অর্থনীতি

শতক ছুঁয়েছে পেঁয়াজ, তিনশো পার আদা

ঈদ সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার আরও চড়েছে। বিশেষত, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা এ তিনটি পণ্যের দাম বেড়েছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে এখন দেশি পেঁয়াজের কেজি মানভেদে শতক ছুঁয়েছে। তবে মোটাদাগে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে, যা এক সপ্তাহ আগেও ৮০ টাকা আর একমাস আগে ছিল ৬০ টাকা।

Advertisement

একই ভাবে গত এক সপ্তাহে প্রায় সব বাজারে রসুনের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে এখন ২৫০ টাকা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় লাফ দিয়েছে আদার দাম। এ পণ্যটি কেজিতে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ২৪০-২৫০ টাকা।

মূলত, কোরবানির ঈদ ঘিরে প্রতিবছরই বাজারে এসব কাঁচাপণ্য ও মসলার চাহিদা বাড়ে। এ সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেয়। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ঈদ ঘিরে বেশ আগেভাগেই সব ধরনের মসলার দাম বাড়তি। ঈদ যত এগিয়ে আসছে, দাম তত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

এ পরিস্থিতিতে বাজারে গিয়ে কোরবানির ঈদের প্রয়োজনীয় মসলা কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষত, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল।

Advertisement

আরও পড়ুনভারতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম৫ বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬৪%, রসুনের ৩১০%

বুধবার সরেজমিনে রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। কিছু দোকানে বাছাই করা পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছিল, সেগুলো আকারে কিছুটা বড়। বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ নেই বললেই চলে। মাত্র অল্প কয়েকটি দোকানে আমদানির পেঁয়াজ দেখা গেছে, তবে পরিমাণে তা একেবারে কম।

এসব বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কিছু এলাকায় ভ্যানে ৮৫ টাকা দরেও পেঁয়াজ মিলছে, যদিও সেগুলো আকারে ছোট ও মানেও ততটা ভালো নয়।

পেঁয়াজ বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদা রয়েছে বাজারে। যে কারণে প্রতিদিন দু-এক টাকা করে পাইকারি দাম বাড়ছে। শুক্র-শনিবার এ দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা বলা যাচ্ছে না।

একাধিক বিক্রেতা জানিয়েছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ কম। কারণ, ভারত পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৫৫০ ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছে। ওই পেঁয়াজ আমদানি করলে শুল্ককরসহ দেশে আনতে প্রায় কেজিপ্রতি ৭০ টাকা খরচ হয়। যে কারণে ভারতের পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। এতে বাজার শুধু দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করেই চলছে।

Advertisement

এদিকে, বাজারে পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আদা-রসুনের দামও। এনামুল নামের একজন বিক্রেতা বলেন, পাইকারি বাজারে আদার সংকট থাকায় দাম বাড়ছে। তবে এ দামবৃদ্ধি অস্বাভাবিক। কয়েকদিনের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ৭০-৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সে তুলনায় রসুনের দাম এখনো কিছুটা স্থিতিশীল। যদিও এ পণ্যটি আগে থেকেই চড়া দামে আটকে আছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশে পেঁয়াজের দাম ৬৪ শতাংশ, রসুনের দাম ৬২ শতাংশ বেড়েছে। তবে গত বছর এসময়ে আদার দামও বেশি ছিল। যে কারণে এ পণ্যটির দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

আরও পড়ুনপেঁয়াজের পর ছুটছে আদা-রসুনএলাচ-হলুদের বাজার চড়া, জিরা-লবঙ্গে স্বস্তিউত্তাপ ছড়াচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন-আদার দাম

কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা নুর ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, প্রতি বছরই কোরবানির ঈদের আগে পেঁয়াজ-রসুনের দাম বাড়ে। তবে যে কোনো স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এসব পণ্যের দাম এখন প্রায় তিনগুণ।

বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে আগামী কয়েক দিনে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে।

ভারত থেকেও এখন পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ কম। আমদানিকারক আবদুল মাজেদ জাগো নিউজকে বলেন, ভারতেও পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি। দেশটিতে গত দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদের আগে চাহিদা বাড়ায় সেদেশেও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। ফলে এখন আমদানি করে পুষানো সম্ভব নয়।

আদা-রসুনের চড়া দাম নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে চীনে আদা-রসুনের মৌসুম শেষ। দেশেও টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলার সংকট চলছে। এ কারণে বাজার অস্থিতিশীল রয়েছে।

তথ্য বলছে, বাংলাদেশে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা এ তিন পণ্যের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় কম। যে কারণে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ভারত ও বাকি দুটি পণ্যের জন্য চীনের ওপর নির্ভর করতে হয়। সেসব দেশ থেকে আমদানি ব্যাহত হলে বাজারে এসব পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ে। এছাড়া এসময়ে চাহিদা বাড়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর মধ্যে অতি মুনাফার প্রবণতাও রয়েছে।

এনএইচ/এমকেআর/জেআইএম