বাংলাদেশের পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রথাগত ‘লিনিয়ার’ মডেল থেকে ‘সার্কুলার ইকোনমি’তে রূপান্তরের জন্য ব্যবহৃত কাপড় আমদানির অনুমতি ও নীতি সহযোগিতা চান শিল্প মালিকরা। বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ আয়োজিত বাংলাদেশ সার্কুলার ইকোনমি সামিটের দ্বিতীয় সংস্কারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পোশাকশিল্পের মালিকরা এ দাবি জানান। জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ‘জিআইজেড’র সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় ঢাকার রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে এই সামিট হয়।
Advertisement
এতে চারটি প্লেনারি আলোচনা সভা ও একটি ‘ব্রেকআউট সেশনে’ অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পে সার্কুলারিটি বাস্তবায়নে সুযোগ, চ্যালেঞ্জসমূহ ও সম্ভাব্য উপায় নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। বাংলাদেশ সার্কুলার ইকোনমি সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন থিজস ওয়াউডস্ট্রা, এবং বাংলাদেশস্থ জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যান জানোস্কি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে আমি প্রথমবারের মতো শিল্প বর্জ্যের শতকরা হারের ওপর একটি গবেষণা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশে এটি বের করা কঠিন ছিল। এখন সবাই জানে বাংলাদেশে বর্জ্যের শতকরা হার কত। আর এ বিষয়টি আমাকে অনেক গর্বিত করে তোলে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প এতদূর এগিয়েছে যে, আপনি এখন দেখতে পারছেন আমরা দিন দিন আরও উন্নতি করছি।
Advertisement
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রথাগত ‘লিনিয়ার’ মডেল থেকে ‘সার্কুলার ইকোনমি’তে রূপান্তর করতে উপকরণ প্রয়োজন। এখানে ব্যবহৃত কাপড় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। ব্যবহৃত কাপড় রিসাইকেলিংয়ের মাধ্যমে সুতা তৈরি করে ফ্যাবরিক্স বোনা হয়। কিন্তু আমদের দেশে ব্যবহৃত কাপড় আমদানির অনুমতি নেই। ‘সার্কুলার ইকোনমি’তে রূপান্তরের জন্য ব্যবহৃত কাপড় আমদানির অনুমতি ও নীতি সহযোগিতা একান্ত জরুরি।
‘আমাদের সরকার, বেসরকারি খাত, অংশীদার এবং সব স্টেকহোল্ডাররা একটি অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। পরিবর্তনটা শুরু হয় আপনার আর আমার কাছ থেকে। বাংলাদেশের জন্য সেই অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে আমাদের সবার বড় ভূমিকা রয়েছে।’
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সাসটেইনেবিলিটির দিক থেকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমাদের দেশের উন্নয়ন অনেকটাই পোশাক এবং বস্ত্র শিল্পের ওপর নির্ভর করে। আমাদের পোশাকশিল্পে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প দায়িত্বশীল ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। শিল্পের উন্নয়নে আমরা যখন এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের এই উন্নয়ন যেন টেকসই হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সার্কুলারিটি এবং উন্নয়নের জন্য সবার মধ্যে সহযোগিতাই মূল চাবিকাঠি।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের পৃথিবী একটাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটিকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এজন্য আমাদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
Advertisement
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজিএমইএ‘র সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সার্কুলার ফ্যাশন প্রসারের জন্য ব্র্যান্ড এবং উৎপাদনকারীদের মধ্যে সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আপনাদের অংশীদার। আমি সব ব্র্যান্ডকে অনুরোধ করছি, অনুগ্রহ করে আপনার দাম একটু বাড়ান। অন্যথায় আমরা টিকে থাকতে পারবো না।
‘বাংলাদেশ সার্কুলারিটি এবং সাসটেইনিবিলিটির ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে। আমাদের শিল্পের অগ্রযাত্রা মসৃণ ছিল না। আমরা প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করেছি। আমাদের কারখানাগুলো সর্বোচ্চ মান বজায় রাখে। পোশাক উদ্যোক্তারা টেকসই অনুশীলনগুলো গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ২০০টিরও বেশি সনদপ্রাপ্ত সবুজ পোশাক কারখানা রয়েছে এবং আরও ৫০০ কারখানা সনদ প্রাপ্তির জন্য অপেক্ষমাণ। উপকরণের ব্যবহার কমিয়ে এবং পুনর্ব্যবহারে আরও গুরুত্বারোপের মাধ্যমে বাংলাদেশ সার্কুলার ইকোনমির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সার্কুলারিটি সম্পর্কে আরও জ্ঞান এবং প্রযুক্তির জন্য আমাদের উন্নত দেশগুলোর সহায়তা প্রয়োজন। বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন থিজস ওয়াউডস্ট্রা বলেন, সার্কুলারিটির দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সাপ্লাই চেইন জুড়ে স্বচ্ছতা আনয়নের উপায়গুলোকে ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাতে উপকরণসমূহের গঠন এবং গুণমান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রবিধান পালন নিশ্চিত করা এবং পরিবেশগত দিকগুলোর স্বচ্ছতার ব্যাপারে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। একসঙ্গে কাজ করে আমরা সার্কুলার ইকোনমির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারি।
বাংলাদেশস্থ জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যান জানোস্কি বলেন, বাংলাদেশের আরও উচ্চাভিলাষী সংস্কার নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। অবশ্যই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রায়ই বিভিন্ন সেক্টরে অগ্রগামী হিসাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠান, সরকার এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা সার্কুলার ইকোনমি বাস্তবায়নের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তারা যেমন দিকনির্দেশনা দিতে পারেন, তেমনি উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের ব্যাপারেও ভূমিকা রাখতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সার্কুলারিটির ক্ষেত্রে অনেক চমৎকার এবং ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে আরও মনোনিবেশ করতে হবে।
আইএইচও/জেডএইচ/এমএস