রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এক ব্যক্তিকে অপহরণ এবং প্রকাশ্যে গুলির ঘটনায় করা পাল্টাপাল্টি মামলায় দুগ্রুপের দুজনের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. মহিউদ্দিন শেখ ও মো. শফিউদ্দিন গাজী (৬৩)।
Advertisement
সোমবার (১০ জুন) তাদের দুজনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের পৃথক দুই মামলায় পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নূরুল হুদা চৌধুরি তাদের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামি মহিউদ্দিন শেখের রিমান্ড আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, বাদীর পাঁচ বছরের জন্য লিজ নেওয়া মতিঝিল থানাধীন টয়েনবি সার্কুলার রোড হোল্ডিংস্থ ৩৬ শতাংশ জায়গা নিয়ে বিবাদীর সঙ্গে অন্য আরও চারজনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জেরে প্রায় সময়ই বাদীকে গুম-খুনের হুমকি দেওয়া হয়। গত রোববার বাদী তার ওই সম্পত্তি দেখার জন্য মামাসহ রওনা দেন।
Advertisement
সেদিন বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে মতিঝিলের কমলাপুর বাজার রোডস্থ শীত নিবারণ বেডিং সেন্টারের সামনে পাকা রাস্তার ওপর পৌঁছালে সফিউদ্দিনসহ মো. রাফি (৩৪) আলভী (২৪) মহিউদ্দিন শেখের দুলাভাই একটি সাদা প্রাইভেটকারে বাদীর সামনে এসে থামে। তখন সেখানে আগে থেকেই অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজন বিবাদী ওঁৎ পেতে ছিল। তারা বাদীকে মুখ চেপে ধরে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে মারতে জোরপূর্বক অপহরণ করে প্রাইভেটকারে তুলে দ্রুত শাপলা চত্বরের দিকে এগিয়ে যায়।
তখন বাদীর সঙ্গে থাকা তার মামা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন গাজী তাকে বিবাদীদের হাত হতে বাঁচাতে তার লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে বিবাদীদের প্রাইভেটকারের টায়ার লক্ষ্য করে (চার রাউন্ড) গুলি করেন। তখন ঘটনাস্থলে থাকা অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। অন্য চার বিবাদী দ্রুত গাড়ী চালিয়ে শাপলা চত্বর হয়ে দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে যেতে থাকেন। মতিঝিল থানাধীন আপ অ্যান্ড টপ ফেব্রিক্সের বিপরীত পাশে পাকা রাস্তার ওপর পুলিশ দেখে বাদী চিৎকার করলে বিবাদীরা তাকেসহ গাড়ি ফেলে পালি যায়। তখন স্থানীয়রা বাদীকে উদ্ধার করে।
অন্যদিকে, বিপরীতে পক্ষের আসামি শফিউদ্দিন গাজীর রিমান্ড আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি সুরজিত বসু রাজু (৪৯) দেড় বছর আগে একই স্থানে ৩৬ শতাংশ জায়গা বাদীর কাছে বায়না করে। বাদী জমি বায়না করার পর জানতে পারেন উল্লেখিত জমিটি সরকারি ওয়াকফ সম্পত্তি। পরবর্তীসময়ে তিনি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়াকফ প্রসাশকের নিয়ন্ত্রণে মোতওয়ারি কর্তৃক ওই সম্পত্তি লিজ হিসেবে নেন। বাদী ওই সম্পত্তি লিজ নেওয়ার পর থেকে এ মামলার আসামি সুরজিত বসু রাজু তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে সম্পত্তি দখল করার জন্য আসেন এবং উল্লেখিত স্থানে বাদীর কেয়ার টেকার ও ভাড়াটিয়াদের মারধর করেন।
পরে ওইদিন তার কেয়ারটেকার ফোন করে জানায়, লিজ নেওয়া জায়গায় সুরজিতসহ অন্যরা ইট, বালু, সিমেন্ট এনেছে কাজ করার জন্য। বাদী ওই সংবাদ পেয়ে সেখানে গিয়ে প্রাইভেটকার থেকে নামতেই আসামিরা অস্ত্রশস্ত্রসহ তাকে ধাওয়া দিলে বাদী ভয়ে প্রাইভেটকারে ওঠে যান। তখন পলাতক আসামি শফিউদ্দিন গাজী নিজ নামে ইস্যুকৃত পিস্তল অবৈধভাবে প্রদর্শন করে বাদীকে লক্ষ্য করে হত্যার উদ্দেশে গুলি করতে থাকে। তাৎক্ষণিক ওই এলাকায় টহলরত পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আসামিরা পালিয়ে যায়। তখন দায়িত্বরত পুলিশ সেখানে আসামিদের কাছে থাকা অস্ত্র উদ্ধার করে।
Advertisement
জানা গেছে , আবাসন ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন ও মো. রাজুর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। ওই জমিতে একপক্ষ ভবন নির্মাণের কাজ করছিল। এ নিয়ে অন্যপক্ষ বাধা দিতে গেলে অপহরণ ও গুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় মহিউদ্দিন ও রাজু পৃথক দুটি মামলা করেন।
জেএ/এমকেআর/জেআইএম