উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও এক ব্যক্তির নামে পাসপোর্ট ইস্যু না করায় সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামানকে আদালত অবমাননার অভিযোগে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
ওই কর্মকর্তা তলবে হাজিরের পর শুনানি শেষে বুধবার (৫ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাকে দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি দেন।
আদালতে এদিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। ওই কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান।
শিশির মনির জানান, আদালতে ফৌজদারি মামলা চলমান থাকার কথা বলে সুনামগঞ্জের এক ব্যক্তিকে পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি। পরে ওই ব্যক্তি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। রিটের শুনানি শেষে আদালত ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ আদেশের পরও পাসপোর্ট বুঝিয়ে দেননি। এরপর আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগ আদালত অবমাননার রুল জারি করেন এবং ওই কর্মকর্তাকে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন।
Advertisement
আদালতে হাজির হয়ে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা সন্তোষজনক নয় বলে রায়ে উল্লেখ করেন আদালত এবং তাকে আদালত অবমাননার জন্য বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ওই আদালতে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য শাস্তি দেন।
আরও পড়ুন
আফতাবনগরে পশুর হাটের বিজ্ঞপ্তি, আদালত অবমাননার নোটিশ এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাআদালত বলেছেন, ফৌজদারি মামলা চলমান কিংবা তদন্ত চলমান- এ কথা বলে কাউকে পাসপোর্ট দেওয়া থেকে বিরত রাখা যাবে না। অতীতেও হাইকোর্ট বিভাগ এ ধরনের রায় দিয়েছেন।
শিশির মনির বলেন, এ ধরনের যত পাসপোর্ট আটকে আছে এখন সবগুলো রিলিজ করে দেওয়া উচিত। মামলা থাকলে পাসপোর্ট পাবেন না- এ ধরনের কোনো আইন বাংলাদেশে নেই।
Advertisement
এর আগে হুসাইন আহমেদ নামে এক ব্যক্তি পাসপোর্ট পেতে ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন। এ লক্ষ্যে তিনি আবেদনের কাগজের নথি জমা, বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্টসহ যাবতীয় নিয়ম সম্পন্ন করার পর তাকে একই বছরের ১৩ নভেম্বর তারিখ উল্লেখ করে ডেলিভারি স্লিপ দেওয়া হয়।
তবে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময়কালে স্থানীয় থানা থেকে জানানো হয়, তার নামে ৬টি ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন। হুসাইন আহমেদ থানাকে অবহিত করে জানান, মামলাগুলোর পাঁচটিতে তিনি খালাস ও একটি বিচারাধীন। কিন্তু মামলা বিচারাধীন থাকায় তার পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রতিবেদন নেতিবাচক আসে।
এরপর হুসাইন আহমেদ পাসপোর্ট চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠান। এর জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। গত ৩ মার্চ হাইকোর্ট ১৫ দিনের মধ্যে হুসাইন আহমেদকে পাসপোর্ট সরবরাহের নির্দেশসহ রুল জারি করেন। তবে আদেশের অনুলিপি সুনামগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে জমা দিয়ে পাসপোর্ট সরবরাহ করতে অনুরোধ করেন।
পাসপোর্ট কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান গত ৩ এপ্রিল হুসাইন আহমেদকে চিঠি দিয়ে ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন থাকলে পাসপোর্ট ইস্যু না করার কথা জানিয়ে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন দাখিল করেন। তখন আদালত রুল জারি করে পাসপোর্ট কর্মকর্তাকে তলব করেন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে শাস্তি দেন।
তবে আদালত অবমাননার রুল জারির পর হুসাইন আহমেদের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয় এবং তিনি মঙ্গলবার (৪ জুন) পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী শিশির মনির।
এফএইচ/ইএ