মঞ্চসারথি আতাউর রহমান ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ শিরোনামে একটি হৃদয়গ্রাহী নাটক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে 'বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে' উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটির সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটকটি ‘বাংলাদেশ পুলিশ নাট্যদল’ প্রযোজিত। এই নাট্য প্রযোজনা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সর্বত্র অভিনীত হয়েছে এবং অগনিত নাট্যবোদ্ধার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। বাংলদেশের জেলা ও মহকুমা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে এই নাটকটি অত্যন্ত সুনামের সাথে অভিনীত হয়ে বিপুলভাবে দর্শকদের মন জয় করেছে। আজ অব্দি এই নাট্য প্রযোজনাটির ১৪৯টি প্রদর্শনী সম্পন্ন হয়েছে।
Advertisement
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিশেষ আগ্রহে ও অনুপ্রেরণায় পুলিশ পরিদর্শক জাহিদুর রহমান জাহিদ নাটকটি রচনা করেন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন। আমি নাট্য ভুবনের মানুষ হিসেবে নাটকটি অত্যন্ত আগ্রহের সাথে দেখেছি এবং প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। আমাদের সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি নাটকটি দেখছেন এবং এই হৃদয় বিদারক জাতীয় ট্রাজেডি তাঁদের সবাইকে আলোড়িত করছে এবং অশ্রুসিক্ত করেছে।
নাটকের উপজীব্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুবর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যার চিত্র। যা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট মাসে সংঘঠিত হয়েছিল। তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বয়স ছিল মাত্র ৫৫ বছর। এই হত্যাকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এর আগেও আমেরিকা আব্রাহাম লিঙ্কনসহ আমাদের উপমহাদেশের একাধিক রাষ্ট্রনায়ক আততায়ীর হাতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। শেখ মুজুবুর রহমানের সমগ্র পরিবারের সদস্যদের এইভাবে নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাসে ইতিপূর্বে কখনও ঘটেনি।
ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে দেশ ও বিদেশের কুশীলবের চক্রান্তের ফলে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশকে নিজেদের কুক্ষিগত করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দু'ই সুজাত ও কীর্তিমান কন্যা বিদেশে থাকার কারণে নিস্তার পেয়েছিলেন। তাঁরা হলেন জাতির পিতার সুজাত ও প্রতিভাবান কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। সততা ও সত্যের মৃত্যু নেই। বর্তমানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশকে আলোর পথযাত্রী করে তুলেছেন।
Advertisement
প্রযোজনার কথায় ফিরে আসি। সেট, আলোক সম্পাত, শব্দ সঙ্গীত এবং সর্বোপরি অভিনয় পারঙ্গমতা নিয়ে সুম্পূর্ণ নাটকটি আমাকে আলোড়িত করেছিল। শেখ রাসেলের মত শিশুকে হত্যা করার সময় তার অসহায় কান্না জড়িত সংলাপ আজও আমার কানে ভাসে। আলোক সম্পাতের কৃতিত্বে আলো-আঁধারের খেলাতে সম্পূর্ণ নাট্যক্রিয়া সত্যের মত মনে হচ্ছিল দর্শকদের কাছে। আমার ধারণায় বঙ্গবন্ধুকে গুলিবিদ্ধ করার পরে তিনি ৩২নং বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়েন এই নাট্য প্রযোজনায় সাংকেতিকভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের মোটা ফ্রেমের চশমা সিঁড়ি দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়েছে যা আমার কাছে অত্যন্ত শৈল্পিক ও নান্দনিক বলে মনে হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সু-অভিনীত নাট্য প্রযোজনা "অভিশপ্ত আগস্ট'কে আমি বিপুলভাবে অভিনন্দিত করছি এবং সমগ্র বাংলাদেশে ও দেশের বাইরে এই নাট্য প্রযোজনার অগণিত প্রদর্শনী প্রত্যাশা করছি। এই নাটকের সকল কলাকুশলী প্রশংসনীয় কাজ করেছেন, যেজন্যে আমি তাঁদের সাধুবাদ জানাই।
আমার মনে হয়েছে কর্নেল জামিল বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের খবর ফোনের মাধ্যমে জানতে পেরে সম্পূর্ণ ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় আততায়ীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন মনে করি। তার সততা ও কর্ম নিষ্ঠাকে আমি উদাহরণ যোগ্য বলে মনে করি। তাঁর সম্পর্কে ছোট একটা সংলাপ থাকলে ভাল হত। যা হোক, এটা তেমন বড় কোন স্খলন আমি মনে করি না।
‘অভিশপ্ত আগস্ট’ কে আমি একটি সুচারু ও হৃদয়গ্রাহী নাট্য প্রযোজনা হিসেবে বিবেচনা করি। এই নাটকের শব্দ-সঙ্গীত এবং আলোর ব্যবহার এবং সর্বোপরি অভিনয় শৈলী আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছে।
Advertisement
এই নাটকের নির্দেশক জাহিদুর রহমান জাহিদকে আমি অভিনন্দন জানাই তাঁর এমন সুচারু ও হৃদয়গ্রাহী প্রযোজনা বাংলাদেশের নাট্য-দর্শকদের উপহার দেবার জন্য। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মাননীয় কমিশনার জনাব হাবিবুর রহমানকে এই নাট্যবিষয়ে গবেষণা ও তথ্য সংকলনের জন্যে সাধুবাদ জানাই। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সু-অভিনীত নাট্য প্রযোজনা "অভিশপ্ত আগস্ট'কে আমি বিপুলভাবে অভিনন্দিত করছি এবং সমগ্র বাংলাদেশে ও দেশের বাইরে এই নাট্য প্রযোজনার অগণিত প্রদর্শনী প্রত্যাশা করছি। এই নাটকের সকল কলাকুশলী প্রশংসনীয় কাজ করেছেন, যেজন্যে আমি তাঁদের সাধুবাদ জানাই।
নাটকের জয় হোক। জয় হোক সত্যের।লেখক: অভিনেতা, নাট্য-নির্দেশক, লেখক, কবি, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত।
এইচআর/জেআইএম