বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ই কেন্দ্রে সরকার গড়তে চলেছে। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার খুব বেশি দিন টিকবে না। দলের জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকের পর এমনটাই জানালেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা ব্যানার্জী। তার মতে, শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রে সরকার গড়বে ‘ইন্ডিয়া’। তার কথায়, ইন্ডিয়াই আগামী দিনে সরকার গড়বে। সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। এখন আমরা শুধু পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে চলছি।
Advertisement
ভোটের ফল ঘোষণার পর দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক হয়েছে। এতে যোগ দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অখিলেশ যাদব, রাঘব চড্ডা, উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেছেন তিনি। প্রথম দু’জনের সঙ্গে অভিষেকের বৈঠক হয়েছে দিল্লিতে। তৃতীয়জনের সঙ্গে মুম্বাইয়ে গিয়ে বৈঠক করেছেন তিনি।
শনিবার মমতা জানান, আপাতত তার এবং ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের রণনীতি ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’। অর্থাৎ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা এবং সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা। পাঁচ বছর মোদী এই সরকার টেকাতে পারবেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মমতা বলেন, এটা আপনারা কেউ ভাববেন না যে, ‘ইন্ডিয়া’ এখন কিছু করেনি বলে আগামী দিনে করবে না। আমরা অপেক্ষা করছি। কারণ মোদীকে কেউ চায় না। এই দেশ পরিবর্তন চায়।
লোকসভা ভোটের ফলাফল দেখে মোদীর প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল বলেও জানান মমতা। তার কথায়, এত বড় হারের পর ওর উচিত ছিল পদত্যাগ করা। আমি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেতাম, পদে থাকতাম না। বিরোধ জোট ‘ইন্ডিয়া’ এবং এনডিএ-র শরিক নেতাদের মধ্যে তুলনাও টেনেছেন মমতা। তিনি বলেন, এনডিএ-তে যারা আছেন, তাদের চাহিদা অনেক বেশি। আমরা কিছু চাই না। আমরা শুধু মানুষের ভালো চাই।
Advertisement
লোকসভায় ২৯২টি আসনে জয় পেয়েছে এনডিএ। ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ২৩৩টি আসন। এনডিএ সরকার গড়লেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। বারাণসী কেন্দ্র থেকে নরেন্দ্র মোদীর জয়ের ব্যবধানও এখনও পর্যন্ত তার রাজনৈতিক জীবনে সর্বনিম্ন।
এই পরিস্থিতিতে শরিক দলগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিজেপি। তাদের সমর্থনেই রোববার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদী তৃতীয়বারের মতো শপথ নিতে চলেছেন। মমতা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত সেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি ডাক পাননি। পেলেও যেতেন না। নতুন সরকারকে শুভেচ্ছাও জানাবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে শুভেচ্ছা জানাবেন দেশের মানুষকে।
পশ্চিমবঙ্গে এবার ২৯টি আসনে জিতেছে তৃণমূল। কিন্তু মমতা দাবি করেছেন, ২৯টি নয়, আসলে তাদের ৩৫টি আসন পাওয়ার কথা ছিল। নির্বাচন কমিশন কারচুপি করে বাকি ছয়টি আসনে তৃণমূলকে হারিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মমতার অভিযোগ, লোডশেডিং করিয়ে তাদের প্রার্থীদের হারানো হয়েছে। মমতা বলেন, আমরা ২৯টি নয়, ৩৫টি আসনে জিতেছি।
মমতা আরও বলেন, কমিশন জোর করে, লোডশেডিং করে আমাদের হারিয়ে দিয়েছে। কমিশনের সাহায্যে আমাদের একজন নারী প্রার্থীকেও হারানো হয়েছে। কারচুপির প্রসঙ্গে আলাদা করে পূর্ব মেদিনীপুরের কথা বলেছেন মমতা। স্পষ্ট করে না বললেও তমলুক এবং কাঁথি কেন্দ্রের কথাই যে তিনি বলতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট। অনেকের মতে, নারী প্রার্থী বলতে তিনি বিষ্ণুপুরের সুজাতা মণ্ডলের কথা বলেছেন। তার হারের ব্যবধান বেশ কম। সূত্রের খবর, দলের বৈঠকে সুজাতার লড়াইয়ের প্রশংসা করেছেন মমতা।
Advertisement
বুথফেরত সমীক্ষার মাধ্যমে শেয়ারবাজারে দুর্নীতি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন মমতা। তার কথায়, বুথফেরত সমীক্ষার মাধ্যমে শেয়ারবাজারে দুর্নীতি করা হয়েছে। এটা খুব বড় দুর্নীতি। ভবিষ্যতে এটা নিয়ে আমরা আইনের পথে হাঁটব কি না, সেই ভাবনাচিন্তা করছি। আমরা এর তদন্ত চাই। ভুল বুথফেরত সমীক্ষা দেখানো হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এর আগে এ বিষয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবি তুলেছেন। যদিও বিজেপির দাবি, অষ্টাদশ লোকসভা এখনও গঠন করা হয়নি। তার আগে এই তদন্ত সম্ভব নয়।
টিটিএন