অর্থনীতি

বাজেটে নতুন কিছু পেলাম না: ড. সালেহউদ্দিন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা নতুন কিছু পেলাম না। গতানুগতিক বাজেটের আকার বড় করা হয়নি, কিন্তু ব্যয়ও কমানো হয়নি। ধার-দেনা করে ঋণ পরিশোধ করা হবে।

Advertisement

তিনি বলেন, আমাদের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প থেকে সরে এলে ঘাটতি বাজেটের চাপ কমে যায়, চাপ কমে ব্যাংকের ওপর থেকে। এডিবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা এক থেকে দেড় লাখ টাকা করা হলে বৈদেশিক ঋণের চাপ থেকে অনেকটাই স্বস্তি আসবে। বাজেট নিয়ে সরকারের আরও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।

সোমবার (১০ জুন) ‌‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫’ শীর্ষক আলোচনা সভায় খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব কথা বলেন তিনি।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে সভায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যবসায়ীরা এখন যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেন। ব্যবসার মডেল চেঞ্জ হয়ে গেছে। খেলাপি ঋণভিত্তিক মডেল বলতে পারি। এখন ঋণ নেবেন কিন্তু দেবেন না (খেলাপি করা), এটাও একটি মডেল। পরিস্থিতি এমন যে আমাদের খেলাপি ঋণভিত্তিক মডেল চালু করা উচিত।

তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংক চুরি কমাতে হবে। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে ব্যবসায়ীরা ঋণ পাবেন না, আবার নতুনরা কোনো ঋণ পাবেন না। এক্ষেত্রে জবাবদিহি ও কঠোর মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই। আমাদের কিছু সংস্থা কাজ নেই, বেতন আছে। ব্যয় কমাতে এসব সংস্থা যাদের কোনো কাজ নেই, তাদের বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

আরও পড়ুনঅর্থনীতির প্রতিটি খাত এখন সংকটে: ড. ওয়াহিদ উদ্দিন

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, রিজার্ভের দরপতন নতুন কিছু না। অনেক দিন ধরেই এটা হচ্ছে, এ নিয়ে আগে থেকেই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। প্রতিযোগী সব দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হয়, আমরা সেখানে ধরে রেখেছিলাম, কিন্তু তার বিরূপ প্রভাব তৈরি হয়েছে। আমরা পদক্ষেপ নেওয়ার সেই সময় পার করে এসেছি, কাজে লাগাতে পারিনি। অনেক পরে এসে সুদহার বাজারভিত্তিক করা হলো, কলিং পেগ চালু করা হলো। এখন মূল্যস্ফীতি কমাতে আরও পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল, যেগুলো আমরা নিতে পরিনি। ওএমএস খাতসহ এ ধরনের খাতে বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারতো।

ড. হোসেন জিল্লুর বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট হলো গা-ছাড়া একটি বাজেট। বাজেটে আইএমএফের কথা শোনা হয়েছে, অলিগার্কদের কথা শোনা হয়েছে কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও প্রকৃত উদ্যোক্তাদের কথা শোনা হয়নি। বাজেটে কালো টাকার সুযোগ দিয়ে বলা হলো ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিলেই সাদা হবে অথচ সৎ আয়ের ব্যবসায়ীদের সেখানে কাটা হবে ৩০ শতাংশ। এটা কী নিয়ম, কোনো নিয়ম হলো এটা? এখানে আমলাতন্ত্রের কথা শোনা হয়েছে, তাদের সুযোগ-সুবিধার কথা হয়েছে।

Advertisement

বিনিয়োগ বিষয়ে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ৯০’র দশকে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের অবস্থা একই রকম ছিল। একটা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র আমেরিকার বিনিয়োগ টানতে পারছে আর আমরা পিছিয়ে পড়ছি। সংকট মোকাবিলায় এখন আমাদের মেগা প্রজেক্ট নেওয়া যাবে না। যে প্রকল্প চলছে বা আসছে তার ভবিষ্যতও আমাকে দেখতে হবে। তার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে কী আসবে সেটা দেখার বিষয়। তবে কিছু প্রকল্প অনেক কাজের, অবদানও রয়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে আমাদের খরচ কমাতে হবে। একই সঙ্গে কালো টাকা ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে সাদার সুযোগে ক্রমেই আমরা স্মার্ট নৈতিকতাহীন হয়ে পড়বো। আর স্মার্ট মানুষ নৈতিকতাহীন হলে সেটা ভয়ংকর হবে।

ইএআর/ইএ/জেআইএম