নেত্রকোনায় জঙ্গি আস্তানা থেকে বোমা-বিস্ফোরকসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (৯ জুন) সকাল থেকে সেখানে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট, সোয়াট ইউনিট ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট তল্লাশি চালায়।
Advertisement
অভিযানে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুল্লাহ চৌধুরী, বোম ডিসপোজাল ইউনিটের বোমা বিশেষজ্ঞ পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন ও নেত্রকোনার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ নেতৃত্ব দেন।
অভিযানে ছয়টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা (আইইডি), একটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি, দুটি মার্শাল আর্ট ড্রেস, দুটি ফ্ল্যাশ লাইট, পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, সাতটি বাটন ফোন, দুটি হাই পাওয়ার দূরবীন, প্লাস্টিকের ২০টি ডামি রাইফেল, একটি রাম দা, একটি পাসপোর্ট, দুটি অত্যাধুনিক কম্পাস, একটি ইলেক্ট্রিক করাত, ৩০টি বেল্ট, একটি ল্যাপটপ, একটি প্রিন্টার, একটি নানচাকু ও ছয়টি প্যাকেটবন্দি সিসি ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়।
এর আগে শনিবার উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল, ১৭ রাউন্ড গুলি, দুটি ম্যাগাজিন, একটি হ্যান্ডকাপ ও দুটি ওয়াকিটকি।
Advertisement
পরে বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা আশপাশের বাড়িঘরের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে ছয়টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা (আইইডি) নিষ্ক্রিয় করে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বাড়িটিতে ফাহিম ওরফে আরিফ নামের এক যুবকসহ কয়েকজন ভাড়া থাকতেন। আরিফ গত ৫ জুন নরসিংদীর রায়পুরায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার হন। ওই ঘটনার সূত্র ধরে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
তিনি বলেন, প্রফেসর আব্দুল মান্নানের ফোনটি বন্ধ রয়েছে। ঘটনার তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত এর বাইরে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার দুপুরে প্রথম নেত্রকোনা মডেল থানার পুলিশ উপজেলার ভাসাপাড়া গ্রামের দোতলা বাড়িটিতে অভিযান শুরু করে। এরপর অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট ও সোয়াট টিম এসে দ্বিতীয় দফা অভিযান চালায়।
Advertisement
অভিযানের নেতৃত্ব থাকা কর্মকর্তারা বলেন, বাড়িটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এখানে যে ধরনের এক্সক্লুসিভ ডিভাইস পাওয়া গেছে তার সঙ্গে ২০১৭ সালে মোহাম্মদপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় উদ্ধার করা সরঞ্জামের মিল রয়েছে।
পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ বলেন, বাড়িটির ভিতরে ১৫-২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উপযোগী প্রশিক্ষণ পরিবেশ ছিল।
তারা জানান, প্রায় ২০ বছর আগে ওই বাড়িটি নির্মাণ করেন আটপাড়া উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার ড. আবদুল মান্নান। তিনি ডুয়েটের শিক্ষক ছিলেন। সেখানে একটি মহিলা কলেজ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর করেননি।
বর্তমানে বাড়ির ভেতরে থাকা দুটি বড় পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। এ ছাড়া প্রাচীরের ভেতরে একটি আধা পাকা টিনের ছাউনি ঘর আছে। ভাড়া দেওয়ার পর ভাড়াটিয়ারা বাড়ির সীমানাপ্রাচীর আগের চেয়ে আরও দেড় ফুট উঁচু করেন। এর ফলে ওই বাড়ির কিছুই বাইরে থেকে দেখা যায় না। বাড়িটির নারকেল গাছ, আমগাছসহ সীমানা প্রাচীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫-৩০টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। ওই বাড়িতে স্থানীয় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।
এদিকে শহরের বনোয়াপাড়া এলাকায় প্রফেসর আব্দুল মান্নানের আরেকটি একটি বাড়ি রয়েছে। তাতে একটি প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কার্যক্রম চলমান। ওই বাড়িতেও পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। এছাড়া বনোয়াপাড়ার নেওয়াজ নগর এলাকারও একটি বাড়ি পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।
এইচ এম কামাল/আরএইচ/জেআইএম