অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র
Advertisement
টমী আনন্দে লেজ নাড়ছে। মনে হচ্ছিল, বেশ মজা পেয়েছে আমাকে দেখে। সে আস্তে আস্তে খুব কাছে এসে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে লেজ নাড়তে নাড়তে আমার হাফ্প্যান্টের ডান পকেটে মুখ ঘষতে লাগলো। খুব অবাক আর ভয়ে আমি পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম। ‘তোর নাম দীপ্ত না?’ লোকমান ভাই জিজ্ঞেস করলেন। ‘হ্যাঁ।’ ‘কিরে কিছু বলবি?’‘হ্যাঁ।’‘বল্’
‘এখানে বলা যাবে না। আপনার একটা জিনিস আছে আমার কাছে। ঈশরাত আপু পাঠিয়েছে।’ বলেই ডান পকেটের ওপরে হাত দিলাম।
‘আচ্ছা। তুই বড় রাস্তার দিকে যা। ফিরতি পথের দিকে হাট। আমি আসছি।’
Advertisement
আগের পর্ব পড়ুন বলেই আঙ্গুল নির্দেশ করে যে দিক দিয়ে এসেছিলাম সে দিকটা দেখিয়ে দিলেন।
আমি ওদিকে হাঁটা শুরু করলাম। কয়েক মিনিট পরেই সাইকেলের আওয়াজ পেয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি লোকমান ভাই সাইকেল চেপে প্রায় আমার কাছে চলে এসেছেন। কাছে এসেই সাইকেল থেকে নেমে আমার সাথে সমান তালে হাঁটা শুরু করলেন লোকমান ভাই। আমি বাঁ পাশের পথ ধরে আর লোকমান ভাই মাঝের পথ ধরে সাইকেল ঠেলে ঠেলে আমার সাথে সাথে হাঁটছেন। লোকমান ভাই জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিরে, কি জিনিস আছে তোর কাছে?’
আমি সামনে-পেছনে, বামে-ডানে একটু তাকিয়ে সাবধানে পকেট থেকে খামটা বের করে লোকমান ভাইয়ের দিকে বাড়িয়ে ধরলাম। বললাম, ‘এই যে এটা। ঈশরাত আপু দিয়েছে আপনাকে দিতে।’‘ও আচ্ছা।’
বলেই আমার মুখের দিকে এক নজর তাকিয়ে ক্ষণিকের মধ্যে খামটি আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে, জীন্সের প্যান্টের পেছনের পকেটে রেখে দিলেন। তারপর বললেন,
Advertisement
‘তুই কি আমার সাইকেলে চড়ে ওদিকে যাবি?’ আমি মাথা নেড়ে বললাম, ‘না, ঠিক আছে। আমি ফুটবল মাঠে যাব। এই তো বেশি দূরে না, হেঁটেই যেতে পারব।’
পকেট থেকে চিঠিটা পৌঁছে দিয়ে যে নিষ্কৃতি পেয়েছি, এটাই অনেক। ভাগ্যিস কেউ দেখে ফেলেনি। অন্য কেউ টের পেলেই আমাকে প্রশ্ন করত। এমনকি টমীও টের পেয়েছে। সে ঠিক আমার ডান পকেটের কাছে নাক দিয়ে শুঁকে মুখ ঘষছিলো। ও ঠিকই বুঝেছে। পশুপাখীরা অনেক বোঝে। সেদিন ঈশরাত আপু তার বিজ্ঞান বইয়ে কুকুর নিয়ে পড়ছিল আর আমাকে তরজমা করে শোনাচ্ছিল।
ইউরোপ আমেরিকায় নাকি অন্ধ লোকেরা কুকুর নিয়ে চলাফেরা করে। ঐ কুকুরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কুকুর তার অন্ধ মালিককে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারে। একটি কুকুরের ঘ্রাণশক্তি নাকি মানুষের তুলনায় দশ হাজার থেকে এক লাখ গুণ বেশি তীব্র। টমী নিশ্চয়ই আগেও ঈশরাত আপুর চিঠি শুঁকেছে। তাই মনে হয় সে আমার সাথে উচ্চবাচ্য করলো না, বন্ধুর মতো আচরণ করলো। ভালো আর পছন্দের ঘ্রাণ নাকি কুকুরেরা নাকের ডান ছিদ্র দিয়ে শুঁকে। কুকুরেরা নাকি এক দেড় মাইল দূর থেকেও গন্ধ বুঝতে পারে। মনে হলো, ঈশরাত আপুর খামটা আমার রক্ষাকবজের মতো কাজ করেছে। এখন ভালোবালাই মতো ফুটবল মাঠে যেতে পারলেই বাঁচি। লোকমান ভাই বললেন, ‘আচ্ছা, সেটাই ভালো হবে।’
বলেই সাইকেল চালাতে শুরু করতে গিয়েও এক পা দিয়ে ভর করে সাইকেলের ওপরেই বসে বললেন...
চলবে...
এমআরএম/জিকেএস