সাহিত্য

উপমা ও অন্যান্য

এক.উপমা দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু

Advertisement

তুমি স্বপ্নের উর্বর জমিন, অগ্রহায়ণের ফসলি প্রসন্নতা তুমি হরিণের গায়ের রঙের মতো বিকেলবেলাতুমি জীবনের সব অধিকারের চারণভূমি তুমি সোজাসাপ্টা আষাঢ়ের অঝোর বারিধারা।

তুমি সামাজিক সংকটের বিপরীতে জেগে থাকা প্রত্যাশা তুমি আলোর জগৎ, নৈতিকতার স্বচ্ছ সরোবর তুমি ঢেউয়ে ঢেউয়ে সফেদ ফেনা, ফেনার বিচ্ছুরণ তুমি যুঁথি বনে আউলা-বাউলা শীতল হাওয়া।

তুমি জীবন-জয়ী গল্প, অল্পকথার প্রাণজুড়ানো গল্প তুমি শুধুই তুমি, তুলনাবিহীন তুমি; স্বর্গলোকের তুমি তুমি দুঃখের সিংহাসনে বসেও সুখের আসন-অঙ্গুরী তুমি আমায় ধরে-বেঁধে রাখার বর্ণিল দীর্ঘ রশি।

Advertisement

তুমি পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারা, অফুরন্ত ঝর্ণাধারা তুমি পৃষ্ঠাভরা বাক্যের মাঝে সারি সারি শব্দ, অনেক রঙের শব্দতুমি আমার স্বপ্ন কেনার আমির, ধনাঢ্য আমির তুমি ভৈরবী রাগের সুর, তোমাকে আমি কীভাবে নির্মাণ করি!

তোমার উপমা তুমি, শুধুই তুমি; উপত্যকাজুড়ে তুমি তুমি রূপসী বাংলার অবুঝ বালিকার অট্টহাসির সারল্যে।

দুই.পরস্পর

সূচনা : তোমার একটি পরিচয় বহুদিন ছিল অজানানিলয় : কী সেই পরিচয় সূর্যমুখী?সূচনা : সে তোমার অসীম বিনয়।নিলয় : আর তুমি কী তা জানো?সূচনা : না, সেভাবে নিজেকে কখনও খুঁজিনি তাই জানিনেনিলয় : তুমি হলে ধ্বনির স্বরে স্বরে অবিনশ্বর সত্তা।সূচনা : আমার সম্পর্কে এত কিছু তুমি জেনেছো কী করে!নিলয় : জানার ইচ্ছা থাকলে হিমাচল বক্ষও হয় উর্বর জমিনসূচনা : এত গভীরে গিয়ে পর্যবেক্ষণের শক্তি আমার নেই।নিলয় : আমি জানি কতটা গভীরে যেতে পারো তুমিসূচনা : আমি তো তোমাকে সেভাবে কখনও ভাবিনি।নিলয় : তোমাকে নিয়ে আমার কত দিগন্তব্যাপ্ত অন্বেষাসূচনা : কেন বলো তো আমাকে নিয়ে তোমার এত নীরব ব্যাকুলতা?নিলয় : যেদিন প্রথম দেখেছি তোমায়, হৃৎপিণ্ডে সে কি উথালপাথাল!সূচনা : তুমি কী বলো তো, কী করে এত সামলাও নিজেকে?নিলয় : তুমি আমার ভুবনসীমান্ত ছাড়িয়ে মিশে আছো অশ্মমণ্ডলে। সূচনা : আমাকে ক্ষমা করো, তোমার মতো হতে পারব না এ জন্মে।নিলয় : তুমি তোমার ভুবনে নিয়েছো আমারে, এর বেশি আর কী চাই!সূচনা : চিরকালের সখা, আমাকে তুমি সাজাও তোমার মতো করে।নিলয় : অবসাদ শূন্যতা বুকে সেই কবে উড়েছে প্রত্যাশার পতাকাসূচনা : আমি তো অন্ধ ভিখারি তবু অনায়াসে হেঁটে যেতে পারি আলোকবর্ষ দূরে।নিলয় : জানি, জানি তো; কোনো কিছু না ভেবেই ঘর ছাড়তে পারোসূচনা : সেই সাহসও তুমিই দিয়েছো পরিপার্শ্ব নীলাভ সমুদ্দুর করে।নিলয় : প্রিয়তমা আমার, তুমি চাইলেই সুখ ঘ্রাণের সুবাস আরও যাবে ছড়িয়েসূচনা : তুমি চাইলেই সময়ের সব বিষ শুষে হব নীলকণ্ঠী।

Advertisement

তিন.অলৌকিক আসর

যতবার স্পর্শ করো ততবারইঅন্যরকম সতেজ হয়ে উঠিযতবার উপেক্ষা করো ততবারইনুইয়ে পড়ি, একেবারে নুইয়েযতবার বলো এসো, উজ্জ্বল বিভায় এসোততবারই বাকি অর্ধেক জগৎটা খুঁজি।

যতবার হাত বাড়াও বৃহত্তর ভালোবাসায়ততবারই অন্তর্গত ভাবনায় ডুবে যাইপরম আত্মার গভীরে তুমি জেগে রওতোমার বোধের মাঝে সমাহিত করোসময়ের বন্য হাওয়া, নেমে আসুক নতুন ভোরঅশ্বারোহী হয়ে যাব সূর্যভ্রমণে।

যতবার তুমি তোমাকে আমায় দাওততবারই রোরুদ্যমান স্বপ্ন আবার প্রেরণায় জেগে ওঠে শরতের আকাশে হীরের স্তূপ গড়ে অনন্ত অঙ্গীকার স্ফটিকশুভ্র জীবনের সন্ধান দেয়শালবনের ভেতর চকচক করে শান্তির আলোদৈবযানগুলো বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যায়।

তুমি প্রসন্ন থাকলে নিরর্থক তর্ক, গর্জন, লড়াইআলোকবর্ষ দূরে সরে যায়, অদৃশ্য হয়ে যায়মৌমাছির ঝাঁক মধু জড়ো করে মধুচক্রেসৃষ্টি উল্লাসের ঘণ্টাধ্বনি সুমিষ্ট প্রতিধ্বনি ছড়ায়সম্ভাবনার আলোয় সব বিষণ্নতা কেটে যায় মানবিক বিশ্ব গড়ে ওঠে, অলৌকিক আসর।

এইচআর/জিকেএস