আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিনাপ্রশ্নে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ দেওয়াকে ‘বড়শিতে আধার গেঁথে মাছ শিকারের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে ‘ধূম্রজাল সৃষ্টির কৌশল’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘এটা (বড়শিতে আধার গেঁথে মাছ শিকার) হাস্যকর কথা। আমরা তো দেখলাম যে আপনারা ওই মাছের টোপ দিয়ে যাদেরকে ধরেন তারা আপনাদের লোক। নিজেরাই তো এর (দুর্নীতির) সঙ্গে জড়িত।’
শনিবার (৮ জুন) দুপুরে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। সিরাজুল আলম খানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশের পরদিন শুক্রবার বিকেলে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলি, মাছ ধরতে গেলে তো আধার দিতে হয়, দিতে হয় না? আধার ছাড়া তো মাছ আসবে না। (কালো টাকা সাদা করার সুযোগ) সে রকম একটা ব্যবস্থা। এটা আগেও হয়েছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই শুরু করেছিল, এরপর সব সরকারই করে।’
Advertisement
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাজেট দেখলেই বুঝতে পারবেন যে রাঘব-বোয়ালদের খাবারের আরেক ব্যবস্থা করেছে। প্রতিবছর একই ঘটনা ঘটছে। যারা অর্থনৈতিক বিশ্লেষক তারা বলছেন, এটা (প্রস্তাবিত বাজেট) শুধুমাত্র ক্ষতি ছাড়া আর কিছু করবে না।’
তিনি বলেন, ‘যেখান সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্যে মূল্যস্ফীতি। দ্রব্যমূল্য এত বেশি বেড়ে গেছে যে, এটা সাধারণ মানুষের কাছে সহনীয় হচ্ছে না। আজ এসব কথা বলে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে। মানুষকে কতদিন প্রতারিত করে রাখা হবে?’
সিরাজুল আলম খানের প্রতি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের শ্রদ্ধা জানানোর কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি মাহমুদুর রহমান মান্নার পাশে বসে ছিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম সিরাজুল আলমের মৃত্যুর পরে আওয়ামী লীগ থেকে কোনো শোকবাণী দেওয়া হয়েছিল কি না? মান্না বললেন, না দেওয়া হয়নি।’
আরও পড়ুন
Advertisement
তিনি বলেন, ‘একবার ভাবুন, কত বড় অকৃতজ্ঞ হলে একটি দল যাদের মূল চালিকাশক্তির মধ্যে এই মানুষটি ছিলেন তাকে তারা সহানুভূতি দিতে চায়নি। আজ সেই একই কারণে জিয়াউর রহমানকে তারা সহ্য করতে পারে না, অনেককে পারে না। এত বছর পরে প্রত্যেকেই যারা এদেশের জন্য অবদান রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অবদানকে অস্বীকার করাটা সম্পূর্ণভাবে অকৃজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু না। আমি আমার দলের পক্ষ থেকে সিরাজুল আলম খানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে যারা বসে আছি আমরা সবাই বাংলাদেশের এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। মুক্তি চাই বলেই আজ আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। আমরা মনে করি যে, বাংলাদেশ একটা ভয়ংকর সংকটের মধ্যে পড়েছে। যেখানে বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। এমন একটা শাসকগোষ্ঠী জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে যারা দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে আপনারা অনেকই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আপনাদের কোনো স্বপ্নই বাস্তবায়িত হবে দূরে থাক, সে স্বপ্ন থেকে বহুদূরে বাংলাদেশকে তারা ছিটকে দিচ্ছে। এই অবস্থায় আজ সিরাজুল আলম খানকে আবার নতুন করে মনে করা দরকার। মনে করা দরকার যে তার অসাধারণ সাংগঠনিক শক্তি, তার সেই তাত্ত্বিক দর্শনিক যে যোগ্যতা- সেই যোগ্যতার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং সেই নামে স্বাধীন হতে তিনি সাহায্য করেছিলেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সবাই একসঙ্গে আন্দোলন করছি। কেন করছি? আমরা সবাই মনে করি যে এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনাটা একমাত্র উপায়। আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনা, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা, বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা, কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করা। এসব বিষয় আজ আমাদের সবচেয়ে বেশি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এবং আমাদের তা অর্জন করতে হবে।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। জেএসডির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন- নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ নুরুল আম্বিয়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপ্ন, কেন্দ্রীয় নেতা তানিয়া রব, মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, কে এম জাবির প্রমুখ।
কেএইচ/কেএসআর/এএসএম