দেশজুড়ে

ঘুম নেই কামারপাড়ায়

ব্যস্ত সময় পার করছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের কামারেরা। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় তাদের কাজ বেড়েছে। দিনরাত পরিশ্রম করছেন তারা। তাদের এ ব্যস্ততা চলবে ঈদুল আযহার দিন পর্যন্ত।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার সরঞ্জামের। এ চাহিদা পূরণে ব্যস্ততা বেড়েছে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের কামারের দোকানগুলোতে। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

কামারপল্লির কারিগররা জানান, কয়লা ও লোহার দাম অনেক বেশি। তাই তৈরিকৃত সরঞ্জাম বিক্রি বেশি হলেও লাভ কম হয়। ১০দিন পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই এ উৎসবকে কেন্দ্র কামারদের ব্যস্ততা বেড়েছে অনেক। কাজের চাপে যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন কামাররা।

উপজেলার বড়দারোগাহাট, আবুতোরাব, মিঠাছরা, করেরহাট, বারইয়ারহাট, বামনসুন্দর দারোগাহাট, আবুরহাট বাজারসহ সব বাজারের কামারের দোকান রয়েছে। এসব সরঞ্জাম উপজেলার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

আবুতোরাব বাজারের কামার সম্ভু দাশ জানান, সারা বছরের মধ্যে কোরবানি ঈদেই আমাদের বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। বর্তমানে লোহা ও কয়লার দাম বেশি। তাই তৈরিকৃত সরঞ্জাম বিক্রি বেশি হলেও লাভ কম হয়। আমরা বছরজুড়ে এ সময়ের অপেক্ষায় থাকি।

কারিগররা অভিযোগ করেন, তাদের পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারাদিন আগুনের পাশে বসে থেকে কাজ করতে হয়, এর ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মিরসরাইয়ে কমে যাচ্ছে কামার সম্প্রদায়ের মানুষ। বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে।

উপজেলার মহালংকা এলাকার কামার রনজিৎ চন্দ্র নাথ বলেন, সারাবছর আমাদের তেমন বিক্রি হয় না। তবে কোরবানি ঈদের একমাস আমাদের বিক্রি বেড়ে যায় । তবে উৎপাদন ও প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় লাভ আগের চেয়ে অনেক কম।

বড়দারোগাহাট বাজারের কানু ও সুবল কর্মকার জানান, প্রতিবছর কোরবানি ঈদে আমরা বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি করে থাকি। এবারও এসব উপকরণের চাহিদা বেড়েছে। সারাবছর আমরা যে আয় করি কোরবানি ঈদের এক মাসে তার চেয়ে বেশি আয় করতে পারি। কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি হচ্ছে কয়লা। কিন্তু এ কয়লা এখন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে কয়লা সংগ্রহ করতে হয়। বর্তমানে কয়লার দামও অনেক বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে লোহার দামও। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সেই তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি।

Advertisement

উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল কবির ফিরোজ বলেন, লোহা শিল্পের দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি, আধুনিক চাষাবাদ, ক্রেতা সংকট ও দিনদিন নিত্যপণ্য সামগ্রীর ক্রয় মূল্যবৃদ্ধি, সাংসারিক ঘানি টানতে চরম বিপাকে পড়েছেন কামাররা। তবে কোরবানি ঈদের সময় তাদের ব্যবসাবাণিজ্যে কিছুটা লাভ হয়। তা নাহলে কামারদের এ পেশায় টিকে থাকা সম্ভব ছিল না।

এম মাঈন উদ্দিন/আরএইচ/এএসএম