সোশ্যাল মিডিয়া

কোরবানির গরুর বাহারি নাম, বাদ যান না তারকারাও

‘মহেশ’ অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি গল্পের নাম। গল্পের নায়ক গফুরের প্রিয় গরুর নাম ‘মহেশ’। মহেশ না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছিল। তাতে ফুটে উঠেছিল গফুর আর আমিনার হাহাকার। ফলে গরুটিই হয়ে উঠেছিল গল্পের কেন্দ্রবিন্দু। ফলে তার গল্পের নাম রেখেছিলেন মহেশের নামেই।

Advertisement

গত কয়েক বছরে ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহা এলেই গরুর বাহারি নাম চোখে পড়ে। একসময় গরুর নাম রাখা হতো শরীরের বর্ণ দেখে। রং সাদা হলে ধলা বা ধলু, কালো হলে কালু, লাল হলে লালু নাম রাখা হতো। কেউ গরুর মেজাজ অনুযায়ী রাম রাখতেন রাজা, বাদশা বা সম্রাট।

তবে বর্তমানে গরুর নাম রাখা হয় জায়েদ খান, ডিপজল, মিশা, শাকিব খান, প্রিন্স মামুন বা তাহেরী। সেদিন একটি ভিডিও দেখলাম সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে দেখা গেলো, এবার একটি গরুর নাম রাখা হয়েছে ‘তাহেরী’। কারণ জানতে চাইলে গরুর মালিক জানান, গরুটি তাহেরীর মতো পাগলামী করে প্রচুর। তাহেরীর মতো ক্ষ্যাপাটে স্বভাবের। তাই গরুর নাম রাখা হয়েছে তাহেরী।

সম্প্রতি কবি ও সাংবাদিক রাশেদুল হাসান তার এক পোস্টে লিখেছেন, ‘গরুর ব্যবসা যখন গৃহস্থ আর ব্যাপারীদের হাতে ছিল; তখন দাম কম ছিল। যখন বড়লোকরা এগ্রো নাম দিয়ে ব্যবসা শুরু করলো; তখনই দাম বাড়তে শুরু করলো। গরু সুষম খাবার খাওয়া শুরু করলো। গরু স্বাস্থ্য সচেতন হলো। জিম করা শুরু করলো। হ্যান্ডসাম হওয়া শুরু করলো। উঁচু জাতে উঠলো। নিজের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করলো। চমকপ্রদ নাম ধারণ করতে শুরু করলো...। (সংগৃহীত ও সামান্য সংশোধিত)

Advertisement

আরও পড়ুনশিল্পাচার্যের আঁকা একটি ছবি নিয়ে প্রশ্ন এবং জবাবপরীক্ষার ফলাফল কি সফলতার মানদণ্ড?

আরেকটি ভিডিওতে দেখলাম সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। তার নামে গরুর নাম রাখা নিয়ে প্রশ্ন করা হলো। জায়েদ তখন খান বলেছেন, ‘একটা মানুষ তার প্রিয় জিনিসটাকে বিক্রি করছে আমার নাম দিয়ে। তিনি লাভবান হচ্ছেন আমার নাম ব্যবহার করে। করুক না। আমার তাতে কিছু আসে-যায় না। আমি এসব কেয়ার করি না।’ তারই জবাবে হয়তো পুলক রাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘গরুর নাম ‘জায়েদ খান’। নায়ক বললেন সমস্যা নেই।’

এই তো সেদিন একজনের পোস্টে চোখ আটকে গেলো। তার পোস্ট ছিল এমন, ‘১৫ লাখে মিলবে ৩০ মণ ওজনের শান্ত’। পোস্টে একটি ফটোকার্ড যুক্ত। সেটি পোস্ট করে সাজেদুর আবেদীন শান্ত নামের এক কবি ও সাংবাদিক লিখেছেন, ‘...আর নাম পেলো না, শেষমেষ আমার নাম।’ এভাবে মজাও নিচ্ছেন অনেকে। অনেকে করছেন সমালোচনাও।

তবে ইসলামের দৃষ্টিতে, কোরবানি করা ওয়াজিব। প্রত্যেক সামর্থবান মুসলমানকে কোরবানি করতে হয়। তাই ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত পশুর নাম এমন না রাখাই ভালো। রাখলেও মানুষের নামে না রেখে রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাখা উচিত। যাতে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য নষ্ট না হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে বা পত্রিকার শিরোনাম হতে পশুর নাম নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সংযত হওয়া জরুরি। এতে কোরবানির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হতে পারে।

এসইউ/জেআইএম

Advertisement