জাতীয়

‌‘মাটির ক্ষয়রোধে প্রয়োজন টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনা’

‘বর্তমানে চাষাবাদে হাইব্রিড জাতগুলোকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অতিমাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। যা মাটির গুণাগুণ নষ্টের পাশাপাশি পরিবেশ ধ্বংস করছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের একসময় মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। এজন্য টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনায় মনোযোগী হতে হবে আমাদের।’

Advertisement

বুধবার (৫ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দিন এসব কথা বলেন। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পক্ষ থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা ও পরিবেশ মেলার আয়োজন করা হয়। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা, অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’।

অধ্যাপক ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, আমরা এখন চাষাবাদে হাইব্রিড জাতগুলো পছন্দ করছি। আর এগুলো চাষ করতে গিয়ে আমরা অতিমাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার করছি। এর ফলে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। আমি পাঁচ বছর খুব ভালো ফসল পেলাম। এরপর যখন মাটিগুলো নষ্ট হয়ে গেলো, তখন ওই মাটিটা আমাদের আবার পুনরুদ্ধার করতে আরও ১০ বছর সময় লাগবে। তাহলে আমাদের কৃষির প্র্যাকটিসটাই ঠিক নেই। যদি কৃষি সাসটেইনেবল না হয় তাহলে দেখা যাবে একসময় আমরা মুখ থুবড়ে পড়বো। যেখান থেকে উঠে আসা আমাদের জন্য খুবই কঠিন হবে।

Advertisement

তিনি বলেন, তথ্যমতে দেখা গেছে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশের ২৯ শতাংশ জমি খরার কবলে পড়ছে। আমরা যদি এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ না নিই তাহলে এই পৃথিবী ধীরে ধীরে আমাদের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। আমাদের দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল অনেকটাই খরার কবলে পড়ে। কারণ এ এলাকার মাটির পুষ্টি উপাদান, গুণাগুণ এবং উৎপাদন ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের যেসব এলাকা মরুকরণে পড়তে পারে বা মরুভূমি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সেসবের মধ্যে মধুপুর, বারি ট্রাক ও লালমাই ট্রাক। এই এলাকাগুলো খরাপ্রবণ এলাকা। ব্যাপকহারে বন-জঙ্গল ধ্বংস করার কারণেই মরুকরণ হতে পারে, শিল্পায়ন এবং ফসল উৎপাদনে অপরিকল্পিত এবং অনিয়ন্ত্রিত কেমিকেল ব্যবহার, এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে।

অধ্যাপক ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, আমাদের কর্মকাণ্ড আস্তে আস্তে দেশকে মরুভূমির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে একমাত্র প্রধান কারণ হচ্ছে প্লাস্টিক দূষণ। এটি হচ্ছে সিঙ্গেল টাইম প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে। এটির ব্যবহার যদি ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা না যায় তাহলে আমাদের উৎপাদনযোগ্য জমি হারিয়ে যাবে। একসময় আমাদের ফসল উৎপাদন হবে না। পানির পরিমাণ কমে যাবে। পুরো দেশটা মরুভূমিতে রূপ নেবে।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি নূরে আলম মিনা, নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবদুল মালেক। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তর গবেষণাগার চট্টগ্রামের পরিচালক নাসিম ফারহানা শিরীন। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা।

এএজেড/ইএ

Advertisement