অর্থনীতি

১০ টাকা ভ্যাটের আড়ালে ৯০ টাকা ঘুস নেয় এনবিআর

১০ টাকা ভ্যাট আদায়ের আড়ালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৯০ টাকা ঘুস নেয় বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এমন অভিযোগ করে এনবিআরকে এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

Advertisement

সেই সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত করার আগে ১৫টি দাবি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বাজুস। এই দাবি পুনর্বিবেচনা না করা হলে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে রোববার (৯ জুন) বাজুস কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনবিআরের বিরুদ্ধে ঘুসের অভিযোগ করে বাজুস তাদের দাবি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায়।

বাজুসের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন। এ সময় বাজুসের মুখপাত্র ডা. দিলীপ কুমার রায়, উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল এবং বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের সদস্য সচিব ও কার্যনির্বাহী সদস্য পবন কুমার আগরওয়াল উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

আনোয়ার হোসেন বলেন, বাজুসের পক্ষ থেকে আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে আমাদের বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। গত কয়েকটি বছরের প্রাক-বাজেটে বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান বাজুসের দাবি পূরণের অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, জুয়েলারি শিল্পে যখন নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার উৎসাহ প্রদান করছে বাজুস, তখন এনবিআর নীতিসহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসছে না। পাশাপাশি সারাদেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের নামে হয়রানি করছে। ১০ টাকা ভ্যাট আদায়ের আড়ালে ৯০ টাকা ঘুস নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে এনবিআরকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আরও পড়ুনসোনা চোরাচালানের মূলহোতারা আড়ালে, ধরা পড়ছে চুনোপুঁটিনিবন্ধিত সব সোনার দোকানে ইএফডি যন্ত্র বসাতে চিঠি

এনবিআরের বিরুদ্ধে ১০ টাকা ভ্যাট আদায়ের আড়ালে ৯০ টাকা ঘুস নেওয়া সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা অনেক কথা বলি, অনেক কথা বলতে পারি না বাধ্য হয়ে। এখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এজন্য আমরা এই সত্য কথা (এনবিআর ঘুস নেয়) সোজা করে বলার চেষ্টা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে সোনা, স্বর্ণালংকার, রুপা বা রুপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাট হার পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন শতাংশ করাসহ মোট ১৫টি দাবি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বাজুস। সোনার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাট হার পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে তিন শতাংশে নামিয়ে আনলে সরকার প্রতি বছর প্রায় এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে পারবে বলে জানিয়েছে বাজুস।

Advertisement

আরও যে সব দাবি জানিয়েছে বাজুস

> ইএফডি মেশিন যত দ্রুত সম্ভব নিবন্ধন করা সব জুয়েলারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করতে হবে।

> অপরিশোধিত সোনা আকরিক’র ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি (কাস্টম ডিউটি) পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে আইআরসি ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের ক্ষেত্রে পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধু জুয়েলারি খাতের জন্য রেয়াতি হারে এক শতাংশ নির্ধারণ করা।

> আংশিক পরিশোধিত সোনার ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসি ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার পাঁচ শতাংশ করা।

> সোনা পরিশোধনাগার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সোনার বর্জ্য ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত শুল্ক হার সিডি (কাস্টম ডিউটি) পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করা। সেই সঙ্গে বর্তমানে বলবৎ থাকা ১৫ শতাংশ ভ্যাট, পাঁচ শতাংশ এটি (অ্যাডভান্স ট্যাক্স) এবং ৫ শতাংশ এআইটি (অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স) রহিত করা।

আরও পড়ুনব্যবসায়ীদের ওপর আরও বেশি করের বোঝা চাপানো হচ্ছে

> হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাত করণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা রাফ ডায়মন্ডের সিডি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশ করা, এসডি ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্যে নিয়ে আসা, ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা, এটি পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন শতাংশ করা। সেই সঙ্গে পাঁচ শতাংশ এআইটি এবং তিন শতাংশ আরডি রহিত করা।

> ল্যাব গ্রাউন ডায়মন্ডের সিডি পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশ করা, ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা এবং এটি পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন শতাংশ করা।

> বৈধপথে মসৃন হীরা আমদানিতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা মসৃন হীরা ৪০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করার শর্তে এসডি ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা।

> সোনা পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে প্রদান।

>সোনার অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে প্রদান।

> আয়কর আইন, ২০২৩ এর ১৪০ (৩) (ক) ধারা অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তি’র আওতায় দেশের জুয়েলারি শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কর-অব্যাহতি প্রদান।

> ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত-২০২১)’ এর ৮.২ উপধারার অনুসারে ব্যাগেজ রুলস সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটক কর্তৃক সোনার বার আনা বন্ধ করা এবং ট্যাক্স ফ্রি সোনার অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করা।

> বৈধভাবে সোনার বার, সোনার অলংকার, সোনার কয়েন রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করা শর্তে রপ্তানিকারকদের মোট ভ্যালু অ্যাডিশনের ৫০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া।

> এইচ এস কোর্ড ভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্ক হার হ্রাস করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্ক হার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা প্রদান করা।

> মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০২২ ধারা-১২৬ক অর্থ আইন, ২০১৯ (২০১৯ সালের ১০নং আইন) এর ১০২ ধারাবলে, চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের উদ্ধার করা সোনার মোট পরিমানের ২৫ শতাংশ উদ্ধারকারী সংস্থার সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে দেওয়া।

এমএএস/ইএ/জেআইএম