জাতীয়

৮ হাজার থেকে দেড় লাখে ছাগল মিলছে, চাহিদাও ভালো

কোরবানির ঈদের আর বেশি দিন বাকি নেই। ধীরে ধীরে জমে উঠছে রাজধানীর পশুর হাটগুলো। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু-ছাগল নিয়ে হাটে আসছেন ব্যাপারীরা। এরই মধ্যে কেনাবেচাও শুরু হয়েছে। কোরবানিতে এ বছর কোরবানির জন্য গরুর পাশাপাশি ছাগলের চাহিদাও বেড়েছে।

Advertisement

বুধবার (১২ জুন) নগরীর একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ব্যাপারীরা জানিয়েছেন, সাধারণত দুটি কারণে ছাগলের কদর বেশি হাটে। প্রথমত অনেকের এককভাবে গরু কেনার সামর্থ্য নেই, সে কারণে ভাগে গরু না কিনে এককভাবে ছাগল কোরবানি দেন। সেক্ষেত্রে কিছুটা কম টাকায় কোরবানির পশু হয়ে যায়। অন্যদিকে সামর্থ্যবান বা ধনী শ্রেণির অনেকে একাধিক গরু কোরবানি দেন, পাশাপাশি তারা কয়েকটি ছাগলও কোরবানির জন্য কিনে থাকেন। ধনী, মধ্যবিত্ত বা যারা কম টাকায় কোরবানির পশু কিনতে চান- সব শ্রেণির ক্রেতার জন্য গাবতলী হাটে আট হাজার থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকায় ছাগল মিলছে। ব্যাপারীদের দাবি, তারা হাটে কোনো বিদেশি ছাগল তোলেননি, সবই দেশি।

গাবতলী হাটের প্রবেশদ্বারে প্রধান হাসিল ঘরের কাছেই বিক্রি হচ্ছে দেশি নানান জাতের ছাগল। এদিন আট হাজার টাকায় একটি ছাগল কিনেছেন জমির উদ্দিন মিয়া। তিনি সাভার থেকে এসেছেন। গরু কেনার সামর্থ্য নেই বলে এবার কোরবানির জন্য ছাগল কিনেছেন বলে দাবি করেন জমির উদ্দিন।

Advertisement

আরও পড়ুন

৮০ হাজার টাকার নিচে গরু মিলছে না ঢাকার গাবতলী হাটে

জমির উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘আট হাজার টাকায় কোরবানির ছাগল কিনলাম বাবা। লাখ টাকার গরু কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। তোমার চাচি অসুস্থ, ছেলেরাও দেখে না। আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি দিতে হবে, এজন্যই ছাগলটা কিনলাম।’

শুধু জমির উদ্দিন নন, অনেক ধনী ব্যক্তিও ছাগল কিনছেন কোরবানির জন্য। গরুর পাশাপাশি ছাগল কোরবানি দেওয়ার রেওয়াজ অনেকের কাছে। তাদেরই একজন গাবতলীর আওলাদ হাজী। এবার চারটা বড় গরু কোরবানি দিচ্ছেন। চারটা বড় গরুর সঙ্গে চারটা বড় ছাগলও কোরবানি দেবেন। গরু আগেই কিনে রেখেছেন, এখন ছাগল কিনতে হাটে এসেছেন তিনি।

আওলাদ হাজী বলেন, ‘আমি প্রতিবারই গরুর সঙ্গে ছাগল কোরবানি দেই। আমার চার মেয়ে ও দুই ছেলে। দুই ছেলে ও এক মেয়ে গরুর মাংস খায় না। তাদের রেখে তো কিছু করা যাবে না। তাই গরুর পাশাপাশি ছাগল কোরবানি দিয়ে থাকি। এজন্য দুই লাখ ২০ হাজার টাকায় চারটি ছাগল কিনলাম।’

Advertisement

হাট ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে হাটে ছাগলের সরবরাহ বেড়েছে। সব ছাগলই দেশি। মানিকগঞ্জ, পদ্মার চরবর্তী এলাকা, পাবনা, রাজশাহী, খুলনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ জেলা থেকে হাটে বেশি ছাগল এসেছে। চট্টগ্রামে ফটিকছড়ির ছাগলও হাটে বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের হাটে থেকে ছাগল সংগ্রহ করেও ব্যাপারীরা গাবতলী হাটে বিক্রি করছেন।

আরও পড়ুন

জমে উঠেছে পশুর হাট, বেশি হাসিল নেওয়ার অভিযোগ

ব্যাপারীদের দাবি, হাটে আট হাজার টাকায় যেসব ছাগল বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর মাংস হবে আনুমানিক সাত কেজি। অন্যদিকে দেড় লাখ টাকার দেশি বড় ছাগলের ১০০ কেজি মাংস হবে। এছাড়া আকার ভেদে নয় হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দরে ছাগল বিক্রি হচ্ছে। গাবতলী হাটে ছাগলের পুরোনো ব্যাপারী বাবুল মিয়া। তিনি সারাবছর এই হাটে ছাগলের ব্যবসা করেন। জীবনের ৩০ বছর ধরে ছাগল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন বাবুল। এবার হাটে ৪০০ থেকে ৫০০টি ছাগল তুলেছেন তিনি।

কোরবানিতে ছাগলের চাহিদা প্রসঙ্গে বাবুল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছাগলের চাহিদা আছে। অনেকের গরু কোরবানির দেওয়ার সামর্থ্য নেই। গরু কিনতে হলে এক লাখ টাকার কমে ভালো গরু মিলবে না। কিন্তু ছাগল কম টাকায় সবাই কোরবানি দিতে পারেন। ধনী, গরিব সবাই ছাগল কোরবানি দিতে পছন্দ করেন। ছাগলের মাংস অনেকে পছন্দ করেন। অনেকে আবার গরুর মাংস পছন্দ করলেও নানান কারণে খেতে পারেন না।’

আরও পড়ুন

জমে উঠছে সিরাজগঞ্জের ৫৭ পশুর হাট

এদিন হাটে বড় ছাগলের দাম হাঁকা হচ্ছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। রামছাগল বা যমুনাপাড়ি সাদা ছাগল দেখতে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য শরীরে হলুদ ছোপ ছোপ দাগ দেওয়া হয়েছে। এতে করে ছাগলটিকে দেখতে হরিণের মতো লাগছে।

ছাগলের মালিক শাহিন ব্যাপারী বলেন, ‘ছাগলটির ১০০ কেজি মাংস হবে। দেড় লাখ টাকা হলেই ছেড়ে দেবো।’

এমওএস/ইএ/এএসএম