ফিচার

অপহরণকারীকে ভালোবেসে তার সঙ্গেই থাকতে চেয়েছেন বাকি জীবন

জাপানিজ বা কোরিয়ান কোনো দৃশ্যপট নয়। বাস্তবেও এমন ঘটনা ঘটেছে বহুবার। যেখানে অপহরণকারীর প্রেমে পড়েছেন ভুক্তোভুগী। পালানোর অনেক সুযোগ থাকলেও পালায়নি। বরং অপহরণকারীর ঘরে থেকেছে নিজের মতো করেই। তার সঙ্গেই থাকতে চেয়েছেন বাকি জীবন।

Advertisement

এগুলো কিন্তু শুধু সিনেমার গল্প নয়, বাস্তব থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এসব সিনেমা। গত কয়েক যুগে এমনটা বেশ কয়েকবার ঘটেছে বলে জানা যায় যখন কিডন্যাপ হওয়া আর খুব খারাপ লাগেনি। বরং ভিকটিম হয়ে উঠেছিল সহানুভূতিশীল, এমনকি বিশ্বস্তও।

মনের এই পরিবর্তিত অবস্থার নামই স্টকহোম সিনড্রোম। এটি মানসিক রোগের একটি ধরন। একই অবস্থা ঘটতে পারে স্ত্রী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণের ক্ষেত্রেও! সেগুলোও এই স্টকহোম সিনড্রোমেরই আলাদা প্রকার।

আরও পড়ুন

Advertisement

বয়স ৩০ না হলে এই রেস্তোরাঁয় ঢোকা যাবে না 

অপরাধীর প্রতি ভিকটিমের সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠার এই মানসিক সমস্যার নাম স্টকহোম সিনড্রোম। কীভাবে হলো এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক সেসব। ১৯৭৩ সালে যখন চারজনকে অপহরণ করা হয় সুইডেনের স্টকহোমে অবস্থিত একটি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায়, তখন পর্যন্ত এর সাধারণ নাম ছিল ‘ক্যাপচার বন্ডিং সিনড্রোম’।

দিনটি ছিল ১৯৭৩ সালের ২৩ আগস্টের সকাল, স্টকহোমের ব্যাংকটিতে এমন নাটকীয়তার সূত্রপাত হলো, যা সারাবিশ্বের খবরের কাগজের প্রথম পাতায় জায়গা করে নিল এবং মনোবিজ্ঞানের জগতে স্টকহোম সিনড্রোম নামের এক নতুন বিস্ময়ের জন্ম দিল। ব্যাংকে ঢুকে অপরাধীরা তাদের বন্দুক চালিয়ে ঘোষণা করলো যে ‘দ্য পার্টি হ্যাজ জাস্ট বিগান’। দুজন ডাকাত তখন পরবর্তী প্রায় ১৩১ ঘণ্টার জন্য চারজনকে জিম্মি করলো, তাদের মধ্যে তিনজন ছিলেন নারী এবং একজন পুরুষ। স্টকহোম সিনড্রোম নামটা তখন থেকেই চালু হয় যখন এই চারজন অপহৃত ব্যক্তি মুক্তি পাবার পর অদ্ভুত ব্যবহার করা শুরু করে। মুক্তি পাওয়ার পর গণমাধ্যমে দেওয়া তাদের সাক্ষাৎকারে বিষয়টি ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, তারা মানসিকভাবে তাদের অপহরণকারীদের সমর্থন করা শুরু করেছে এবং মনে করছে আইনরক্ষাকারী বাহিনী তাদের আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা মনে করতে থাকলো যে, অপরাধীরাই তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। তারা শুধু অপরাধীদের কোর্টে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করতে অস্বীকারই করেনি, বরং তাদের মুক্তির জন্য অর্থ সংগ্রহ করা শুরু করে। এমনকি তাদের মধ্যে একজন নারী অপহরণকারীদের একজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যান। স্পষ্টভাবে এই ঘটনাটিতে অপরাধীদের সঙ্গে অপরাধের শিকার ব্যক্তিরা মানসিকভাবে আবদ্ধ হয়ে যায়। অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর থেকেই আক্রান্ত ব্যক্তির মনের এই অবস্থাকে স্টকহোম সিনড্রোম বলে ডাকা শুরু হয়। এখন ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত কিছু স্টকহোম সিনড্রোমের গল্প জানেন কি? প্যাটি হার্স্ট ছিল একজন কোটিপতি প্রকাশকের উত্তরাধিকারী। সে অপহৃত হয়েছিল সিমবায়োনিজ লিবারেশন আর্মি নামের একটা গ্রামীণ গেরিলা দল দ্বারা। কিন্তু ঘটনার দু’মাস পরেই তাকে দেখা যায় অপহরণকারীদের সঙ্গেই স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে একটা ডাকাতিতে। পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পরও সে পারিবারিক পরিচয় গোপন করে এবং নিজেকে একটি মিথ্যা নামে পরিচয় দেয়। আদালতে এক পর্যায়ে যখন এসএলএ-এর প্রতি তার সহানুভূতির কথা সে প্রকাশ্যে জানায় তখন ৭ বছরের কারাদন্ডের আদেশও তাকে তার অবস্থান থেকে সরাতে পারেনি। পরবর্তীতে মানসিক অসুস্থতার কথা বলে এফ.লি বেইলি নামের একজন উকিল তার মুক্তির ব্যবস্থা করেন।

২০০২ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে স্টন হর্ণব্যাক নামের আরেকজনকে অপহরণ করা হয়েছিল। দুই বছর পর অপহরণকারীর বাসা থেকে যখন তাকে উদ্ধার করা হয়, তখন দেখা যায় অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে পালানোর কোনও চেষ্টা করেনি। এমনকি তার কাছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পর্যন্ত ছিল। এই বিষয় নিয়ে কিন্তু অসংখ্য সিনেমা, নাটক তৈরি হয়েছে। চাইলে দেখে নিতে পারেন।

আরও পড়ুন

Advertisement

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ বিশ্বে তামাক সেবনের কারণে বছরে ৮০ লাখ মানুষ মারা যায় 

সূত্র: হেলথলাইন, এবিসি, ইউরোনিউজ

কেএসকে/জিকেএস