সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ.বি. মির্জ্জা বলেছেন, যে ধরনের পদক্ষেপ বাজেটে নেওয়া হয়েছে, এর ফলে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামবে না। সেটা সাড়ে ৬ শতাংশের উপরে নিশ্চয়ই থাকবে। যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয় না।
Advertisement
শনিবার (৮ জুন) সকালে রাজধানীর এফডিসিতে ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে ছায়া সংসদ’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজিজুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এই বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সংসদে প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি ও বিপক্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। মন্ত্রী এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেন।
Advertisement
সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে বাজেটে পদক্ষেপ নেওয়া হলে এক্ষেত্রে সুশাসন জরুরি বলে জানান সাবেক এই উপদেষ্টা। বলেন, ভিজিডির চাল খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়। যারা সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আসার কথা না তারাও বেষ্টনীতে ঢুকছেন।এই সমস্যাগুলো সরকার স্বীকারও করতে চায় না। যদি সমস্যার স্বীকৃতি না দেয়, তাহলে সমাধান হবে কীভাবে।
রিজার্ভ পরিস্থিতি সংকটময় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, রিজার্ভ নিয়ে ধোঁয়াশা অনেকটাই কেটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, মে মাসে রিজার্ভ ছিল ১৮ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে, উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঠিক শ্রীলঙ্কার অবস্থায় আমরা পৌঁছাইনি। রিজার্ভ বাড়াতে দক্ষ শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানোর আহ্বানও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
দুষ্টচক্রের মাথায় হাত বুলালেও কালো টাকা সাদা করবে না: সিপিডি পুঁজিবাজারের সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে কি, প্রশ্ন এনবিআর চেয়ারম্যানেরহাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে নানা সংকটের কথা বলা হলেও এর উত্তরনের কৌশলগত কোনো স্পষ্টতা নেই। আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নেই কোনো পদক্ষেপ। অর্থপাচার রোধ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, অপচয় কমানো ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে নেই কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা। যারা কর ফাঁকি দেন তাদের ওপর চাপ না বাড়িয়ে যারা নিয়মিত কর দেন তাদের ওপর বাড়তি কর আদায়ের ছক দেখা গেছে ঘোষিত বাজেটে।
Advertisement
তিমি আরও বলেন, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা, পুঁজি পাচার, হুন্ডি বন্ধসহ ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে প্রস্তাবিত বাজেট কোনো উদ্যোগের কথা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঘাটতি বাজেট পূরণে রয়েছে ব্যাপক ব্যাংক নির্ভরতা।
প্রস্তাবিত বাজেটে চাল, গম, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, ডাল, ভোজ্যতেল চিনি আদাসহ ত্রিশটি পণ্যের ওপর উৎস কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এতে এই পণ্যগুলোর দাম কমার কথা।
প্রশ্ন হচ্ছে ভোক্তারা কি দাম কমের সেই সুবিধা পাবে? নাকি দামের যে অবস্থা সেই অবস্থাই থাকবে। অন্যদিকে, যেসব পণ্যের ওপর কর বাড়ানো হচ্ছে সেগুলো বাজেট পাশের আগেই দাম বাড়া শুরু হয়ে যায়। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে দেখলাম ফোনকল ও ইন্টারনেটের ব্যয় বাড়বে। যেখানে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি সেখানে কথা বলার ওপর খরচ বাড়া নিয়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
অন্যদিকে, মেট্রোরেলের ওপর এনবিআর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলেছিল। যার প্রতিবাদ করেছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের । কিন্তু বাজেট প্রস্তাবনায় মেট্রোরেলের ভাড়ায় ভ্যাট মওকুফের কোনো ঘোষণা নেই।
এসএম/এসএনআর/এমএস