অর্থনীতি

কালো টাকা সাদার সুযোগ আ’লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক

বিনাপ্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

Advertisement

সংস্থাটি বলছে, বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। তবে বিনাপ্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া এ অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একই সঙ্গে এটা নৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে সৎ করদাতাদের তিরস্কার করা হচ্ছে।

শুক্রবার (৭ জুন) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী সভাপতি ফাহমিদা খাতুন। উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহ আরও অনেকে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কর খেলাপি, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার কথা বলা হয়েছিল সরকারের ইশতেহারে। যে বাজেট দেওয়া হলো এটা অবশ্যই সাংঘর্ষিক। আওয়ামী লীগ যে ধরনের দর্শনের এটা তার একেবারেই বিপরীত। কর খেলাপি, ঋণ খেলাপি, অর্থ পাচারকারীদের যে দুষ্টচক্র বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে, এই দুষ্টচক্রকে মাথায় হাত বুলিয়ে, প্রতিবছর কিছু সুবিধা দিয়ে টাকাটা অর্থনীতিতে নিয়ে আসবো? এই রাস্তায় যাবো, নাকি আওয়ামী লীগের ইশতেহার দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে জিহাদ- সে রাস্তায় যাবো।’

Advertisement

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দুঃখজনক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করবো ইশতেহারে তারা যেটা বলেছেন সেটা বাস্তবে করবেন। এটা অনেক বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তটা তাদের নিতে হবে।’

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এই বাজেটকে নতুন সরকারের নতুন বাজেট বলে মনে হয়নি। মনে হয়েছে নতুন সরকারের একটি পুরোনো বাজেট। নতুন বাজেট প্রণয়নে যে ধরনের মুন্সিয়ানা দেখার প্রত্যাশা করেছিলাম তা নতুন অর্থমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ও অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা দেখাতে পারেননি। খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এবারের বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠবে।’

আরও পড়ুন

বাজেটের অনেক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না: সিপিডি সংকটকালে সাদামাটা বাজেট, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব নয়: সিপিডি

মূল প্রবন্ধে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘করের সর্বোচ্চ হার যেখানে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হলো, সেখানে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এটা কী ধরনের সামাজিক ন্যায্যতা, এটা একটা প্রশ্ন। এ ধরনের সুযোগ সৎ করদাতাদের প্রতি চরম অন্যায়। এটি নৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য না। এখান থেকে করও বেশি আদায় হয় না। এই সুযোগের ফলে যারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন তাদেরকেই বেশি উৎসাহিত করা হয়েছে। যারা কর দিচ্ছেন নিয়মিত তাদের তিরস্কার করা হয়েছে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘একদিকে চলছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, একই সঙ্গে রিজার্ভ সংকট আছে। এ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এসব সংকট সমাধানে বাজেটে বিশেষ কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অর্থনীতিতে এখন যেসব সমস্যা আছে, প্রথমত সেগুলো মেনে নিয়ে তার গভীরতা বুঝতে হবে। এরপর সমাধানের দিকে যেতে হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন কোনো ঘোষণা দেখা গেলো না।’

বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা, মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, ‘সংকটময় সময়ে এক্সট্রা অর্ডিনারি টাইমে একটা সাধারণ বাজেট হয়েছে। এটি অন্য বাজেটের মতোই। এই বাজেট দিয়ে সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়।’

এসএম/কেএসআর/এমএস