আন্তর্জাতিক

মোদীর আরও পাঁচ বছর, বিশ্বে কী প্রভাব পড়বে?

ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদী ভারতকে বিশ্ব মঞ্চে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তা সাম্প্রতিককালে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির অন্য কোনো নেতা পারেননি।

Advertisement

চলতি সপ্তাহে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতা নিশ্চিত করেছেন মোদী, যা ভারতের ইতিহাসে নজিরবিহীন। জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়নের মতো বিশ্ব ইস্যুতে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছেন মোদী। একই সঙ্গে নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের মূল অংশীদারও হয়ে উঠছে ভারত। এখন গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্বেরও বড় অংশীর দেশটি।

বিশ্ব মঞ্চে ভারতকে আরও সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফের পাঁচ বছরের জন্য সুযোগ পেলেন ৭৩ বছর বয়সী মোদী ও তার দল বিজেপি। একই সময়ে প্রতিবেশী পারমাণবিক ক্ষমতাধর চীন ও পাকিস্তানকেও মোকাবিলা করতে হবে মোদী সরকারকে।

আরও পড়ুন>

Advertisement

টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর শপথ আজ সরকার গড়বে ‘ইন্ডিয়া’, শুধু সময়ের অপেক্ষা মোদীর শপথগ্রহণে থাকছেন কংগ্রেস সভাপতি, তৃণমূলের প্রত্যাখ্যান

তবে এক দশকের মধ্যে এখন ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি মোদী ও তার দল। কারণ আগের দুই মেয়াদের মতো এককভাবে সরকার গঠন করতে পারছে না। সে জন্য জোটের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের।

এমন পরিস্থিতি মোদী ও তার দলের জন্য চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করা হচ্ছে। ইসলামোফোবিয়া ও ধর্মীয় সংঘাত ছড়ানোর ক্ষেত্রে মোদী ও তার দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে ব্যর্থতা। এর মধ্যে অন্যতম হলো বেকারত্ব।

দ্য আনফিনিস্ড কোয়েস্ট: ইন্ডিয়া সার্স ফল মেজর পাওয়ার স্ট্যাটাস ফরম নেহেরু টু মোদী গ্রন্থের লেখক টি.ভি. পল বলেন, বিভিন্ন এজেন্ডায় সরকার টিকিয়ে রাখতে মোদীকে এখন অনেক সময় দিতে হবে। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে তাকে।

মোদীর নতুন মেয়াদে দিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের যে সম্পর্ক রয়েছে তাতে কোনো ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। মূলত এই সম্পর্কের মাধ্যমেই ক্ষমতার ইস্যুতে ওপরে উঠে এসেছেন মোদী।

Advertisement

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বড় অংশীদার হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে ভারতের। চীনের হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার যে কোয়াড গঠন করা হয়েছে তারও অন্যতম সদস্য ভারত।

মোদীর জয়ের পর এক অভিনন্দন বার্তায় জো বাইডেন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বের প্রশংসা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই সম্পর্ক শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিউইয়র্কের এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ এশিয়া ইনিশিয়েটিভের পরিচালক ফারওয়া আমের বলেন, দুই দেশের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে একই ধরনের উদ্বেগ রয়েছে এবং ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছে।

তিনি বলেন, আমরা আশা করতে পারি আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রসারিত করবে।

সাম্প্রতিক সময়ে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। যদিও মোদী মার্কিন আধিপত্যের বাইরে গিয়ে বা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কিছু ইস্যুতে কাজ করছেন। যেমন ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা সত্ত্বেও পশ্চিমাদের চপ উপেক্ষা করে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে দিল্লি। এমনকি এ ব্যাপরে সতর্ক করা হলেও পিছু হটেননি মোদী।

ভারতে সম্প্রতি বিরোধীদের ওপর দমনপীড়নের ব্যাপক অভিযোগ ওঠেছে। এ বিষয় যুক্তরাষ্ট্রেরও উদ্বেগ রয়েছে। এখন প্রশ্ন মোদীর তৃতীয় মেয়াদ কীভাবে এসবে ওপর প্রভাব ফেলবে। ভারতের মুসলিমদের কোণঠাসা করারও অভিযোগ রয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে।

মোদীর আমলে অন্যদেশে পরিচালিত কিছু কর্মকাণ্ডও ভরতকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সম্প্রতি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক শিখ নেতা হত্যায় ভারতের সংশ্লিষ্টতার কথা জানান। এর জেরে ভারতও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়।

এ ঘটনার ঠিক দুই মাস পরে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও একই ধরনের অভিযোগ আসে। যদিও দিল্লি এ অভিযোগ অস্বীকার করে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এ বিষয় তদন্তের কথা জানায়।

গত এক দশকে মোদীর বিজেপি শুধু অভ্যন্তরীণ ইস্যুতেই ভূমিকা পালন করেনি। আঞ্চলিক ক্ষেত্রেও আধিপত্য দেখিয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তান ইস্যুতে।

এর আগে সব সিদ্ধান্ত এককভাবে নিতে পারলেও এবার দৃশ্যপট ভিন্ন। এবার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের স্বার্থ জোটের কাছে উপস্থাপন করতে হবে বা অনুমতি নিতে হবে। একই সঙ্গে তীব্র বিরোধিতার মুখেও পড়তে হবে। কারণ বিরোধী জোট আগের তুলনায় অনেক বেশি আসন পেয়েছে। ফলে বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, দুর্বল অবস্থানে থাকার পরেও চীন ও পাকিস্তান ইস্যুতে আগের মতোই প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য চাপে থাকবেন মোদী।

মূলত সামকিরভাবে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে জড়াতে চান না মোদী। যদিও ২০২০ সালে চীনা সীমান্তে সংঘর্ষের ঘটনার পর ভারতের পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মোদী।

সামনের দিনগুলোতে পাকিস্তান ও চীনের ইস্যুতে ভারত কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা নজরে রাখবে বিশ্বের অন্যান্য সরকারপ্রধান ও নীতিনির্ধারকরা।

এদিকে অনেকে মনে করছেন, নির্বাচনী ফলাফলে মোদী হতাশ হলেও আর্শীবাদ হয়েছে ভারতের জন্য।

পল বলেছেন, মোদী যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতেন, তাহলে হিন্দু এজেন্ডায় গুরুত্ব দিতেন। এতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের অনেক ইস্যু চাপা পড়ে যেতো।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র হলো ভারতে একটি ঐতিহ্য। এমন নির্বাচনের মাধ্যমে ভারতের মর্যাদা বাড়বে।

তিনি বলেন, যথাযথ গণতান্ত্রিক ধারায় ভারতের ফিরে আসা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের জন্য কল্যাণকর। কিন্তু সব কিছু নির্ভর করছে মোদী কীভাবে খেলবেন তার ওপর।

সূত্র: সিএনএন

এমএসএম