপকরণ শসা, টমেটো ও গাজরের দাম। প্রতি কেজি শসা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা দিন আগেও ৮০ টাকা ছিল। একইভাবে বেড়ে টমেটো ১২০ টাকা, পুরাতন গাজর ৮০ টাকা ও নতুন গাজর ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। লেবু হালি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা দরে।
এদিকে, আবারও বেড়েছে ডিমের দর। বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের বাদামি রংয়ের ডিম ১৬০ থেকে ১৬৫ এবং সাদা রংয়ের ডিম ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে কিছুটা কমতির দিকে রয়েছে মুরগির বাজার। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে ঈদের আরেক প্রয়োজনে উপকরণ পোলাওয়ের চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। পোলাওয়ের চাল খোলা প্রতিকেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত চাল ১৫০ থেকে ১৫৫ বিক্রি হচ্ছে। যদিও এসব প্যাকেটে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য দেওয়া রয়েছে ১৭০-১৭৫ টাকা।
এনএইচ/এসএনআর/জিকেএস