জাতীয়

জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের সক্ষমতা বাড়ানোর এবং প্রভাব কমানোর কার্যক্রম বেগবান করতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়ে এ প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত সবচেয়ে গভীর বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। এ অভিঘাতের গভীরতা ও ব্যাপ্তি বিবেচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের সক্ষমতা বাড়ানো এবং প্রভাব কমানোর জন্য আমরা পরিকল্পিতভাবে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছি। এ সংক্রান্ত কার্যক্রমকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে এবারের বাজেটে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।

তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাস উপযোগী পৃথিবী গড়ে তোলা এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি। ২০১১ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব বিবেচনায় এ সংক্রান্ত ১৮ক অনুচ্ছেদ সন্নিবেশ করা হয়েছে। এ উদ্যোগকে কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন প্রণয়নসহ রেগুলেটরি এবং ফিসক্যাল পলিসি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে মহান জাতীয় সংসদে আমরা ‘প্ল্যানেটারি ইমার্জেন্সি’ নামে একটি মোশন গ্রহণ করেছি। এ সকল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ডিসেম্বর ২০২৩-তে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এবং জাতিসংঘ সমর্থিত গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট মোবিলিটি সংস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করেছে।

অর্থমন্ত্রী জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় আমরা ২০০৯ সালে বিসিসিএসএপি প্রণয়ন করি, যা বর্তমানে হালনাগাদ করা হচ্ছে। বিসিসিএসএপি-এ বর্ণিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ) পরিচালনার জন্য ২০০৯-২০১০ অর্থবছর হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। যার অধীনে এ পর্যন্ত ৯০৮টি সরকারি এবং ৬১টি বেসরকারিসহ মোট ৯৬৯টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৭২১টি প্রকল্প সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ক্লামেন্ট ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করা হয়, যা ২০২০ সালে হালনাগাদ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি সরকারের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনায় গুরুত্বসহকারে স্থান পাচ্ছে- বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সকল সরকারি প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়নের সময় আবশ্যিকভাবে জলবায়ু সংশ্লেষ বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে আমরা জলবায়ু সংশ্লিষ্ট ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বাজেটে জলবায়ু সংক্রান্ত বরাদ্দের পরিমাণ এবং প্রকৃত ব্যয় নিরূপণ করছি। এছাড়া সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় গৃহীত প্রকল্পের সুষ্ঠু সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিসিডিপি গঠন করা হয়েছে।

Advertisement

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশব্যাপী ২ হাজার ৯০৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ২ হাজার ৪৭৪টি তরল বর্জ্য নির্গমনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইটিপি স্থাপন করা হয়েছে এবং ৬৫৬টি তরল বর্জ্য নির্গমণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে জিরো ডিসচার্জ প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া, ২৭টি নদীর ৯৯টি স্থানে নিয়মিত পানির গুণগত মান মনিটরিং করা হচ্ছে এবং শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী জানান, সামাজিক বনায়নসহ দেশব্যাপী বনায়ন কার্যক্রম ও বৃক্ষরোপণের ফলে দেশে মোট বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ দেশের মোট আয়তনের ২২.৩৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ৮টি জাতীয় উদ্যান, ২০টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ৪টি ইকোপার্ক, একটি উদ্ভিদ উদ্যান, দুটি মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া (সোয়াচ অব নো-গ্রাউন্ড ও সেন্টমার্টিন) এবং দুটি বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকাসহ মোট ৩৭টি সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে সংরক্ষিত এলাকার সংখ্যা মোট ৫৩টি।

এমএএস/এমএএইচ/জেআইএম