অর্থনীতি

দুষ্টচক্রের মাথায় হাত বুলালেও কালো টাকা সাদা করবে না: সিপিডি

করখেলাপি, ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের নিয়ে দেশে দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতি বছর এ দুষ্টচক্রের মাথায় হাত বুলিয়েও কালো টাকা সাদা করে অর্থনীতিতে আনা যাবে না বলেও মনে করে প্রতিষ্ঠানটি।

Advertisement

বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ কথা বলেন। শুক্রবার (৭ জুন) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন সাংবাদিক জানতে চান প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না। জবাবে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যতটুকু মনে আছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিহারের ৩ নম্বর অধ্যায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল দুর্বৃত্তায়ন, ঋণখেলাপি, করখেলাপিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স-নীতি ঘোষণা করবেন তারা। কিন্তু এখন যে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, সেটা দলটির নির্বাচনী ইশতিহারের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী দল। রাজনৈতিক এ দলটি যে দর্শন নিয়ে চলে, তার সঙ্গে বাজেটের এমন পদক্ষেপ বিপরীতমুখী। যিনি করখেলাপ, ঋণখেলাপ করছেন, তাদের সমন্বয়ে বাংলাদেশে দুষ্টচক্র সৃষ্টি হয়েছে। এ দুষ্টচক্রকে কি প্রতি বছর মাথায় হাত বুলিয়ে কিছু সুবিধা দিয়ে কালো টাকা সাদা করে অর্থনীতিতে নিয়ে আসা হবে, না কি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিহারে যে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা রয়েছে, সেদিকে যাওয়া হবে? বাজেটে তো সেটা আমরা দেখলাম যে কোন দিকে তারা গেলেন। এটা খুবই দুঃখজনক। এটা বন্ধ করা বড় একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আশা করি, আওয়ামী লীগের নেতারা এটা করবেন।

Advertisement

কালো টাকা সাদা করার সুযোগের পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের এবার আরও বড় সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে কালো টাকা সাদা করার পর তা নিয়ে দুদক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন তুলতে বা ব্যবস্থা নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে অস্পষ্টতা ছিল। দেখা গেলো—তারা ট্যাক্স দিয়ে টাকা সাদা করে ফেললো, কিন্তু দুদক ধরতে পারতো। এবার কিন্তু সেটাও একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্য কেউই এ নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবেন না।

বাজেটে নিয়মিত করদাতাকে তিরস্কার করা হয়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর আরও বলেন, ‘তাহলে কী দাঁড়ালো? একজন সৎ, কর্তব্যনিষ্ঠ নাগরিক, যিনি কি না প্রতি বছর সময়মতো কর পরিশোধ করছেন, তাকে তো তিরস্কার করা হচ্ছে। কারণ যিনি বছরের পর বছর কর পরিশোধ করছেন না, তাকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে ১৫ শতাংশ কর সুবিধা দিয়ে। আর যিনি সৎ তাকে গুনতে হচ্ছে ৩০ শতাংশ।

সিপিডির এ সম্মাননীয় ফেলো বলেন, কালো টাকা সাদা করার এ নীতি নৈতিকভাবেও অগ্রহণযোগ্য, অর্থনৈতিকভাবেও এটা ফলপ্রসূ না। বছরের পর বছর এ সুযোগ দিয়েও টাকা আসছে না। আমি যদি এখন কর না দেই, কয়েক বছর পর যদি সেটা ১৫ শতাংশ দিয়েই হয়ে যায়, তাহলে এখন কেন দেবো? এ সিন্ডিকেটটা মনে করে এটাও (১৫ শতাংশ) বা কেন দেবো আমি। দেশ থেকে তারা তো টাকা বের করেই ফেলেছে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এতে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

Advertisement

এএএইচ/জেডএইচ/এএসএম