আন্তর্জাতিক

৭০ কোটি ডলারে আপসরফা করছে জনসন অ্যান্ড জনসন

জনসন অ্যান্ড জনসনের (জেঅ্যান্ডজে) ট্যালকম পাউডারে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ বিষয়ে কয়েক হাজার মামলা দায়ের হয়েছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। অভিযোগ স্বীকার না করলেও তোপের মুখে উত্তর আমেরিকার বাজার থেকে অভিযুক্ত পণ্যগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছিল জেঅ্যান্ডজে। এবার ৭০ কোটি মার্কিন ডলার পরিশোধের মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে রাজি হয়েছে সংস্থাটি।

Advertisement

মঙ্গলবার (১১ জুন) নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, জনসন অ্যান্ড জনসন তাদের ট্যালকম পাউডার পণ্যগুলোর সুরক্ষার বিষয়ে ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ৭০ কোটি ডলার পরিশোধে রাজি হয়েছে।

আরও পড়ুন>>

বেবি পাউডারে ক্যান্সারের ঝুঁকি, জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি জনসন! বিষাক্ত বেবি পাউডার বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে জনসন অ্যান্ড জনসন এবার জনসনের বেবি শ্যাম্পুতে ক্যানসারের উপাদান!

যুক্তরাষ্ট্রের ৪২টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার সঙ্গে এই আপসরফা করলেও নিজেদের দোষ স্বীকার করেনি মার্কিন ওষুধ ও কসমেটিকস নির্মাতা সংস্থাটি।

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে, জনসন অ্যান্ড জনসনের ট্যালকম পাউডারে ডিম্বাশয়ের ক্যানসার সৃষ্টিকারী অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি রয়েছে। এ অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক হাজার মামলা হয় সংস্থাটির বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় গত জানুয়ারি মাসে নীতিগতভাবে একটি আপসরফার ঘোষণা দেয় জনসন কর্তৃপক্ষ।

নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিপজ্জনক পদার্থ ধারণ করে এমন কসমেটিক পণ্যের মাধ্যমে সম্প্রদায়গুলোকে টার্গেট করা কেবল বেআইনি নয়, এটি অত্যন্ত নিষ্ঠুর।

তিনি বলেন, জনসন অ্যান্ড জনসনের ট্যালকম পণ্যগুলো যে যন্ত্রণা তৈরি করেছে, তা কোনো পরিমাণের অর্থ দিয়েই পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না। এরপরও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো স্বস্তি যেতে পারে যে, ক্ষতির জন্য সংস্থাটিকে দায়ী করা হচ্ছে।

লেটিশিয়া আরও বলেন, জেঅ্যান্ডজের বিপজ্জনক পণ্যগুলো আর নিউইয়র্কের দোকানগুলোতে থাকবে না। যারা আমাদের সম্প্রদায়কে শিকার করে, তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এবং আমাদের আইন লঙ্ঘন করে, তাদের আমার অফিসের পূর্ণ শক্তি মোকাবিলা করতে হবে।

Advertisement

যে শর্তে সমঝোতা

সমঝোতার শর্ত অনুসারে, নিউ জার্সি-ভিত্তিক বহুজাতিক সংস্থাটি ট্যালকযুক্ত সব ধরনের কসমেটিকস পণ্যের উৎপাদন, বিপণন এবং বিক্রি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেবে।

বিতর্কের মুখে জেঅ্যান্ডজে ২০২০ সালে উত্তর আমেরিকার বাজার থেকে নিজেদের ট্যালকম পাউডারগুলো প্রত্যাহার করে নেয় এবং গত বছর সারা বিশ্বে এগুলোর বিক্রি বন্ধ করে দেয়। যদিও আজ পর্যন্ত তারা ভুল স্বীকার করেনি এবং এখনো বলে চলেছে, তাদের পণ্য ক্যানসার সৃষ্টি করে না।

চুক্তি অনুসারে, জনসন অ্যান্ড জনসনের কাছ থেকে নিউইয়র্ক রাজ্য ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার পাবে, যা তিন বছরের মধ্যে চারটি কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।

যদিও এই সমঝোতার মাধ্যমে গ্রাহকদের দায়ের করা হাজার হাজার মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যাবে না। এসব মামলার বাদিদের অভিযোগ, জনসন অ্যান্ড জনসনের পণ্যের কারণে তাদের বা তাদের নিকটাত্মীয়ের ক্যানসার হয়েছে।

কী বলছে জনসন অ্যান্ড জনসন

বার্তা সংস্থা এএফপি’কে দেওয়া এক বিবৃতিতে জনসন অ্যান্ড জনসন ওয়ার্ল্ডওয়াইড লিটিগেশন ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক হাস বলেছেন, ট্যালকম পণ্য মামলা চূড়ান্তভাবে সমাধানের জন্য সংস্থাটি ‘বিভিন্ন পথ’ অনুসরণ করছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে পূর্বে ঘোষিত একটি চুক্তির বাস্তবায়নও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেখানে দাবির বিষয়ে ৪৩ জন স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে একটি কনসোর্টিয়ামের পৌঁছেছিল জেঅ্যান্ডজে।

২০২৩ সালের এপ্রিলে সংস্থাটি ৮৯০ কোটি ডলারের একটি চুক্তির প্রস্তাব করেছিল, যা ‘ট্যালকম মামলা থেকে উদ্ভূত সব দাবিকে ন্যায়সঙ্গতভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করবে’।

জেঅ্যান্ডজে বলেছিল, এই অর্থ গত ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে অভিযোগ তোলা হাজার হাজার মানুষকে দেওয়া হবে। কাজটি করবে এলটিএল ম্যানেজমেন্ট এলএলসি নামে তাদের একটি সহায়ক সংস্থা।

মূলত অভিযোগকারীদের দাবির সমাধান করার জন্যই এলটিএল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি দেউলিয়াত্ব সুরক্ষার জন্য আবেদন করে সংস্থাটি। যদিও তাদের সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন একজন বিচারক।

এরিক হাস তার বিবৃতিতে বলেছেন, যারা মামলা বা নিষ্পত্তির মাধ্যমে আমাদের সম্মতিমূলক দেউলিয়াত্ব রেজোল্যুশনে অংশ নিতে চায় না, আমরা তাদের দাবির সমাধান করা অব্যাহত রাখবো।

সূত্র: এএফপি, আল-জাজিরাকেএএ/