রাজনীতি

ভোট নিয়ে বাংলাদেশের জনপ্রত্যাশার মর্যাদা দেবে ভারতের নতুন সরকার

ভারতে টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনপ্রত্যাশাকে ভারতের নতুন সরকার মর্যাদা দেবে, এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

Advertisement

মোদীর নেতৃত্বে ভারতে নতুন সরকার গঠনের একদিন পর সোমবার (১০ জুন) দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এ প্রত্যাশার কথা জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের নতুন সরকার নিয়ে সাংবাদিকরা আমাদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছেন। এ সম্পর্কে আমার বলার একটাই… ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ, নিঃসন্দেহে আমাদের প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ।

তিনি বলেন, ভারতের নতুন সরকারের কাছে আমরা একটাই আশা করবো, এখনো তার দেশে জনগণ যেভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, তাদের নির্বাচন কমিশন যেভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তাদের বিচার বিভাগ যেভাবে কাজ করতে পারে, আমরাও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সেভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা চাই ভারতের সরকার বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশাকে মর্যাদা দেবেন। তারা সেভাবেই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন।

Advertisement

আরও পড়ুনভারতবিরোধী চক্রের মাথার ছাতা বিএনপিজনগণ কারও প্রভুত্ব স্বীকার করবে না: ফখরুলভারত-বিএনপি সম্পর্ক কোন পথে?

অভিন্ন নদীর হিস্যা আদায়, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়া এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধে শেখ হাসিনা সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনাও করেন মির্জা ফখরুল।

লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট বিজয়ী হওয়ায় রোববার তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নরেন্দ্র মোদী। একই দিন তার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও শপথ নেন।

সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘আধুনিক কৃষি, অভিন্ন নদীর পানি আগ্রাসন এবং জলবায়ু ভারসাম্যহীনতা রোধে শহীদ জিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক শাহাদত হোসেন বিপ্লব।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতকাল (রোববার) একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) একজন পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো… আমি নাম বলবো না তার…। আপনারা অনেকে চিনে ফেলতে পারেন তাকে। সে এখন রাজনীতি থেকে দূরে আছে। সে তখন ছাত্রলীগের নেতা ছিল, পরবর্তীকালে সে আওয়ামী লীগও করেছে, এমপিও হয়েছে। এখন প্রায় ১০-১২ বছর ধরে আর রাজনীতির কাছাকাছি নেই।

Advertisement

‘আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি রাজনীতি করছো না কেন? আমাকে সে বলেছে, কোন রাজনীতি করবো? আমি বললাম, আওয়ামী লীগ করবা। সে বললো, আওয়ামী লীগ কি আওয়ামী লীগ আছে… এটা তো এখন আজিজ আর বেনজীরের আওয়ামী লীগ। এই হচ্ছে একজন আওয়ামী লীগ নেতার উপলব্ধি। সে রাজনীতি থেকে চলে গেছে… এটাই বাস্তবতা’- যোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা সংগ্রাম করা সেই আওয়ামী লীগ নেই। সেই আওয়ামী লীগ নেই যারা আমাদের সঙ্গে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছিল।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যখনই আসে তখনই তাদের কেমিস্ট্রিতে পরিবর্তন শুরু হয়। সেই পরিবর্তনটা হচ্ছে তারা সর্বগ্রাসী হওয়া শুরু করে। শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই বলেছিলেন ওই সময়ে, সবাই পায় সোনার খনি, আমি পাই চোরের খনি। চোরের খনি সব দিকে…। তখন কম্বল এসেছিল, তিনি বললেন- আমার কম্বলটা চুরি করে নিয়ে গেছে।

আরও পড়ুনএই বাজেট গণবিরোধীই নয়, দেশবিরোধীওমোদীকে বিনয়ী করতে পারবে জোট?প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর সাক্ষাৎ

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার পরিকল্পিত ও সচেতনভাবে বাংলাদেশকে একটা নতজানু ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। অনেকে বলবে, এতো উন্নয়ন করেছে, মেগা প্রজেক্ট করেছে...। কিন্তু সেসব থেকে কী পরিমাণ অর্থ মেগা পাচার হয়েছে, সেটাও দেখা দরকার।

তিনি বলেন, আজকে এমন একটা অবস্থা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। সরকার বাজেট দিয়েছে, কিন্তু এটা পুরোপুরিই লুটপাটের বাজেট।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের বিচার ব্যবস্থা দেখুন, শিক্ষা ব্যবস্থা দেখুন, কোথাও কোনো সুখবর নেই। সবদিকে সংকট চলছে। আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত। ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করে জনগণের ওপর জুলুম চালানো হচ্ছে।

কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-সভাপতি নাসির হায়দার, মামুনুর রশীদ খান, এসএম ফয়সাল, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, আ ন ম খলিলুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুর রহমান টিপু এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জামসেদ আলী রিপন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কেএইচ/এমকেআর/জেআইএম