তথ্যপ্রযুক্তি

পুলিশের ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশিদের তথ্য বিক্রির অভিযোগ

পুলিশের দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি নাগরিকদের অতি সংবেদনশীল এবং ক্লাসিফায়েড তথ্য অনলাইনে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) ডাটাবেইজে প্রবেশ করে এসব তথ্য নিজেদের দখলে নিয়েছিলেন তারা।

Advertisement

দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন—অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন এবং র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৬ (র‍্যাব) এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তারেক আমান বান্না।

জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছে এনটিএমসি। গত ২৮ এপ্রিল এ চিঠি দেওয়া হয় বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন এনটিএমসির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।

আরও পড়ুনসরকারি সংস্থার তথ্য চুরি ও অনলাইনে বিক্রির ঘটনা আতঙ্কজনক

প্রায় দেড় মাস আগে চিঠি দেওয়া হলেও সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়। মূলত প্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম টেকক্রাঞ্চে এনটিএমসির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরের দেওয়া সাক্ষাৎকার থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

Advertisement

এনটিএমসিএ সূত্র জানায়, পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন এবং এএসপি তারেক আমানের আইডি থেকে ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্ট প্ল্যাটফর্মে (এনআইপি) প্রবেশ করা হয়। সেখান থেকে নাগরিকদের অতি সংবেদনশীল এবং ক্লাসিফায়েড গোপনীয় তথ্য নেওয়া হয়, যার মধ্যে আছে জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের তথ্য, কল রেকর্ড, ক্রিমিনাল প্রোফাইলসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য।

বিষয়টি এনটিএমসির নজরে এলে সংস্থাটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ বাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি চিঠি দেন।

আরও পড়ুনপ্রতিটি মানুষের তথ্য সংরক্ষণ করতে চায় বিবিএস

প্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম টেকক্রাঞ্চে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বাকের বলেন, ‘বিডি সাইবার গ্যাং’ নামক টেলিগ্রাম চ্যানেলসহ একাধিক টেলিগ্রাম চ্যানেল, ফেসবুক গ্রুপ এবং হোয়াটস অ্যাপে সংগৃহীত তথ্য বিক্রি করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা এসব গ্রুপের এডমিনদের তথ্য সরবরাহ করতেন। ইন্টারনেটে বিক্রির বিষয়টি সেসব অ্যাডমিনরা দেখভাল করতেন।

Advertisement

তবে ঠিক কত সংখ্যক নাগরিকের কী পরিমাণ তথ্য এভাবে অনলাইনে বিক্রি হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেননি জেনারেল বাকের।

এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন এসপি ফারহানা এবং এএসপি তারেক। ২৫ এপ্রিল রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ‘ডাটা ব্রিচ’র তথ্য জানতে পারে এনটিএমসি। লগ সার্ভার বিশ্লেষণ করে ফারহানা এবং তারেকের আইডি থেকে অস্বাভাবিক লগ-ইন দেখতে পায় এনটিএমসি।

বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে তথ্য বিক্রির প্রমাণ পায় এনটিএমসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এনআইপিতে পুলিশের এটিইউ এবং র‍্যাব-৬ এর প্রবেশাধিকার বন্ধ রেখেছে এনটিএমসি।

আরও পড়ুনইন্টারনেট নিরাপদ করতে সচেতনতার বিকল্প নেই: টিক্যাব

অন্যদিকে এসপি ফারহানা ইয়াসমিন এবং এএসপি তারেক আমানকে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে টেকক্রাঞ্চকে জানিয়েছে এনটিএমসি পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারেক।

তবে এনটিএমসিকে দেওয়া পাল্টা চিঠিতে পুলিশের এটিইউ থেকে দাবি করা হয়, এসপি ফারহানা ইয়াসমিনের আইডি ব্যবহার করে সেসব তথ্য সংগ্রহ ও বিক্রি করেছেন দুই কনস্টেবল। তারা হলেন—সাইবার ক্রাইম উইং এর কনস্টেবল মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী এবং অপারেশন্স উইংয়ের খায়রুল ইসলাম। দুই কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এএএইচ/এমকেআর