সম্প্রতি লায়লা আক্তার ফারহাদের (৪৮) ধর্ষণ মামলায় টিকটকার আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনকে (২৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে রিমান্ড ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
Advertisement
এ ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ স্টাটাস দিয়েছেন নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন। তিনি প্রিন্স মামুনের পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করেছেন পোস্টে। দীর্ঘ লেখায় এই লেখক তার মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি লায়লাকেই দোষারোপ করেন। মামুনকে অসহায় এবং চক্রান্তের শিকার বলে দাবি করেন। তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, ‘জনপ্রিয় টিকটকার মামুন নাচতো বা গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলাতো। তার পাশে রং করা পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকতেন লায়লা। এসব অর্থহীন রুচিহীন ভিডিও ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকে আপলোড করতেন। শুধু নাচ-গানের ভিডিও নয়, মামুন খাচ্ছে, মামুন হাসছে, মামুন খেলছে–সবকিছুর ভিডিও তার করা চাই। মামুনকে দেখার জন্য দর্শক-শ্রোতা এত বেশি ছিল যে, তিনি এ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা রোজগার করতেন। করতেনই বা বলি কেন, রোজগার এখনো করছেন।’
মামুন-লায়লার প্রেম বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ‘মামুনকে তিনি আদৌ ভালোবাসেন বলে মনে হয় না। মামুনের জন্য সামান্য ভালোবাসা থাকলে তিনি তার বিরুদ্ধে মামলা করে তার সর্বনাশ করতে পারতেন না। লায়লার মতো চালাক চতুর নয় মামুন। সে বিশ্বাস করেছিল লায়লা তার ফ্যান, লায়লা তাকে ভালোবাসেন। লায়লা তেমনই বলেছিলেন মামুনকে। মামুনের গ্রামের বাড়ি কোথায়, তার নানির বাড়ি কোথায়, তার পরিবারে কে কে আছে, কী করে তাদের সংসার চলে, মা কে, বাবা কে, বন্ধু-বান্ধব কারা, মামুনের বয়স কত, কত টাকা উপার্জন করে, সেই টাকায় সে কী কী কিনেছে—সবকিছু প্রকাশ করলেও তার নিজের বয়স কত, তার বিয়ে হয়েছিল কি না, তার সন্তান আছে কি না, তিনি কী চাকরি করেন, তার বাবার নাম ইত্যাদি পারিবারিক কোনো তথ্যই তিনি প্রকাশ করেননি। মিডিয়া কোনো প্রশ্ন করলে তিনি কায়দা করে উত্তর এড়িয়ে গেছেন।’
আরও পড়ুন
Advertisement
মামুন সম্পর্কে এই লেখক লিখেছেন, ‘মামুনের পরিবারের দারিদ্র্য নিয়ে, মামুন এবং তার পরিবারের সবার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য তিনি করেননি। নিজের ধন-দৌলত নিয়ে লায়লা সব সময় গর্ব করেছে। নিজের ডিগ্রি, নিজের চাকরি, নিজের বেতন, নিজের বাড়ি, গাড়ি, ধন ও দৌলত নিয়ে তার অহংকারের শেষ নেই। আর মামুনকে কখন কত টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন, মামুনকে কত টাকা দামের কী উপহার দিয়েছেন, সবই বিশ্ববাসীকে বারবারই জানিয়ে দিয়েছেন।’
ধর্ষণ মামলা সম্পর্কে তসলিমা লিখেছেন, ‘লায়লা এখন মামুনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ঠুকে দিয়েছেন। মামুন নাকি তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। এমন বানোয়াট কথা তার মতো অসৎ, স্বার্থান্ধ এবং মিথ্যুক মহিলার পক্ষেই বলা সম্ভব। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন সম্পর্ক করলে প্রতারণা হয়, ধর্ষণ হয় না। অনুমতি ছাড়া যৌনসম্পর্ক করলে হয় ধর্ষণ। লায়লা বুঝে গিয়েছেন মামুন আর তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবে না, জিগোলো সম্পর্কটি চুকে বুকে গেছে। মামুনকে আগের মতো নিয়ন্ত্রণ করাও তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। এই কারণে তাঁর এত রাগ মামুনের ওপর।’
মামুনকে হেনস্থা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘মামুনকে কী করে হেনস্থা করা যায়, কীভাবে তাকে নিঃস্ব করে ফেলা যায়, তিনি করছেন। এভাবেই তিনি তার অনুদার এবং হিংস্র চেহারাটি মুখের পুরু প্রলেপের মতো প্রলেপ দিয়ে ঢেকে মামুনের বিরুদ্ধে নানা রকম অদ্ভুত অভিযোগ করছেন। মামুনের বড় দুই ভাই বোন প্রতিবন্ধী। তারা কথা বলতে পারে না। তার অসহায় মা বাবা আর ভাই বোনের জন্য টিকটক আর ইউটিউব থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে একখানা একতলা বাড়ি বানিয়েছে মামুন, পরিবারের মানুষগুলোর মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। কিছুদিন আগে ঢাকায় একটি সেলুনের ব্যবসা শুরু করেছে। সেই সেলুনের উদ্বোধনের দিন লায়লা গিয়েছেন, হাজারো ভক্ত মামুনকে দেখতে এসেছিল। লায়লা ব্যস্ত ছিলেন নিজের চেহারা দেখাতে। প্রেস কনফারেন্সের ভিড়ে সবাইকে দেখিয়ে নিজের ওড়না দিয়ে মামুনের মুখের ঘাম মুছে দিয়ে দরদী প্রেমিকার অভিনয় করে আসার দুদিন পর ধর্ষণের মামলা ঠুকে দিয়েছেন মামুনের বিরুদ্ধে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘মামুনের আত্মীয়-স্বজন লায়লার আত্মীয়-স্বজনের মতো প্রভাবশালী নয়। সুতরাং মামুনকে ভুগতে হচ্ছে, ভুগতে হবে। না বুঝে সে আটকা পড়েছে লায়লার পাতা ফাঁদে। মামুনকে মুক্ত করার জন্য আশা করছি, মানবাধিকারের জন্য যে আইনজীবীরা লড়েন, এগিয়ে আসবেন। লায়লা আর মামুনের এই দ্বন্দ্ব বা লড়াই আসলে নারীবাদ আর পুরুষতন্ত্রের লড়াই নয়, এ ধনী আর দরিদ্রের লড়াই, সবল আর দুর্বলের লড়াই, দম্ভ আর অসহায়ত্বের লড়াই, শিকারী আর শিকারের লড়াই।’
Advertisement
এসইউ/জিকেএস