• দুই সিটিতে নিয়োজিত থাকবে প্রায় ২০ হাজার কর্মী• এবার অস্থায়ী পশুর হাট বসছে ১৬টি• বর্জ্যগুলো প্যাকেট করে রাখতে বিতরণ করা হবে বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ
Advertisement
প্রতি বছর ঈদুল আজহায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ থাকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ। এবার ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন। আর ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এখন এ ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
কোরবানির বর্জ্যের পাশাপাশি ঢাকার পশুর হাটের বর্জ্যও যথাসময়ে অপসারণ বা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সংস্থা দুটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু হবে। তবে ঢাকায় অনেকেই নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই দেয় না। আবার অনেকে ঈদের দ্বিতীয় দিন পশু জবাই করেন। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণে কিছুটা বেগ পেতে হয়।
সিটি করপোরেশনের এমন প্রস্তুতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নগরের বাসিন্দারা। বুধবার (১৩ জুন) ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হাটে কোরবানির পশু কিনতে গিয়ে ফার্মগেটের মণিপুরি পাড়ার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন ও আসিফ মাহবুব জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে কোরবানির পশুর বর্জ্য এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সড়কে পড়ে থাকতো। দুর্গন্ধে রাস্তা-ঘাটে চলাচল করা যেত না। এখন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যে ঘোষণা দিয়েছে, সে অনুযায়ী কাজ হলে নগরবাসী খুশি হবেন।’
Advertisement
এবার ঈদে ৬ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর-কর্মকর্তারাও মাঠে সার্বক্ষণিক কাজ করবেন। আমি নিজে মাঠে থাকবো। জনগণকে অনুরোধ করছি যত্রতত্র কোরবানির বর্জ্য ফেলবেন না।- মেয়র আতিকুল ইসলাম
আগামী ১৭ জুন দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে ডিএনসিসি এলাকায় ৬টি ও ডিএসসিসি এলাকায় ১০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। এর বাইরে ডিএসসিসির সারুলিয়ায় পশুর হাট ও ডিএনসিসির গাবতলীতে স্থায়ী হাট রয়েছে। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় আনুমানিক কতসংখ্যক পশু জবাই করা হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি জানাতে পারেনি।
ডিএসসিসির প্রস্তুতিডিএসসিসিতে মোট ওয়ার্ড ৭৫টি। আয়তন ১০৯ দশমিক ২৫১ বর্গকিলোমিটার। ডিএসসিসির জনসংযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, এবার ডিএসসিসির ওই ৭৫টি ওয়ার্ডে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে তাদের ৯ হাজার ৪৯৭ জন কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে নিজস্ব জনবল চার হাজার ৯৯৭ জন, প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারের (পিসিএসপি) চার হাজার ৫০০ জন (প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৬০ জন করে) দায়িত্ব পালন করবেন।
আরও পড়ুন
Advertisement
পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণে ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ৪৬টি কম্পেক্টর, ৪৭টি কনটেইনার ক্যারিয়ার, ২৪টি পে-লোডার, ১২টি টায়ার ডোজার, আটটি স্কিড লোডার, চারটি ব্যাক হো লোডার, নয়টি পানির গাড়ি, দুটি বুলডোজার, আটটি স্কেভেটর, তিনটি গাড়িবাহী এয়ার কম্প্রেসার, দুটি ফর্ক লিফট, দুটি হাইড্রলিক ক্রেন, দুটি লং ট্রলি, দুটি প্রাইম মুভার, একটি রেকার ও একটি জেড অ্যান্ড সাকার। এছাড়া পিসিএসপির ৭৫টি ওয়ার্ডে ১৫০টি মিনি ট্রাক এবং সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকিতে নিয়োজিত থাকবে আরও ৩০টি গাড়ি। সব মিলিয়ে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে ৫৬০টি যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত থাকবে।
এর বাইরে ডিএসসিসির ১১টি পশুর হাটে ৭৭০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করবেন। হাটের বর্জ্য অপসারণে ৫৭টি ডাম্প ট্রাক, ১২টি পে-লোডার ও ১১টি টায়ার ডোজারের ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি হাটে আলাদা আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থাকবে। সংস্থার সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের হাটের আইন-শৃঙ্খলা তদারকির জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োজিত করা হয়েছে। ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী এবং বিজিবির কাছ থেকে ১৪টি পে-লোডার, ডাম্প ট্রাক, টায়ার ডোজার ও পানির গাড়ি নেওয়া হয়েছিল। এবার করপোরেশনের সক্ষমতা বাড়ায় কোনো বাহিনীর কাছ থেকে কোনো যান-যন্ত্রপাতি নেওয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘বর্জ্য অপসারণের পাশাপাশি যেসব জায়গায় পশু কোরবানি করা হবে, সেখানে ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার, ২২২ গ্যালন স্যাভলন ছিটানো হবে। আর বর্জ্যগুলো প্যাকেট করে রাখতে এক লাখ ৪০ হাজার বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ বিতরণ করা হবে।’
বুধবার (১৩ জুন) জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন করেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এসময় তিনি কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দেন। এছাড়া ঈদের দ্বিতীয় দিনের মধ্যে কোরবানি শেষ করার আহ্বান জানান মেয়র।
ডিএনসিসির প্রস্তুতি১৯৬ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটার আয়তন বা এলাকা নিয়ে ডিএনসিসি গঠিত। এখন সংস্থটির ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৪টি। ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, এবার ডিএনসিসির ২৮টি ওয়ার্ডে নিজস্ব দুই হাজার ৩৯৪ জন জনবল কোরবানির বর্জ্য অপসারণে কাজ করবে। বাকি ২৬টি ওয়ার্ডে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুই হাজার ৩২৩ জন, ভ্যান সার্ভিসকর্মী চার হাজার ২০০ জন, পিকআপে নিয়োজিত ৪২০ জন কাজ করবেন।
ওয়ার্ড থেকে বর্জ্য আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে নেওয়ার জন্য ৮৫টি ডাম্প ট্রাক, ২১টি পে-লোডার, ১৮টি পানির গাড়ি, দুটি টায়ার ডোজার, পাঁচটি স্কিড লোডার, ১৪০টি পিকআপ, ৪৫টি কনটেইনার ক্যারিয়ার, ১২১টি কম্পোক্টর, ৪৩টি খোলা ট্রাক, আটটি আধুনিক কম্প্যাক্টর ট্রাক এবং ৩২টি ডাম্প ট্রাক ব্যবহার করা হবে। আর বর্জ্য প্যাকেট করতে ৯ লাখ ৪০ হাজার পলিব্যাগ, এক লাখ বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ বিতরণ করা হবে। একই সময় দুই হাজার ৬৮০ বস্তা ব্লিচিং পাউডার (২৫ কেজি বস্তা), ৯০০ ক্যান স্যাভলন (প্রতি ক্যান ৫ লিটার), সাত হাজার টুকরি, এক হাজার ২৫০ লিটার ফিনাইল ব্যবহার হবে।
ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর ঈদুল আজহায় তিন দিনে তিন হাজার ৯৩১ ট্রিপ বর্জ্য অপসারণ করা হয়। এর ওজন ছিল ১৯ হাজার ৬৪৪ টন। যার ধারাবাহিকতায় এ বছর বর্জ্যের পরিমাণ আরও বাড়বে। তাই ঈদের দিন আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে যাতায়াতের রাস্তা যানজটমুক্ত রাখার বিষয়ে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর ঢাকা উত্তর মহানগরীর কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণের জন্য নগর ভবনে অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হবে। কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণে অন্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে।’
বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার ঈদে ৬ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর-কর্মকর্তারাও মাঠে সার্বক্ষণিক কাজ করবেন। আমি নিজে মাঠে থাকবো। জনগণকে অনুরোধ করছি যত্রতত্র কোরবানির বর্জ্য ফেলবেন না। নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেবেন। আমরা নিজ দায়িত্ব বর্জ্য নিয়ে যাবো।’
এমএমএ/এএসএ/জিকেএস