দেশজুড়ে

জমে উঠেছে পশুর হাট, বেশি হাসিল নেওয়ার অভিযোগ

নীলফামারীতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে পশুর হাট। এসব হাটে পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশি গরু-ছাগল উঠতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে বেচাকেনা। হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা আসছেন। ক্রেতা বিক্রেতায় মুখর জেলার প্রতিটি পশুর হাট।

Advertisement

এবার জেলায় ৪১ স্থানে কোরবানির পশু কেনাবেচার হাট বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৩১টি স্থায়ী ও ১০টি অস্থায়ী হাট রয়েছে। এছাড়া ছয়টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও পশু কেনা-বেচা হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, এবার ঈদে পশুর চাহিদা রয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ১০৯টি কোরবানি পশুর চাহিদার বিপরীতে এক লাখ ৩৩ হাজার ৯২টি পশু বেশি রয়েছে। যা দেশের বিভিন্ন জায়গা কোরবানি পশুর চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। জেলার ৩০ হাজার ৯৭২ জন কৃষক ও খামারির কাছে দুই লাখ ৭৬ হাজার ২০১টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৭৫ হাজার ৮৩৩টি, মহিষ ৩৩টি, ছাগল এক লাখ ৮৬ হাজার ১৫১টি ও ভেড়া রয়েছে ১৪ হাজার ১৮৪টি। কোরবানি পশুরহাট গুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কাজ করছে ২৯টি মেডিকেল টিম।

তবে নীলফামারীর গরুর হাটগুলোতে অতিরিক্ত রশিদের মূল্য নিতে দেখা গেছে। কোরবানির পশুর হাটগুলোতে সরকারি নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত হাসিল (টোল) আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো হাটে রশিদ দেওয়া হলেও হাসিলের টাকা উল্লেখ করছেন না ইজারাদার নিয়োজিত রশিদ লেখকরা।

Advertisement

সফিকুল ইসলাম নামে পশু বিক্রেতা বলেন, গত বারের তুলনায় এবার গরুর দাম কম মনে হচ্ছে। হাটে ক্রেতারা আসছেন। কিন্তু দাম জিজ্ঞাসা করেই তারা চলে যাচ্ছেন। এ বছর ক্রেতাদের অনেকে বাজারে পশুর দরদাম যাচাই করে দেখছেন। আবার অনেকে পশু কিনতে হাটে এসেছেন। তবে অনেকে কিনছেন।

মামুন নামে এক গরুর ব্যাপারী বলেন, বসুনিয়া হাটে আজকের ১৫টি গরু কিনেছি। গরুর দাম অনেক বেশি। রশিদের মূল্য বেশি । প্রতিটি গরুর ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে রশিদের এক হাজার টাকা করে নিয়েছে।

আব্দুর রহমান নামে পশুহাটে আসা ক্রেতা বলেন, বর্তমান হাটে যেসব গরু-ছাগল আসতে শুরু করেছে তার বেশিরভাগ স্থানীয়ভাবে লালনপালন করা। আজকে গরু দামের সঙ্গে মিলেনি তাই নেইনি। আগামী হাটে কিনবো।

সহিদুল নামে স্থানীয় একজন জানান, তিনি হাটে আটটি গরু নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে তিনটি গরু বিক্রি করেছেন। কোরবানির এখনো অনেক সময় বাকি থাকায় ক্রেতারা দরকষাকষি করছেন। সামনের হাটে বিক্রির পরিমাণ বাড়বে।

Advertisement

ডোমার উপজেলার সোনারায়ের জামিরবাড়ী গ্রামের মো. জামিয়ার রহমান বলেন, বসুনিয়া হাটে আজকে ১০টি গরু এনেছি। ইতোমধ্যে সাতটি বিক্রি হয়ে গেছে। তবে গরুর খাদ্যের দাম বাড়তি এতে আমাদের উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তবে হাটে গরুর চাহিদা ভালো।

চট্টগ্রাম থেকে গরু কিনতে আসা শরিফ নামের এক ব্যাপারী বলেন, কয়েকদিন ধরে গরু কিনে ট্রাক লোড করে চিটাগাং পাঠাচ্ছি। এবার গরুর দাম বেশি মনে হচ্ছে। এরপরও কিনছি। আমরা যারা বাহিরে থেকে নীলফামারীতে ব্যবসার জন্য আসি সেই হিসেবে বাজারগুলোতে সুযোগ-সুবিধা নেই। এখানে গরুর রশিদ মূল্য বেশি। আপনাদের বলে তো লাভ নেই।

নীলফামারী পুলিশ সুপার মো. গোলাম সবুর পিপিএম (সেবা) জাগো নিউজকে বলেন, পশুরহাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প রাখা হবে। এছাড়া জাল নোট শনাক্ত করার মেশিনও রয়েছে। কোরবানির জন্য নির্ধারিত পশুরহাটে হাসিলের পরিমাণ সাইনবোর্ডে লেখা থাকতে হবে। যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে হাট কমিটির লোকজনের সঙ্গে সাদা পোশাকে পুলিশ তৎপর থাকবে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের বলবো অন্যের দেওয়া কোনো জিনিস বাজারে খাবেন না।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, এবার জেলায় দুই লাখ ৭৬ হাজারের বেশি পশু খামারিরা লালন পালন করছেন। এ বছর চাহিদা এক লাখ ৪৩ হাজারে একটু বেশি। সে হিসেবে এক লাখ ৩৩ হাজারে উপরে প্রাণী অন্য জেলায় যাবে। কোরবানির পশুরহাটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকবে।

বসুনিয়া হাটের ইজারাদার মোফাকখখারুল ইসলাম স্বপন বলেন, হাটের টোল বিষয়ে জেলা পর্যায়ে মিটিংয়ের পর নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা নিয়ে আপনার কথা বলার দরকার নাই। নীলফামারীর গরুর হাটে ১৩০০ টাকা রশিদ নিচ্ছে সেটা আগে দেখেন বলে কলটি কেটে দেন।

ইব্রাহিম সুজন/আরএইচ/এমএস